ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মো. তোফাজ্জল বিন আমীন : অন্ধকার পথের অজানা গন্তব্যে চলেছে আমাদের তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ। ধনাঢ্য পরিবারের কিশোর-তরুণরা পাড়ামহল্লায় বিশেষ গ্যাং পার্টি গড়ে তুলে সন্ত্রাস ও সংঘর্ষের মতো নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি মাদকের মরণ নেশায় আসক্ত হয়ে কখনো কখনো নিজ বাবা-মাকে খুন করছে। একটি সমাজ বা এই চেহারাই বলে দেয় পরিস্থিতি কতটা নাজুক। আগামীদিনের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যখন বিপথগামিতার মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে যায় তখন তা সার্বিকভাবে আশঙ্কাজনক এক বাস্তবতাকেই নির্দেশ করে। দিন দিন এ প্রবণতা বেড়েই চলেছে, যা নিঃসন্দেহে আগামীদিনের কান্ডারিদেরকে এক অজানা অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। একটি সমাজ বা দেশের জন্য এ পরিস্থিতি কিছুতেই স্বস্তিকর হতে পারে না।
নিকট অতীতে রাজধানীর উত্তরা, তেজগাঁও এবং মিরপুরে এ ধরনের গ্যাং পার্টির মধ্যকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিনজন খুন হয়েছে। রাজধানীর উত্তরায় স্কুলছাত্র আদনান খুনের পর এবার কিশোরগঞ্জে নিজ গ্রুপের সদস্যদের নির্মমতার শিকার হয়েছে স্কুল ছাত্র রাকিবুল হাসান রিয়াদ। সে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কিশোর গ্রুপটির পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। এই গ্যাং পার্টিকে সামাজিক অবক্ষয় ব্যতীত আর কি নামে অভিহিত করা যায় তা আমাদের জানা নেই। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একই এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন গ্যাং সদস্যরা মাদক সেবন, মাদকের ব্যবসা, ছিনতাই ও বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালালেও তাদের রোখার কেউ যেন নেই। যে কারণে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গ্রামগঞ্জের কথা না হয় বাদই দিলাম রাজধানী শহরেও এই গ্যাং পার্টি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভয়ঙ্কর কালো ছাপ ফেলেছে। অপরাধবিশেষজ্ঞরা এ পরিস্থিতিকে তারুণ্যের ক্যান্সার বলে অভিহিত করেছেন। শুধু গ্যাং পার্টি নয়, কয়েক বছর ধরে পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়জনিত একের পর এক বীভৎস ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হত্যা, ধর্ষণ, ইভটিজিং ও আত্মহননের খবর প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। এসব ঘটনার মধ্যদিয়ে মূল্যবোধের বিপর্যয় এবং নৈতিক অধঃপতনের ভয়ানক চিত্র ফুটে উঠেছে।
সামাজিক এই অবক্ষয়ের ফলে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকরা পড়েছেন মহাসংকটে। চারদিকে অন্যায়, অনিয়ম, হয়রানি, বঞ্চনা আর শোষণের শিকার সাধারণ মানুষ। ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়সহ বহুমাত্রিক জটিল সম্পর্ক ও চাপে পিষ্ট হয়ে মানুষ বেপরোয়া হয়ে নিমর্মতার পথ বেছে নিচ্ছে। নগর থেকে শুরু করে নিবিড় পাড়াগাঁয়েও ছড়িয়ে পড়ছে মাদকের ছোবল। প্রযুক্তির হাত ধরে নিমিষে পাল্টে যাচ্ছে সমাজ। সমাজ থেকে দ্রুত উধাও হয়ে যাচ্ছে নীতি-আদর্শ এবং লালিত মূল্যবোধ। উচ্চশিক্ষার ব্যাপক বিস্তার হলেও প্রকৃত ভালো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উত্তরায় তরুণ কিশোরদের ডিসকো বয়েজ, বিগবস গ্যাং স্টার গ্রুপের দ্ব›েদ্ব ১৪ বছরের স্কুল ছাত্র আদনান কবির খুন হওয়ার ঘটনায় প্রমাণ করে দেশের পরিস্থিতি অজানা গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছে।
গ্যাং পার্টি অনেক সদস্যই শিক্ষার্থী। কোনো কোনো দলে নারী সদস্যও রয়েছে। গ্যাং পার্টির বিস্তার হচ্ছে মূলত সহপাঠী ও বন্ধুর মাধ্যমে। আবার অনেকে ইন্টারনেটে বিদেশি গ্যাং পার্টির সদস্যদের সম্পর্কে খোঁজ করে। কোনো কোনো গ্যাং পার্টি ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও নিজেদের মধ্যে সখ্যা গড়ে তোলে। গ্যাং পার্টির কবল থেকে আমাদের আগামীদিনের তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করার প্রয়াসে এখনই সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একজন কিশোর বা তরুণ তার অভিভাবক ও শিক্ষকদের তত্ত¡াবধানে নিজের জীবন আলোকিত করে গড়ে তুলবে। মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করবে। অথচ আমরা লক্ষ্য করছি যে আমাদের তরুণ-তরুণীরা বিপরীত স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে ভয়ঙ্কর দানব হিসেবে বেড়ে উঠেছে। কিশোর, তরুণ-তরুণীরা কেন বিপথে জড়িয়ে পড়ছে সে কারণগুলো সবার আগে খুঁজে বের করতে হবে।
ভিন দেশীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে দেশীয় সংস্কৃতি বিলীন হওয়ার কারণে আমাদের সমাজে গ্যাং পার্টির উদ্ভব হয়েছে। এটা সত্য যে, তথ্যপ্রযুক্তির ভালো দিকের পাশাপাশি নানা নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এক্ষেত্রে সন্তানকে সুন্দর সঠিক পথের দিশা দেয়ার দায়িত্ব প্রথমত অভিভাবকদের। সন্তান মানুষ করার পেছনে অভিভাবকের অবদান সবচেয়ে বেশি। কেননা কোনো সন্তান জন্মের পর পরই গ্যাং পার্টির সদস্য হয়ে যায় না। সর্বোপরি বলতে চাই, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে গ্যাং পার্টির হাত থেকে রক্ষা করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র এ দায় অস্বীকার করতে পারে না। শুধুমাত্র আইন করে গ্যাং পার্টির উৎপাত বন্ধ করা সম্ভব নয়। সে জন্য প্রয়োজন সবার জন্য নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। কিশোর ও তরুণদের এই অধঃপতন রোধে ব্যক্তি সমাজ ও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।