পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার : উত্তরপ্রদেশে সম্ভাব্য মূখ্যমন্ত্রীর তালিকায় ছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি কেশবপ্রসাদ মৌর্য, মনোজ সিনহা, রাজনাথ সিংহ, স্বতন্ত্রদেব সিংহ, সতীশ মাহানা, সুরেশ খান্না ও যোগী আদিত্যনাথের নাম। সকলকে টেক্কা দিয়ে মূখ্যমন্ত্রী হন যোগী আদিত্যনাথ। কারণ কী? তিনি কট্টর হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী। ভারতকে তিনি হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তর ঘটতে পারবেন। যোগী আদিত্যনাথের পূর্বাশ্রমের নাম অজয় সিংহ। জন্ম ১৯৭২ সালে ৫ জুন। জন্মসূত্রে এই রাজপুতের সাম্রাজ্য গোরক্ষপুর। গুরু গোরক্ষনাথ মন্দিরের পীঠাধীশ্বর যোগী মাত্র ২৬ বছর বয়সে ১৯৯৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন। অতপর টানা পাঁচ বার সংসদে আছেন। সা¤প্রদায়িক দাঙ্গায় ইন্ধন জোগানো, ইসলাম বিদ্বেষ প্রচারণা ছড়ানো এবং মুসলিম হত্যার চেষ্টা এই তিন অভিযোগে আধাডজন ফৌজদারি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০০৫ সালে তিনি ৫ হাজার নানা ধর্মের মানুষকে হিন্দুধর্মে দীক্ষা নিতে বাধ্য করে ঘোষণা করেন, ‘উত্তরপ্রদেশসহ গোটা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত না করে থামবো না’। সঙ্ঘ পরিবারের তেমন পছন্দ না হলেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এই নেতাকে মূখ্যমন্ত্রী করে গোটা উত্তরপ্রদেশকে হিন্দুত্ববাদের ছাতার নীচে আনতে মোদীর কী দারুণ রসায়ন!
সঙ্ঘ পরিবার, আরএসএস, শিবসেনা, বিশ্বহিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি), বিজেপি’র সহযোগী সংগঠনগুলো যে দেশকে ‘ভারত মাতা কী জয়’ শ্লোগানে সব ধর্মের মানুষকে এক ঝুড়িতে নেয়ার প্রচেষ্টায় নেমেছে সেই ভারত এক সময় মুসলিরা শাসন করতেন। তখন ভারত সব ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকার ছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে উপমহাদেশে রাজনৈতিক ঐক্য হয়। পরবর্তী গুপ্ত, চালুক্য, চোল, পল্লব ও পাÐ রাজন্যবর্গ ভারত শাসন করেন। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে আরব সেনানায়ক মুহাম্মদ বিন কাশিম দক্ষিণ পাঞ্জাবের সিন্ধ ও মুলতান দখল করলে ভারতে মুসলমান শাসনের সূচনা ঘটে। পরবর্তীতে দিল্লিতে সুলতানি ও মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়। মুঘল সম্রাজ্যের কাহিনী সবার জানা। এম সময়ের ‘ভারত সবার’ সেই দেশকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে রূপান্তর ঘটানোর চেষ্টায় মরিয়া বিজেপি! এর পিছনে অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করছে রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (আরএসএস)। মুসলিম বিদ্বেষী এই আরএসএস মূলত বিজেপি সরকারের জীয়নকাঠি। আরএসএসের উত্থানের কাহিনী চলুন শুনি। নাগপুরে কে বি হেডগেওয়ার ১৯২৫ সালে আরএসএস প্রতিষ্ঠা করেন। সামাজিক সংগঠন হিসেবে জন্ম নেয়া আরএসএসের ভাবশীর্ষরা ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে রূপান্তর ঘটানোর উদ্দেশে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। গঠন করেন জনসংঘ। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংগঠনের অনুগতরা রাজনৈতিক অঙ্গনে নাম পরিবর্তন করে ভারতীয় জনসংঘ (১৯৫১ থেকে ৭৭), জনতা দল (১৯৭৭ থেকে ৮০) এবং ১৯৮০ সালে বিজেপি নাম ধারণ করে। অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদভানী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সবাই আরএসএসে ভাবশীর্ষ। এর বর্তমান সভাপতি মোহন ভাগবত। আরএসএস ডানপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী ক্যাডারভিক্তিক স্বেচ্ছা-সেবক সংগঠন হিসেবে পরিচিত। আরএসএস সংঘ পরিবার নামে হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর একটি অংশ। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার যুগে ১৯২৫ সালে মুসলিম বিদ্বেষ থেকে নাগপুরের ডাক্তার কে. বি. হেডগেওয়ার আরএসএস প্রতিষ্ঠা করেন। কট্টর হিন্দুত্ববাদী কর্মকাÐের অপরাধে ব্রিটিশ আমলে নিষিদ্ধ ছিল। স্বাধীন ভারতে ১৯৮৪ সালে আরএসএস-সদস্য নাথুরাম গডস মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করলে এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতে জরুরী ১৯৭৫-৭৮ জরুরী অবস্থায় এবং ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরও এই সংগঠন নিষিদ্ধ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আরএসএসের নেতারা প্রকাশ্যে আডলফ হিটলারের পক্ষে ছিল। আরএসএসের ভাবশীর্ষ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ভারতীয় জনসংঘ। ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার পর জনসংঘ একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে জনতা দল গঠন করে। ১৯৭৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনতা দল ক্ষমতাসীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে পরাজিত করে সরকার গঠন করে। ১৯৮০ সালে জনতা দল অবলুপ্ত হলে জনসংঘের সদস্যরা নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম বিজেপি গঠন করেন। ১৯৮৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি মাত্র দুটি আসনে জয় লাভ করে। কিন্তু বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনে আবার দলের শক্তি বৃদ্ধি পায়। একাধিক রাজ্য নির্বাচনে জয় লাভ এবং জাতীয় স্তরের নির্বাচনে ভাল ফল করার পর অবশেষে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি সংসদে বৃহত্তম দলে পরিণত হয়। তবে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় এই দলের সরকার মাত্র ১৩ দিন স্থায়ী হয়। ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর বিজেপি- নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) এক বছরের জন্য অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বে সরকার গঠন করে। পরবর্তী নির্বাচনে এনডিএ আবার বিজয়ী হয়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বেই সরকার গঠন করে। এই সরকার পূর্ণ সময় ক্ষমতায় ছিল। এটিই ছিল কংগেসের বাইরে ভারতের প্রথম পূর্ণ সময়ের অকংগ্রেসি সরকার। ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে এনডিএকে পরাজিত করে ক্ষমতাসীন হয় কংগ্রেস। এরপর ১০ বছর বিজেপি ছিল প্রধান বিরোধী দল। প্রথম দফায় লাল কৃষ্ণ আদভানী এবং দ্বিতীয় দফায় সুষমা স্বরাজ বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে গুজরাটের দীর্ঘকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র দমোদর মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি পুনরায় বিপুল ভোটে জয়ী হয়। সেই থেকে নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বে এনডিএ সরকার ভারতে বর্তমানে ক্ষমতাসীন। বিজেপির ঘোষিত আদর্শ হলো ‘একাত্ম মানবতাবাদ’। ১৯৬৫ সালে দীনদয়াল উপাধ্যায় প্রথম এই মতবাদ প্রচার করেন। এই দর্শনকে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা এমন এক স্বদেশি অর্থনৈতিক মডেলের পক্ষপাতী যা মানুষকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে’। মূলত এই মতবাদ ছিল ব্রিটিশবিরোধী নেতা বিনায়ক দামোদর সাভারকর প্রচারিত হিন্দুত্ব মতবাদের অনুগামী। হিন্দুত্ব হলো পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এমন এক সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ যা ভারতীয় সংস্কৃতির পক্ষপাতী এবং ধর্মনির্বিশেষে সকল ভারতীয়কে এক ঝুড়িতে আনতে সক্ষম। বিনায়ক দামোদর সাভারকরের এক ছাতার নীচে দর্শনে আরএসএস কার্যত এখন ভারতে এক ধর্ম মানে হিন্দুধর্মকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। সেই একাত্ম মানবতাবাদ হলো ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছে। আরএসএসের হিন্দুত্ব আদর্শের উদ্দেশ্য হলো অন্য ধর্মগুলোকে বাদ দিয়ে ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা। অটল বিহারী বাজপেয়ীর শাসনামলে বিজেপি কিছুটা মধ্যপন্থা গ্রহণ করলেও মোদী ক্ষমতা গ্রহণের পর সেটার রূপান্তর ঘটে উগ্রপন্থায়। ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারী গুজরাটের গোধরায় হিন্দু তীর্থযাত্রীবাহী একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২ হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় দেড় লাখ মুসলিমকে ঘর ছাড়া করা হয়। আবার ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের মাধ্যমে সেখানে যে রাম মন্দির নির্মাণের চেষ্টা হয় সেটাও ওই বিজেপির একাত্ম মানবতাবাদ। ‘ভারত মাতা কী জয়’ শ্লোগানে সকলকে বাধ্য করার অপচেষ্টার প্রতিবাদ করেছে ভারতের প্রখ্যাত শিক্ষা কেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দ। ওই মাদ্রাসার এক ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ‘মুসলিমরা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করে। আল্লাহ ছাড়া তারা অন্য কাউকে উপাসনা করতে পারে না। এজন্য ‘ভারত মাতা কী জয়’ শ্লোগান দেয়া মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়’। এরপর আরএসএসের বিক্ষুব্ধ অনুসারীরা দেওবন্দের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়।
হিন্দুত্ববাদ তরিকার ক্ষমতাসীন বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ বহুজাতিক ভারতকে ‘হিন্দু ভারত’ বানাতে চায়। তাদের চোখে অহিন্দুরা ‘জাতীয়’ শত্রæ’। ভারতের পুঁজিপতি শ্রেণী ও আধুনিক মধ্যবিত্তদের মধ্যেও এই চিন্তার কদর বাড়ছে। দেশটির বুদ্ধিজীবী ও বিবেকমান মানুষদের সেটাই ভয়ের কারণ। ভারতের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার ও এক নিবন্ধে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমত্য সেন লিখেছিলেন, মোদীর মতো ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই না। কেন দেখতে চান না তিনি সেটাও সবিস্তারে বর্ণনা করেছিলেন। বিজেপির সংখ্যালঘু বিদ্বেষী কর্মকাÐের প্রতিবাদে প্রখ্যাত লেখিকা অরুণন্ধতী রায় তাঁর রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন। শুধু অমত্য সেন আর অরুণন্ধতী রায় নন; ভারতে হঠাৎ হিন্দুত্ববাদের উত্থানে উদ্বেগ আছড়ে পড়ছে সর্বমহলেই। ভারতের জনসংখ্যার ৬ ভাগের একভাগ অধ্যুষিত উত্তর প্রদেশে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সাধু যোগী আদিত্যকে মূখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর পর মোদী এবার পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি প্রদেশের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন দু’জন সাংবাাদিক জানান, নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিকে বিজয়ী করতে কট্টরহিন্দুত্ববাদী নেতার সন্ধান করছেন। বামপন্থী ও তৃর্ণমূলের শাসনামলে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গের উন্নতি না হওয়ায় সাধারণ মানুষ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। ধুরন্ধর মোদী সেটা বুঝতে পেরেই উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের মতোই পশ্চিমবঙ্গে কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতার সন্ধানে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।