Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সংসদে দর্শনার্থী প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ

আইপিইউ সম্মেলনে শতাধিক স্পিকার ডেপুটি স্পিকার আসছেন

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পৃথিবীর নাগরিকদের সঙ্গে এ দেশের নাগরিকদের সেতুবন্ধন রচনা হবে : সাবের হোসেন চৌধুরী
পঞ্চায়েত হাবিব : আগামী ১ এপ্রিল ঢাকায় শুরু হতে যাচ্ছে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)-এর ১৩৬তম সম্মেলন। পাঁচ দিনব্যাপী এ সম্মেলন অংশ নিতে প্রায় শতাধিক স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিবন্ধন আসছেন। এছাড়া ১৩০টি দেশের ১৫০০ জন আইন প্রণেতা ও সরকারি কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন।
এ সম্মেলন উপলক্ষে জাতীয় সংসদে দর্শনার্থী প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ১ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। বাকি সভাগুলো হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের থেকে দর্শনার্থী প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা এখনও সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য অনুরোধ পাচ্ছি। এখনও পর্যন্ত ৪৮টি দেশের স্পিকার ও ৩০টি দেশের ডেপুটি স্পিকার ৯০ জন নিবন্ধন করেছেন।
এছাড়া ১২০টি দেশের ১৩০০ জন এমপির ও সরকারি কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন। এবারের সম্মেলনে প্রায় ২০০ জন নারী এমপি অংশ নেবেন এবং পুরুষ এমপিদের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়ে যাবে। এ সম্মেলন বাংলাদেশকে নতুন এক ঠিকায় নিয়ে যাবে। এই সম্মেলনে বিশ্ব স¤প্রদায়ের কাছে একটি ইতিবাচক বাংলাদেশের পরিচিত হওয়ার সুযোগ থাকবে। পৃথিবীর নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকদের সেতুবন্ধন রচনা হবে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, পার্লামেন্টারি ডিপ্লোমেসি বা সংসদীয় কূটনীতি বলে একটা কথা আছে। দক্ষিণ আমেরিকায় কেবল ব্রাজিল আর মেক্সিকোতে আমাদের কূটনৈতিক মিশন আছে। আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। আমরা কিন্তু সংসদীয় কূটনীতির মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি। এই সংসদীয় কূটনীতির বড় একটা সুযোগ করে দিচ্ছে এই সম্মেলন। আশা করি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এই সুযোগ পুরো মাত্রায় নেবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত একটা ধারণা আছে এখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই। এ সম্মেলনে একটি ইতিবাচক বাংলাদেশকে তুলে ধরবে বিশ্ব স¤প্রদায়ের কাছে। বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের পূর্ব ধারণা এই একটি মাত্র ইভেন্টের মাধ্যমেই পরিবর্তন করে দিতে পারি। তাছাড়া এ সম্মেলনে যারা যোগ দিচ্ছেন, তারা জনগণের প্রতিনিধি। তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি পণ্য পোশাকশিল্প থেকে শুরু করে পাটশিল্প এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাত যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা স্বচক্ষে দেখার মাধ্যমে একটা ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাবে। আমাদের কৃষ্টি, ঐতিহ্য সম্পর্কে তাদের জানানোর অন্যতম সুযোগ এই সম্মেলন। সার্বিকভাবে আমি মনে করি এই সম্মেলন বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
সাবের হোসেন বলেন, আমন্ত্রিত বিশ্ব নেতৃবৃন্দের জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশেই বাণিজ্যমেলার স্থানে একটি মেলা আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলায় বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্য প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া অতিথিদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য মেলায় কিছু গ্রামীণ পরিবেশের চিত্র দেখানো উপস্থাপনের ব্যবস্থা থাকবে। বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ রাজনীতিক, সামাজিক, আয় ব্যয়, সমতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বৈষম্য তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক খাত, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সব কিছুতেই বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন ভারতের চেয়েও ভালো।
জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস ক্যাপ্টেন মোশতাক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, আসন্ন আইপিইউ সম্মেলন চলাকালীন সংসদ সচিবালয়ে কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন না। ওই সময়ে সংসদের অনুমোদিত পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। এটা একটি বড় সম্মেলন এখানো প্রতিনিয়ত বিদেশিরা আসছে। এ কারণে দর্শনাথী প্রবেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
সংসদ সূত্র জানায়, আইপিইউ সম্মেলনে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একাধিক বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। সূচি অনুযায়ী, আইপিইউ এর পিস অ্যান্ড ইন্টান্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্যান্ডিং কমিটি ‘সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ প্রতিরোধে সংসদের ভূমিকা’ বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পর তা গৃহীত হবে। পাকিস্তান ক্রমাগত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ করার কারণে প্রস্তাবটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইপিইউ-এর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, ফিন্যান্স অ্যান্ড ট্রেড স্ট্যান্ডিং কমিটি ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০’ নিয়ে আরেকটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করবে, যেখানে নারীর ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেয়া হবে। এই খসড়া প্রস্তাবের অনেক উপাদান বাংলাদেশে প্রায়োগিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।
প্রথমবারের মতো ঢাকায় বসছে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)-এর ১৩৬তম সম্মেলন। এই সম্মেলনে আইপিইউভুক্ত ১৭১টি দেশের মধ্যে ১৩৫টি দেশের সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিরা অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের ২ শতাধিক সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক আসবেন। রাজধানীর আগারগাঁও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে টানা ৬ দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়ে প্রস্তুতি প্রায় শেষ। বিদেশি এমপিদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সেশন নিয়ে জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে ২৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে রাজধানীর ১৫টি পাঁচ তারকা মানের হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং আইপিইউ যৌথ আয়োজক কর্তৃপক্ষ। সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত সবচেয়ে বড় সংস্থা আইপিইউ। সংস্থাটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে এ সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে। আগামী ১ এপ্রিল জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন।
আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
স্পিকার ও সিপিএ’র চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ১৩৬তম আইপিইউ অ্যাসেম্বলির প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। আসন্ন আইপিইউ অ্যাসেম্বলি সফলভাবে সম্পন্ন হবে। গতকাল মঙ্গলবার ইন্টার পার্লামেন্টরি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুনগুং জাতীয় সংসদে তার কার্যালয়ে স্পিকারের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি এ কথা জানান। সাক্ষাৎকালে তাঁরা ১৩৬তম আইপিইউ অ্যাসেম্বলির প্রস্তুতি বিষয়ে আলোচনা করেন। স্পিকার বলেন, আইপিইউ অ্যাসেম্বলীর প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্যগণের সমন্বয়ে গঠিত তত্ত¡াবধান কমিটিসহ বিভিন্ন উপকমিটি কাজ করছে।
অপরদিকে স্পিকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটি’র চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সাথে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের সদস্য আর্নে লিৎজ এর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করেন।
স্পিকার বলেন, এ সম্মেলন উপলক্ষে মূল ভেন্যু বিআইসিসি সংলগ্ন একটি আইপিইউ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলায় বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের সমাহার থাকবে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হবে। আইপিইউ’র সেক্রেটারি জেনারেল ১৩৬তম আইপিইউ এসেম্বলির প্রস্ততিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় অ্যাসেম্বলি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ