Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সম্মেলনে আসছে না পাকিস্তান

| প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কে সাধারণ চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত
পঞ্চায়েত হাবিব : ঢাকায় ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে পাকিস্তান। আগামী ১ থেকে ৫ এপ্রিল বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংসদীয় ফোরামের এই সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এদিকে আইপিইউ সম্মেলন সুষ্ঠু, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কের পশ্চিম প্রান্ত (আড়ং ক্রসিং) থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কের পূর্ব প্রান্ত (খেজুর বাজার ক্রসিং) পর্যন্ত সড়কসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও কয়েকটি সড়কে ডাইভারশন দিয়ে বিকল্প সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার ও প্রধান মোসলেহ উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাফিক বিভাগের প্রধান বলেন, আইপিইউ সম্মেলনে আগত অতিথিরা রাজধানীর ১৫টি হোটেলে থাকবেন।
অতিথিদের বিমানবন্দর থেকে হোটেল এবং হোটেল থেকে ভেন্যু পর্যন্ত পৌঁছে দিতে ট্রাফিক বিভাগ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অতিথিদের নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি সড়কে ডাইভারশন দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বন্ধ থাকবে। ১ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠান থাকার প্রেক্ষিতে মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কের পশ্চিম প্রান্ত (আড়ং ক্রসিং) থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কের পূর্ব প্রান্ত (খেজুর বাজার ক্রসিং) পর্যন্ত সড়ক বন্ধ থাকবে। এই সড়ক ব্যবহারকারী যাত্রীদের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গ্যাপ হয়ে র‌্যাব-২ কার্যালয়ের সামনে দিয়ে আগারগাঁওয়ের বিকল্প সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে। সম্মেলনের দ্বিতীয় ভেন্যু বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি)। সম্মেলনের পাঁচ দিনই সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিআইসিসি ক্রসিং থেকে গণভবন স্কুল দিয়ে প্রতিরক্ষা গ্যাপ পর্যন্ত যানচলাচল বন্ধ থাকবে। তবে এলাকায় আবাসিক বাসিন্দা ও সরকারি-বেসরকারি দফতরে আগত গাড়িগুলো এই সড়কে প্রবেশ করতে পারবে। সম্মেলন চলাকালে জাহাঙ্গীর গেট থেকে আগত গাড়িসমূহ আগারগাঁও লিঙ্করোড ব্যবহার করে বিআইসিসি ক্রসিংয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। এ সড়কে ব্যবহারকারীদেরকে আগারগাঁও লাইট ক্রসিং ব্যবহারের অনুরোধ করেছে ডিএমপি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক কূটনৈতিক বার্তায় ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাই কমিশনকে আইপিইউ সম্মেলনে প্রতিনিধি না পাঠানোর বিষয়টি জানায়। তবে সেখানে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। বিষয়টি যেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়, বার্তায় হাই কমিশনকে সেই অনুরোধ জানিয়েছে পাকিস্তান। বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্টের ৯০ জন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার এবং ১৩২টি দেশের সাড়ে ছয়শ’ এমপি’র আসন্ন আইপিইউ সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এবারের সম্মেলনের আয়োজক। সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বর্তমানে আইপিইউ’র প্রেসিডেন্ট। পাকিস্তানের নোট ভার্বালে বলা হয়, ঢাকায় অনুষ্ঠেয় আইপিইউ সম্মেলনের ১৩৬তম অধিবেশনে পাকিস্তানের স্পিকার এবং প্রতিনিধিরা অংশ নিতে পারছেন না। ভারতের উরির ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে গত বছর নভেম্বরে ইসলামাবাদ সার্ক সম্মেলন বর্জন করে বাংলাদেশসহ চার দেশ। ওই পরিস্থিতিতে সম্মেলন স্থগিত করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তান যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটাই ছিল ইসলামাবাদ সার্ক সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের সরে আসার প্রধান কারণ। জাতীয় সংসদের উপ-সচিব আলী আশরাফ ইনকিলাবকে বলেন, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন মেইলে পাকিস্তান চিঠি দিয়েছে। কি কারণে আসবে না তা বলে নাই।
ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আজ পর্যন্ত ৪৮টি দেশের ৪৫ জন স্পিকার ও ৩০টি দেশের ৫০ জন ডেপুটি স্পিকার নিবন্ধন করেছেন। এছাড়া ১২০টি দেশের ১৫০০জন এমপি ও সরকারি কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন। এবারের সম্মেলনে প্রায় ২০০ জন নারী এমপি অংশ নেবেন এবং পুরুষ এমপিদের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে যাবে। এ সম্মেলন বাংলাদেশকে নতুন এক ঠিকানায় নিয়ে যাবে। এই সম্মেলনে বিশ্ব স¤প্রদায়ের কাছে একটি ইতিবাচক বাংলাদেশের পরিচিত হওয়ার সুযোগ থাকবে। পৃথিবীর নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকদের সেতুবন্ধন রচনা হবে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, পার্লামেন্টারি ডিপ্লোমেসি বা সংসদীয় কূটনীতি বলে একটা কথা আছে। দক্ষিণ আমেরিকায় কেবল ব্রাজিল আর মেক্সিকোতে আমাদের কূটনৈতিক মিশন আছে। আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। আমরা কিন্তু সংসদীয় কূটনীতির মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি। এই সংসদীয় কূটনীতির বড় একটা সুযোগ করে দিচ্ছে এই সম্মেলন। আশা করি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এই সুযোগ পুরোমাত্রায় নেবে।
প্রথমবারের মতো ঢাকায় বসছে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) এর ১৩৬তম সম্মেলন। এই সম্মেলনে আইপিইউভুক্ত ১৭১টি দেশের মধ্যে ১৩৫টি দেশের সরকারী ও বিরোধী দলের এমপিরা অংশ গ্রহণ করার কথা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে ২ শতাধিক সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক আসবেন। রাজধানীর আগারগাঁও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে টানা ৬ দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়ে প্রস্তুতি প্রায় শেষ। বিদেশী এমপিদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সেশন নিয়ে জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে ২৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে রাজধানীর ১৫টি পাঁচ তারকা মানের হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং আইপিইউ যৌথ আয়োজক কর্তৃপক্ষ। সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত সবচেয়ে বড় সংস্থা আইপিইউ। সংস্থাটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে এ সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে। আগামী ১ এপ্রিল জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ