Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ

বিচারকদের দক্ষতা বৃদ্ধিই লক্ষ্য

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : সুষ্ঠু, দ্রুততা, দক্ষতার সাথে বিচারকার্য পরিচালনার, মামলা জট কমানো এবং বিচার বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উন্নতমানের প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য প্রথম পর্যায়ে ৫৪০ জন বিচারককে বিদেশে (অস্ট্রেলিয়ায়) পাঠাচ্ছেন সরকার। বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম নিম্ন আদালতের বিচারকদের জন্য বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় ও অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এতে করে বিচার প্রার্থীদের সেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং আদালতের মামলার জটও কমবে। আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যায়ক্রমে সব বিচারককে বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের বিচারকদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলেও জানা যায়। এছাড়াও ভারতের ভূপালে অবস্থিত জুডিসিয়াল ট্রেইনিং একাডেমির আদলে বিচারকদের জন্য ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি স্থাপনের বিষয়েও আলোচনা হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।
বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, মানসম্পন্ন বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে একটি সুদক্ষ বিচারকর্ম বিভাগের জন্য প্রয়োজন সুদক্ষ মানবসম্পদ। তাই এই মানবসম্পদের উন্নয়নের জন্য স্থানীয় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিদেশি প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং সুষ্ঠু, দ্রুততা এবং দক্ষতার সাথে বিচারকার্য এবং বিচার ব্যবস্থাপনা পরিচালনার লক্ষ্যে অধঃস্তন আদালতের বিচারকগণকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষা প্রদানের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে জুডিসিয়ারিকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করতে প্রধান বিচারপতি একান্ত প্রচেষ্টায় বিচার প্রার্থীদের সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় ও ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিচারকদের উন্নত প্রশিক্ষণের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত রূপ নেয়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন।
সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের নির্দেশনা মোতাবেক নিরলসভাবে কাজ করে। সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের মামলার জট অনেকাংশ কমছে। প্রধান বিচারপতি যখন জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন, বিচারকদের প্রশিক্ষণের এই দৈনদশা তখনই তিনি লক্ষ্য করেন। পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ভারত সফরে যান প্রধান বিচারপতি। সে সময়ও তিনি নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। যা আগামী মাসে (এপ্রিলে) প্রধানমন্ত্রী ভারতে সফরে বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ নিবে বলে জানা যায়।
এছাড়াও প্রধান বিচারপতি ইউকে ও ইউএসএ সফর করে তিনি সে সব দেশের বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এসময় দেশের বিচারকদের আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে সরকারকেও বিষয়টি জানান। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতিক্রমে বিচার বিভাগের ইতিহাসে বিচারকদের এ ধরনের কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। এর জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ কোটি ৯৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৫৪০ জন প্রশিক্ষণের জন্য চুক্তি সই হলো। সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শক্রমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি এ জন্য নিম্ন আদালতের প্রায় ১৬০০ বিচারকদের মধ্য থেকে চূড়ান্ত বাছাই করা হবে।
এসব বিচারককে জুভেনাইল জাস্টিস, ডমেস্টিক ভায়োলেন্স, অফশোর ক্রাইম অ্যান্ড ডিসপুট রেগারেডিং অফশোর অ্যাক্টিভিটিস, ল অ্যান্ড সি, ক্লাইমেট চেঞ্জ ল অ্যান্ড পলিসি, এনার্জি ল অ্যান্ড পলিসি, জুডিসিয়াল সেক্টর প্লানিং ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, অনলাইন সিকিউরিটি, ট্রান্সন্যাশনাল টেররিজম, আইসিটি ইউজ ইন জুডিসিয়াল অ্যাক্টিভিটিস, ডিজিটাল কোর্ট ম্যানেজমেন্ট, এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস, জুডিসিয়াল সেক্টর প্রজেক্ট অ্যান্ড প্রোগ্রাম মনিটরিং, সাইবার ক্রাইম, কোস্টাল জোন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্লানিং, ফিশারিজ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, মেরিটাইম সিকিউরিটি, এনভায়রনমেন্টাল প্লানিং, গর্ভন্যান্স অ্যান্ড জাস্টিসসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
আইন মন্ত্রণালয় ও ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই : গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এতে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুর হক এবং ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ওই বিশ্ববিদ্যালয়র ভাইস-চ্যান্সেলর ও প্রেসিডেন্ট প্রফেসর বার্নি গেøাভার স্বাক্ষর করেন। এসময় আইনমন্ত্রী, ঢাকায় নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার শেলি-অ্যানি ভিনসেন্ট, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, প্রকল্প পরিচালক বিকাশ কুমার সাহাসহ আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ