পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সরকারের অভ্যন্তরে ঝড় বইছে। তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন-তা আদৌ সঠিক কী না, এ সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিম্বা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কিছু জানে না। অথচ মমতা একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, আগামী ২৫ মে তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে বাংলাদেশের সাথে চুক্তি সই করবে ভারত।
তবে মমতা ব্যানার্জির এমন বক্তব্য নিয়ে দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকে কেন্দ্র করে পানি ঘোলা করতেই তিনি (মমতা ব্যানার্জি) এমন বক্তব্য রেখেছেন। যাতে করে বাংলাদেশের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি সইয়ের দাবিটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এড়িয়ে যায়।
আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করবেন। এই সফরে ৮ এপ্রিল দিল্লীতে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। এই বৈঠকে তিস্তা চুক্তি সইয়ের প্রসঙ্গটি বাংলাদেশ আলোচনায় আনবে বলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপে রাখতে মমতা ব্যানার্জি এমন কৌশল নিতে পারেন বলে পানি বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘আমি শুনেছি তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে আগামী ২৫মে ভারতের সাথে চুক্তি হচ্ছে। একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মমতা ব্যানার্জি আরও বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে তার সাথে কোন আলোচনা করা হয়নি। তবে তিনি শুনেছেন।
মমতা ব্যানার্জির মতে, ‘হয়তো বাংলাদেশের সাথে সব আলাপ আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ আমি কিছুই জানি না এখনও পর্যন্ত। কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি কড়া ভাষায় দিল্লীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যদি সব কিছু রেডি করে আমাকে বলো স্ট্যাম্প মারার জন্য, তাহলে আমি বলব সরি! আমাকে রাজ্যের স্বার্থ দেখতে হবে।’
তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে মমতা ব্যানার্জির এমন বক্তব্যের পর তা নিয়ে ভারতের লোকসভায় আলোচনার ঝড় তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত ২৭ মার্চ তৃণমূল সংসদ সদস্য সৌগত রায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কিছুই না জানিয়ে যদি তিস্তা চুক্তির শর্তাবলী চূড়ান্ত হয়ে থাকে, তাহলে কোনোভাবেই তাতে সিলমোহর দেবেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লোকসভার স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশকে পানি দেওয়া যে রাজ্য সরকার মানবে না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সম্প্রতি পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে বহুল আলোচিত তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি হচ্ছে না। তবে ভারত এই চুক্তির ব্যাপারে আন্তরিক। এবার না হলেও পরবর্তী সময়ে এই চুক্তি সম্পাদিত হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতের আগের দুই প্রধানমন্ত্রী যেমন আন্তরিক ছিলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও তেমন আন্তরিক। তবে তাদের কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে। আমরা আশা করতে পারি, সেসব সমস্যার সমাধানের পর চুক্তিটি করতে পারবো।
আর মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল (মঙ্গলবার) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ ইনকিলাবকে বলেছেন, আগামী ২৫ মে তিস্তা চুক্তি সই হচ্ছে কী না-তা আমাদের জানা নেই। কখন এই চুক্তি সই হবে-তাও আমরা বলতে পারছি না। তবে এটা ঠিক তিস্তা চুক্তি হবে এবং আমরা উভয় দেশ এ চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করছি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত যেসব সমস্যা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে, তার একটি তিস্তার পানিবণ্টন। ভারত এই নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করায় উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রামে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
নদীতে পানি না থাকায় দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজও প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের বিরাট এলাকায় চাষাবাদে বিঘœ ঘটছে। অপরদিকে, তিস্তা নদীর পানি প্রাপ্তির ওপর বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অংশের জীবন-জীবিকা নির্ভর করছে। ভারত শুষ্ক মৌসুমে গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে এই নদীর পানি প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে আশঙ্কাজনক হারে কমে যায় তিস্তা সেচ প্রকল্পে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ।
জানা গেছে, তিস্তা সেচ প্রকল্পে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ যেখানে ৬০ হাজার হেক্টর; সেখানে এই সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে ১০ হাজার হেক্টরে আনা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে- পানির অভাবে এই পরিমাণ জমিতেও ঠিকমত সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। চলতি শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় প্রাপ্ত পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এভাবে কমতে থাকলে তিস্তায় পানির পরিমাণ ৪শ’ কিউসেকের নিচে গিয়ে ঠেকবে। ২০১৫ সালে তিস্তায় পানির স্মরণকালের সর্বনিম্ন প্রবাহ ছিল ৩৪২ কিউসেক। এই পানি সঙ্কটকে কেন্দ্র করে সেখানে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ আরও কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিস্তা সেচ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ভারত গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এতে করে তিস্তা নদীর অববাহিকায় গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ৫ হাজার কিউসেক থেকে কমে পানি নেমে এসেছে ৭শ’ কিউসেকে। এই পানি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা। এ নিয়ে যৌথ নদী কমিশনের ভাষ্য হচ্ছে- সেচ প্রকল্পের পানিসহ তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ন্যূনতম ৫ হাজার কিউসেক পানি প্রয়োজন। গজলডোবা বাঁধের কারণে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ এই পরিমাণ পানি পায় না।
অথচ তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে ১৫ বছর মেয়াদি একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে এসেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ওই চুক্তির খসড়ায় তিস্তার নাব্যতা রক্ষায় ২০ ভাগ পানি রেখে বাকী ৮০ ভাগ পানি সমহিস্যার ভিত্তিতে ভাগাভাগির কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তীব্র আপত্তি থাকায় ঝুলে যায় বাংলাদেশ-ভারত অন্তর্বর্তীকালীন তিস্তা চুক্তি।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।