পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অনুসরণীয় হতে পারে অর্ধযুগ আগের সোনামুখ সততা শপিং
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আনদুলিয়া গ্রামের শাহ জামাল কিন্ডারগার্টেনে এখন থেকে অর্ধযুগ আগে গড়ে তোলা হয়েছিল ‘সোনামুখ সততা শপিং’। রাজধানীর নিউমার্কেট থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ইসলাম এর স্বপ্নদ্রষ্টা। সঙ্গত কারণে, সোনামুখ সততা শপিং’ বন্ধ হবার পর ড. এ সকে বাকারের প্রতিষ্ঠিত কিন্ডারগার্টেনেও একই আদলে গড়ে তুলেছিলেন সততা স্টোর। সৎ মানুষ গড়তে ডুমুরিয়ার অর্ধযুগ আগের ওই ‘সোনামুখ সততা শপিং’ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
খুলনা অঞ্চলের প্রতিটি উপজেলায় প্রথমে দু’টি (বালক+বালিকা) স্কুলে দোকানদারবিহীন ‘সততা স্টোর’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে খুলনায়। এতে ছোট বেলা থেকেই শিশুরা নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা পাবে বলে অভিমত অপরাধ বিশেষজ্ঞদের।
সূত্রমতে, শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ; তাই আগামীর বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে শিশুদের সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশের সব জেলার একটি উপজেলায় একটি বালিকা এবং একটি বালক বিদ্যালয়ে সততা স্টোর খোলার মধ্যদিয়ে এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন শুরু করেছে দুদক। দ্রæততম সময়ের মধ্যে খুলনা অঞ্চলের স্কুলেও গড়ে তোলা হবে সততা স্টোর। স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে পরামর্শক্রমে সততা স্টোরের প্রাথমিক পুঁজি সংগ্রহ ও বিনিয়োগ করবেন। ওই স্টোরে পণ্য হিসেবে থাকবে খাতা, কলম, পেনসিল, রাবার, স্কেল, জ্যামিতি বক্স, রং পেনসিল, চিপস, বিস্কুট ছাড়াও সততা সংঘের পরিচালনা কমিটির কাছে যে সব পণ্য ছাত্র-ছাত্রীদের আবশ্যক বলে প্রতীয়মান হবে সেগুলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ এবং সংশ্লিষ্ট মহানগর, জেলা, উপজেলার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি-সম্পাদক কর্তৃক গঠিত কমিটি এ স্টোর পরিচালনা করবে। আর পণ্যের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি হবে বাজার মূল্যের সমান। সততা স্টোর মনিটরিংয়ের জন্য উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা ও মহানগরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক কর্তৃক নির্ধারিত কোনো কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট মহানগর, জেলা, উপজেলা দুর্নীতি দমন কমিটির সভাপতি-সম্পাদক বা তার মনোনীত প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি থাকবে। এ কমিটি প্রতিমাসে অন্তত একবার বৈঠক করে হিসাব-নিকাশ যাচাই ও ক্রয়যোগ্য সামগ্রীর তালিকা প্রণয়নপূর্বক প্রয়োজনীয় অর্থ স্টোর পরিচালনা কমিটির কাছে প্রদান করবে।
বর্তমানে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোয়েন্দা কামরুল ইসলাম ২০১০ সালে খুলনা ডুমুরিয়ার আনদুলিয়া গ্রামের শাহ জামাল কিন্ডারগার্টেনে ‘সোনামুখ সততা শপিং’ নামে শিক্ষার্থীদের জন্য স্টোর গড়েছিলেন। তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। সততা চর্চার মধ্যদিয়ে শিশুরা আগামী দিনে সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। চিন্তাটা ২০১০ সালে এসেছিল। সে সময় ডুমুরিয়ার দু’টি কিন্ডারগার্টেনে এ ধরনের স্টোর চালু করেছিলাম। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিজেই কিনতে পারে, এতে শিশুরা উৎসাহিত হয়। ডুমুরিয়ার দুটির মধ্যে একটি অন্য কারণে বন্ধ হয়ে গেছে, একটি চলছে। এই ৬ বছরে কোনোদিন একটি পয়সার গরমিল হয়নি, একটি জিনিসও চুরি হয়নি ডুমুরিয়ার ওই কিন্ডারগার্টেনের সততা স্টোরে। ওই সময় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আনোয়ার ইকবালকে এই সততা শপিং সম্পর্কে জানিয়েছিলাম। তাকে বলেছিলাম-যদি দেশব্যাপী এই পদ্ধতির প্রবর্তন করা যেতো! আজ দুদকের এ পরিকল্পনা শুনে সত্যি খুব ভাল লাগছে। শিশুকাল থেকেই সততার শিক্ষা পেলে বড় হয়ে সৎ পথে চলতে বাধ্য।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) খুলনার উপ-পরিচালক টি এম জাকির হোসেন বলেন, বেশকিছুদিন পূর্বে দুদকের একবার সততা স্টোর সম্পর্কে বলেছিল। পরে আর পদক্ষেপ নেয়নি তারা। এখন তারা না নিলেও আমরা কয়েকটি স্কুলে মডেল হিসেবে নিয়ে সততা স্টোর গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। খুব শিগগরিই এটি বাস্তবায়ন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দুদক খুলনার সহকারী পরিচালক মো. মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সততার চর্চা ও দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করতে এ কর্মউদ্যোগ। এতে মাইন্ড ফ্রেস হয়ে উঠবে। খুলনাতে (দুদক) পরিচালক যোগদানের পরপরই তিনি এ বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল আহসান বলেন, উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। খুব শিগগরিই সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুল নির্ধারণ করে সততা স্টোর গড়ে তোলা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।