Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সুনামগঞ্জে ৬টি হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে ফসল

| প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আজিজুল ইসলাম চৌধুরী,/আব্দুল বছির সরদার/মোফাজ্জল হোসেন সুনামগঞ্জ থেকে : গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জের ৬টি হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ও জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে ফসল। গতকাল শুক্রবার সকালে জেলার দিরাই উপজেলার তোফানখালির বাঁধ ভেঙ্গে বরাম হাওর, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনারতাল, ডুবাইল,ফাসোয়া, ঘুরমা ও মেঘনার হাওর গেছে। অবস্থায় দু:চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। জেলার অন্যান্য হাওরগুলোও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। ফলে এসব হাওর পাড়ের কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
কৃষকরা জানান, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ এখন পর্যন্ত ৪০ ভাগও হয়নি। যেটুকু কাজ হয়েছে সেগুলোও প্রজেক্ট ইপ্লিমেন্টেশন কমিটি (পিআইসি) ও পাউবো’র নিযুক্ত ঠিকাদাররা অসময়ে শুরু করায় বাঁধের মাটি ঠিকমতো বসেনি। ফলে বৃষ্টির পানিতে বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, এবার হাওরের ফলস রক্ষা বাঁধের কাজে বরাদ্দ এসেছে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৬ কোটি টাকার কাজ ঠিকাদারা ও ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা পিআইস’র মাধ্যমে কাজ করছেন।
সূত্র আরো জানায়, প্রতি বছর ১৫ ডিসেম্বর হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রæয়ারির মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও পাউবো নিযুক্ত ঠিকাদার ও পিআইস কমিটিগুলো সে নির্দেশনা না মেনে বাঁধের কাজ শুরু করে মার্চের মাঝামাঝিতে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, গত ৩ দিন দিনে গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৮ মিলিমিটার।
দিরাই উপজেলার বরাম হাওর পাড়ের কৃষক আবুল হোসেন জানান, এক সপ্তাহ আগে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম তুফানখালি বাঁধ পরিদর্শন করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে এ বাঁধকে বাঁশ ও ছাঁটাই দিয়ে ভালভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। কিন্তু পাউবো ও পিআইসি কমিটি জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মানেনি। ফলে আজ এ বাঁধটি ভেঙ্গে গেছে।
ধর্মপাশা উপজেলার সোনামড়ল, ধানকুনিয়া, ধারাম, কাঞ্জিয়া, টগার, শাসকা, চাউলিয়ার হাওরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড় এ উপজেলার সব ক’টি হাওরের বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
চন্দ্রসোনারতাল হাওর পাড়ের কৃষক আলী আহমদ, রইছ উদ্দিন, ফাসোয়ার হাওর পাড়ের রতন মিয়া, আব্দুর রহিম, ঘুরমার হাওর পাড়ের কৃষক নূরুজ্জামান ও বিদ্যা মিয়া জানান, তারা ফসল হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে পাউবো ও তাদের নিযুক্ত ঠিকাদারদের গাফিলতি রয়েছে। ফলে জেলার সব ক’টি হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধ নরবড়ে রয়েছে। যেকোন সময় এ সকল বাঁধ ভেঙ্গে হাওরের ফসল তলিয়ে যাবে। তিনি বাঁধের কাজে জড়িত পাউবো ও তাদের নিযুক্ত ঠিকাদারদের গাফলাতির ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের মাহবুব জানান, সদর উপজেলার করচার হাওরের প্রায় ৩ ভাগ উঠতি বোরো ফল জলাবদ্ধতায় তলিয়ে গেছে।
ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি অফিসার শোয়েব আহমদ জানান, বাঁধ ভেঙ্গে এ উপজেলা চন্দ্রসোনার হাওরের ৩ শত হেক্টর, ঘুমরার হাওরের ৬ শত হেক্টর, ডুবাই হাওরের ২ শত হেক্টর ও ফাসোয়ার হাওরের ২৫০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। উপজেলার অন্যান্য হাওরও বিপদসীমার মধ্যে রয়েছে। তিনি আরো জানান, উপজেলার উলাসখালি, নূরপুর ও মঈনপুর ঢালা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পনি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন জানান, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সামগ্রিকভাবে ৭০ ভাগ হয়েছে। তিনি আরো জানান, জেলার নদ-নদীগুলো পানির চাপ বাড়ছে। এপর্যন্ত নদীতে যে টুকু পানি বৃদ্ধি পেয়েছে সেটাকে হাওর এলাকার জন্য ডেঞ্জার লেভেল ধরা যায়।
সুনামগঞ্জ কৃষি স¤প্রসার অধিদপ্তর সূত্রে জানা য়ায়, এবার জেলা ১১টি উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭০ হেক্টর। কিন্তু চাষাবাদ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমি। যার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ তরা হয়েছে ৮ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন। তবে গতকাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি হাওরে অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ