Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডিএনএ পরীক্ষা বিঘ্নিত মামলা জটের আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১৫ মার্চ থেকে ল্যাব বন্ধ
হাসান সোহেল : বেতন-ভাতা এবং চাকরি রাজস্বকরণের দাবিতে ডিএনএ ল্যাবের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছেন ধর্ষণ, হত্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলার রোগী ও তাদের স্বজনরা। অনেক মামলার আলামত পরীক্ষা করাতে এসে না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন সংশ্লিষ্টরা। ফিরে যাচ্ছেন তারা। এতে বিচার কার্যক্রমসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে চরম জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সূত্র মতে, ২০০৬ সাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থাপিত ন্যাশনাল ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে কাজ করছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ পর্যন্ত তিন ধাপে এই প্রকল্পে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাউকেই রাজস্ব খাতে নেয়া হচ্ছে না। আর তাই চাকরির অনিশ্চয়তায় আছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। তাই বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন বলে ইনকিলাবকে বলেছেন আশীষ মজুমদার নামে এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বেতন-ভাতা না পাওয়া এবং চাকরি রাজস্ব খাতে না যাওয়ায় তার মতো ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আজ মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের আজ পথে বসার উপক্রম হয়েছে। উপায় না পেয়ে তারা গত ১৫ মার্চ থেকে কর্মবিরতিতে আছেন। সারা দেশের ৮টি ডিএনএ ল্যাবরেটরির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মবিরতি পালন করে আসছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডিএনএ ল্যাবরেটরির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশীষ কুমার মজুমদার বলেন, প্রায় একযুগ থেকে তাদের চাকরি রাজস্ব খাতে হচ্ছে-হবে বলে কেবল আশ্বাসই দিয়ে আসছেন কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিনেও চাকরি রাজস্বকরণ না হলেও জানুয়ারি থেকে বেতন-ভাতাই বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আংশিক বেতন-ভাতা পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা আশীষ কুমার মজুমদার ও তার মতো একই বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়া সহকর্মীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। জানা গেছে, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ‘মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যান’ প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ছয়জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ছয়জন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, একজন কম্পিউটার অপারেটর, একজন অফিস সহকারী ও একজন পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ মোট ১৫ জন কর্মরত। এছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে ল্যাবরেটরিতে ছয়জন করে স্টাফ রয়েছেন। ডিএনএ ল্যাবরেটরির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, গত ৩০ জুন তৃতীয় মেয়াদে প্রকল্পের সময়সীমা শেষ হয়। এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও জরুরি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২৯ জুন প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ডানিডা হতে আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চিঠিতে ১ জুলাই থেকে তৃতীয় পর্বে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান কার্যক্রম অব্যাহ রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কর্মকতা-কর্মচারীরা কাজ চালিয়ে যান। তারা জানান, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বেতন দেয়া হলেও শতকরা ২৫ ভাগ বেতন কেটে রাখা হয়। এতে তারা হতাশ হলেও ভবিষ্যতে ডিএনএ অধিদপ্তরে আত্মীকরণ হবে এ আশায় কম বেতনেই কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় মাসের বেতন তাদের এখনো দেয়া হয়নি। তারা প্রকল্প পরিচালক ও ল্যাব প্রধানের কাছে বার বার ধরনা দিলেও তাদের কিছুই করার নেই বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে ডিএনএ অধিদপ্তর বিল পাস হয়েছে। ৯২টি পদে জনবল নিয়োগেরও অনুমোদন পাওয়া গেছে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে তাদেরকে সেখানে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হবে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ আট থেকে দশ বছর চাকরি করেও এখন কেন তাদের নতুন করে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নিতে হবে। তাছাড়া প্রকল্প পরিচালক ও ল্যাব প্রধান দায়িত্ব না নিলে তারা কেন কাজ করবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ডিএনএ ল্যাবের কর্মকর্তারা জানান, প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি এবং ঢাকার বাইরে বিভাগীয় পর্যায়ে ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরিতে (কালেকশন সেন্টার) ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। ২০০৬ সাল থেকে এ প্রকল্পে কাজ করলেও তারা চাকরি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালের জুন মাসে শেষ হলেও এখনও শুরু হয়নি চতুর্থ পর্যায়ের প্রকল্প। তাছাড়া তৃতীয় প্রকল্প শেষে জনবল সরাসরি রাজস্ব খাতে যাওয়ার আশ্বাসও কার্যকর হচ্ছে না। সূত্র আরও জানায়, গত আগস্ট মাসে তারা আন্দোলেনর প্রস্তুতি নিলেও ডিএনএ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় মন্ত্রীর নানা আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে তারা আন্দোলন থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা গত ১৫ই মার্চ থেকে কর্মবিরতিতে রয়েছেন। এর আগে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে তিন দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেন পরীক্ষাগারে কর্মরত কর্মীরা। তাদের দাবি ছিল, জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তর, পদোন্নতির নীতিমালা প্রণয়ন ও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা বাবদ ফি’র কিছু অংশ কর্মীদের প্রদান (ইউজার ফি)। তখন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে কর্মীরা কর্মবিরতি স্থগিত করেন। ডিএনএ ল্যাবের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশীষ কুমার মজুমদার জানান, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বেতন দেয়া হলেও শতকরা ২৫ ভাগ বেতন কেটে রাখা হয়। এতে তারা হতাশ হলেও ভবিষ্যতে ডিএনএ অধিদপ্তরে আত্তীকরণ হবে এ আশায় কম বেতনেই কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় মাসের বেতন তাদের এখনও দেয়া হয়নি। প্রকল্প পরিচালক ও ল্যাব প্রধানের কাছে বারবার ধরণা দিলে তারা সাফ জানিয়ে দেন, তাদের কিছুই করার নেই। কাজ করলে করো, না হলে বাড়ি চলে যাও। এই বৈজ্ঞানিক জানান, ডিএনএ অধিদপ্তর করার আগে সেল করার কথা ছিল। কিন্তু সেল না করে অধিদপ্তর করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টি সেক্টরাল কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগা করলে তিনি বলেন, ল্যাবটি একটি প্রকল্পের অধীন। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়। এরপর ওই বছরের জুলাই মাসে আবার ৫ বছরের জন্য তা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের ডিজাইন করতে একটু দেরি হয়েছে। যেহেতু প্রকল্পটিতে ডেনমার্ক আর্থিক সহায়তা করে, ফলে তাদের প্রতিশ্রæতি দিতে একটু দেরি হয়েছে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সহায়তা দিয়েছে। একটি প্রকল্পের অফিস আগে রাজস্বতে যাবে, তারপর জনবল। এই প্রকল্প রাজস্বতে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ‘কাজ করলে করো, নাহলে বাড়ি চলে যাও’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ড. আবুল হোসেন বলেন, কাউকে তিনি এমন কথা বলেননি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ