Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জঙ্গি মুসার মায়ের ডিএনএ সংগ্রহ, ‘মর্জিনাকে সনাক্ত করতে পারেনি পরিবার

সিলেট শাহী ঈদগাহে ‘বোমা সদৃশ বস্তু’

| প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

’আতিয়া মহলে’ দুই জঙ্গির লাশ
মামুনুর রশীদ মামুন, সিলেট থেকে : সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানা ঘিরে অভিযানের রেশ না কাটতেই শাহী ঈদগাহ এলাকায় ‘বোমা সদৃশ ব¯ুÍ’ পাওয়ার খবরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়রা একটি দোকানের সামনে কালো টেপে মোড়ানো বস্তুটি দেখে পুলিশে খবর দেন। দুপুরে সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে সেটি বোমা কি-না তা নিশ্চিত করা যায়নি।
সকাল থেকে ঘটনাস্থলের চারপাশ ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আশপাশের দোকানপাট ও যান চলাচল। স্থানীয়দের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে করা হচ্ছে মাইকিং।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে দোকান খোলার সময় দোকানের সামনে কালোরঙের বোমা সদৃশ বস্তুটি দেখতে পান দোকান মলিক এনামুল হক। তিনি জানান, জিনিসটি আমার কাছে বোমা মনে হওয়ায় পুলিশকে খবর দেই।
বিকাল ৪টার দিকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা বোমা সদৃশ এই বস্তুটিকে উদ্ধার করে রাস্তার মাঝখানে এনে রাখেন। ফলস ককটেল নিশ্চিত হয়ে বৃষ্টির মধ্যে তারা এটির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) ফয়সল মাহমুদ জানানÑ বস্তুটি ছিল ফলস ককটেল। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য এটি কোনো দুর্বৃত্ত এই এলাকায় রেখে গেছে। তবে এটি বড় ধরনের কোনো বিস্ফোরক নয়।
জঙ্গি মুসার মায়ের ডিএনএ সংগ্রহ
দক্ষিণ সুরমার ’আতিয়া মহলে’ নিহত জঙ্গি মাঈনুল ইসলাম মুসা কিনা তা জানতে তার মা সুফিয়া বেগমের ডিএনএ’র নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে তার ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়।
সিলেট মহানগরীর কোতোয়ালী থানার ওসি সোহেল আহমদ বলেন, আতিয়া মহলে শীর্ষ জঙ্গি মুসা নিহত হয়েছেন কিনা, তা শনাক্ত করতেই মুসার মায়ের ডিএনএ’র নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
গতকার বৃহস্পতিবার দুপুরে মেয়ে কামরুন নাহারকে সাথে নিয়ে সিলেট পৌঁছান সুফিয়া বেগম। রাজশাহীর বাগমারা থেকে গতকাল তাদের ঢাকায় আনা হয়।
সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত চার জঙ্গির মধ্যে নব্য জেএমবির র্শীষ নেতা মাঈনুল ইসলাম মুসা থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।
‘মর্জিনাকে সনাক্ত করতে পারেনি পরিবার
সিলেটের জঙ্গি অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ এ নিহত নারী জঙ্গির সঠিক পরিচয় বান্দরবন থেকে আসা পরিবারের সদস্যরা সনাক্ত করতে পারেননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সীতাকুÐে নিহত জঙ্গি জুবাইরা ইয়াসমিন এর বোন মনজিয়ারা পারভিনই সিলেটে নিহত পুলিশের ধারণাকৃত জঙ্গি সদস্য মর্জিনা কী না তা নিশ্চিত করতে বাবা নুরুল ইসলাম ও বড় ভাই জিয়াবুল হক বুধবার সকালে সিলেট আসেন।
তাদেরকে নিহত নারী জঙ্গির মৃতদেহের ছবি ও বাসা ভাড়া নেয়ার সময় দেয়া পরিচয়পত্রের ছবি দেখানো হয়। তবে তাদেরকে মর্গে মৃতদেহ দেখানো হয়নি।
ছবি দেখে নিহত নারী জঙ্গিকে মনজিয়ারা হিসেবে সনাক্ত করতে পারেনি মনজিয়ারার পরিবার বলে নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রোকনউদ্দিন।
তিনি জানান, নুরুল ইসলাম ও জিয়াবুল হকের ডিএনএ স্যাম্পল রাখা হয়েছে। ডিএনএ ক্রস ম্যাচ করে পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।
অপারেশন পরিচালনাকারী সেনাবাহিনী গত সোমবার এক নারী ও এক পুরুষ জঙ্গির লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তখন পুলিশের পক্ষে থেকে বলা হয়, ওই নারী জঙ্গিই মর্জিনা হতে পারেন। মঙ্গলবার ওই দুই জঙ্গির লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় এবং তাদের ডিএনএ, ভিসেরা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল-মুসা জানান, ওই দুই জঙ্গির লাশ থেকে সংগৃহীত ডিএনএ, ভিসেরা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট ঢাকায় পরীক্ষা করা হচ্ছে, এতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। এর সাথে মনজিয়ারার পরিবারের সদস্যদের সংগৃহীত ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে দেখা হবে।
উদ্বার হয়নি দুই জঙ্গির লাশ
’আতিয়া’ মহলে রয়ে যাওয়া অপর দুই জঙ্গির লাশ এখনো ভবনের মধ্যেই রয়েছে।
২৮ মার্চ বিকেলে অভিযান সমাপ্ত হওয়ার পর পুলিশের কাছে আতিয়া মহলের দায়িত্ব দেয় সেনাবাহিনী। এরপর ঢাকায় বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেয়া হয়। বুধবার এ ইউনিটের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার বাসুদেব বণিক জানান, পুলিশের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী, তবে ভিতরে প্রচুর বোমা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তাই পুলিশের বোম ডিসপোস্যাল ইউনিট আগে সবগুলো বিস্ফোরক নিষ্কিয় করবে, তারপর পুলিশের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে।।
গুলি থামলেও কাটেনি আতঙ্ক
গত ছয়দিন ধরে গ্যাসসংযোগ নেই, বিদ্যুৎও সবসময় থাকে না। অনেক সড়ক দিয়ে যান চলাচলও নিষিদ্ধ রয়েছে। হেঁটে চলাতে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আশপাশের অনেকটা এলাকাজুড়ে দোকানপাট বন্ধ। গত পাঁচদিন ধরে এই হচ্ছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বৃহত্তর শিববাড়ি-পাঠানপাড়া এলাকার অবস্থা।
পাঠানপাড়া, পৈত্যপাড়া, খানবাড়ি, জৈনপুর, আচার্যপাড়া, কৃষাণপুর, ফকিরপাড়া, গালিমপুর, চান্দাই, নুরপুর, শিববাড়িÑ এই কয়েকটি পাড়া নিয়ে বৃহত্তর শিববাড়ি-পাঠানপাড়া এলাকা গত শুক্রবার থেকে দেশজুড়ে ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
মঙ্গলবার সেনাবাহিনী ‹অপরাশেন টোয়াইলাইট› নামের জঙ্গিবিরোধী এ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে। ফলে বুধবার আতিয়া মহল এলাকা থেকে ভেসে আসেনি কোনো গুলি-বোমার বিকট শব্দ। বিস্ফোরণ থামলেও এখন আতঙ্ক কাটেনি এলাকবাসীর। ফিরেনি প্রাণচাঞ্চল্য। জনজীবনে বিরাজ করছে স্থবিরতা ।
জঙ্গিবিরোধী এই অভিযানের ফলে গত ছয়দিন ধরে এ এলাকার মানুষের জীবন থমকে আছে। সবচেয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায়। অনেকের ঘরে আবার খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বন্ধ রয়েছে এই এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও। আতিয়া মহলের পাশের জহির-তাহির মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়, গোটাটিকর হাফিজিয়া মাদরাসা, জৈনপুরের মহাল²ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জালালাবাদ গ্যাসের দক্ষিণ অঞ্চলের ব্যবস্থাপক রুস্তম আলী চৌধুরী বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই এলাকার বাসাবাড়ির গ্যাসের সংযোগ বন্ধ রয়েছে। নির্দেশ পেলে সংযোগ চালু করা হবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার রোকন উদ্দিন বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থেই সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।



 

Show all comments
  • আবুল কালাম আজাদ ১ এপ্রিল, ২০১৭, ১:০৮ এএম says : 0
    আতিয়া মহল থেকে বাকি দুটি লাশ বের করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ