পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্ক্রল. ইন : ২০১৭ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের নির্বাচনী মানচিত্রে দৃষ্টিপাত আপনাকে বলবে যে রাজ্যের ভোট প্রদান পদ্ধতিতে আঞ্চলিক বিভিন্নতা প্রায় মিলিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে তা গেরুয়ার রঙে এক হয়ে গেছে যা বলছে যে রাজ্য জুড়ে বিজেপির জন্য ভোট বিতরণ করা হয়েছে।
ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন ধরনের নির্বাচকমন্ডলী নিয়ে উত্তর প্রদেশের রাজনীতি চলমানঃ হিন্দুত্ববাদী, মুসলিম, অন্যান্য পশ্চাৎপদ শ্রেণি (ওবিসি), দলিত। তাদের প্রায় সবাই বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে প্রাধান্য বিস্তারকারী ওবিসি ও মুসলিমদের প্রতিহত করে এবং সম্প্রদায় ও স্বার্থের জোটকে ঐক্যবদ্ধ করে। তারা দলিত ও মুসলিম নারীদের সমর্থন পাওয়ারও দাবি করেছে। বিজেপি উচ্চশ্রেণি ও মধ্যবিত্ত হিন্দুদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ভোট পেয়েছে।
বিজেপি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গোরখপুরের শক্তমানব আদিত্যনাথকে নিয়োগ করেছে। উত্তর প্রদেশে হিন্দুত্ববাদের পোস্টার বয় হিসেবে তার ইমেজ এ নির্বাচনে বিজেপির গড়ে তোলা ব্যাপকভিত্তিক ভোটার জোটের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।
পরিচয়ের ভাঙন
২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটল তার দু’টি দিক আছে। প্রথম, বর্ণভিত্তিক পরিচয়ের রাজনীতিতে ভাঙন ধরেছে। এটা নাগরিক ভোটারদের উত্থানের পথ করে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে যারা বিভিন্ন বিষয়ে পরিচয়ের বাইরে সাড়া দেয়। উত্তর প্রদেশে সকল পরিচয়-রাজনীতি রাজ্যের শাসক আঞ্চলিক দলগুলো কুক্ষিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকীকৃত করেছিল। সমাজবাদী পার্টি, এ নাম সত্তে¡ও এটি ছিল যাদবদের দল আর বহুজন সমাজ পার্টি দলিতদের প্রতিনিধিত্ব করে।
পরিচয় রাজনীতির ব্র্যান্ড একচেটিয়া ধরনের ক্ষমতা দিয়েছিল। এ পরিচয়ধারীদের এলিটরা ছিল ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক। সমাজবাদী পার্টি বা বহুজন সমাজ পার্টি উভয়েই পরিচয়ের নামে পরিবার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। এর মানে দরিদ্র, প্রান্তিক পর্যায়ের লোকেরা যারা আগে পরিচয়ের ভিত্তিতে ভোট দিত তারা এ ধরনের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা হারায়। অ-ওবিসি ও অ-জাতভ দলিতরাও পরিচয় থেকে সরে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের বৃহত্তর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছে। তারা এখনো গ্রæপ হিসেবেই ভোট দেয়, তবে কর্মী, কৃষক, ও শ্রমিক হিসেবে। তারা তাদের সুর্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক স্বার্থের ভিত্তিতে ভোটদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও অ-মধ্যবিত্ত শ্রেণি; ধনী ও গরিব; কৃষক ও শ্রমিক বা গ্রামীণ ও শহুরে হিসেবে এ ধরনের বিভক্তি এ পর্যন্ত আমরা উপেক্ষা করলেও তা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
হিন্দু ভোট
দ্বিতীয়ত বর্ণ রাজনীতির স্খলনের সাথে ঘটে হিন্দু ভোটের একত্রীকরণ। উত্তর প্রদেশের বড় পরিবর্তন হলো : গত ২৫ বছর ধরে আঞ্চলিক দলগুলো জাতীয় দলগুলোর জন্য সুযোগ কমই রেখেছিল, কিন্তু এখন বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। নানা পন্থায় হিন্দু আসনগুলো ঐক্যবদ্ধকরণ ঘটেছে যা এ বিজয় অর্জনে সাহায্য করেছে।
বিজেপির প্রচারণার মাধ্যমে সরাসরি হিন্দু একত্রীকরণের সূচনা হয়। বিজেপি এ ধারণা ছড়িয়ে দেয় যে, মুসলিম ও অন্যরা সকল ক্ষেত্রে হিন্দুদের চেয়ে বেশি পাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদের আবেদন হচ্ছে আংশিকভাবে একটি নেতিবাচক আবেদনÑ আপনি যদি মুসলিম না হন, যাদব না হন, তফশিলি উপজাতি না হন, তাহলে যেন রাজনীতিতে আপনার জন্য কিছু নেই। এটা প্রতিক্রিয়ামূলক রাজনীতিকে লালন করে ও বিজেপির জন্য সুবিধা সৃষ্টি করে।
সর্বশ্রেণির হিন্দুদের কাছে বিজেপি এমন একটি দল হিসেবে আবির্ভূত হয় যে তারা তাদের ব্যাপারে যতœবান এ কারণে যে, তারা হিন্দু, তারা বঞ্চিত সংখ্যালঘু বা পশ্চাৎপদ শ্রেণির অংশ বলে নয়। এটা গেরুয়া দলকে এক প্রাকৃতিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দেয়।
আপনি যদি হিন্দু ভোটদাতাদের তাদের নির্বাচনী পছন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তারা বলবে না যে তারা হিন্দু হিসেবে ভোট দিচ্ছে। তার পরিবর্তে তারা বলবে যে তারা সংখ্যালঘু সুবিধাপ্রাপ্তির বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। এটা হচ্ছে ক্ষোভ যার প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির মধ্যে স্থান হয়নি। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির প্রতি চ্যালেঞ্জ বরাবর সমস্যা কবলিত হয়েছে যখন সংখ্যালঘুদের উপর স্থায়ী ও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা হুমকি সৃষ্টি করেছে। সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য তাদের বিশেষ অধিকার ও রাজনীতির প্রয়োজন দেখা দেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠদের প্রবল গরিষ্ঠতা ঠেকাতে এটা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।
এছাড়া ইস্যুভিত্তিক রাজনীতির পাশাপাশি হিন্দুত্বকরণ ভোটের বর্ণপদ্ধতিকে ব্যাহত করেছে। দেশ জুড়ে ওবিসির মধ্যে হিন্দু একীকরণ উচ্চবর্ণের চেয়ে শক্তিশালী ছিল। আগে অ-তফশিলি বা উচ্চবর্ণের হিন্দুরা সাধারণত তফশিলি উপজাতির হিন্দুদের বিরুদ্ধে একজোট ছিল। কিন্তু এখন ধর্মীয় পরিচয় বর্ণ - পরিচয়ের উপর প্রাধান্য বিস্তার করায় এই পার্থক্য অন্তর্হিত হচ্ছে।
এদিকে এই প্রচÐ শক্তিশালী হিন্দু জোটের বিরোধীদের মধ্যে ভাঙন ধরেছে। বিপুল সংখ্যক মুসলিম বিজেপিকে তাদের সংসদীয় আসনের বাইরে রাখতে কৌশলগতভাবে ভোট দিয়েছে। কিন্তু সে ভোট সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি , কংগ্রেস ও অন্যদের মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে।
জয়ের সমীকরণ?
বস্তুত বিজেপি জয়ের সমীকরণ আয়ত্ত করেছে বলে মনে হচ্ছে। তারা বিষয়ভিত্তিক রাজনীতিকে হিন্দু একীকরণের সাথে যুক্ত করেছে। বর্ণভিত্তিক রাজনীতির খপ্পর থেকে পিছিয়ে পড়া হিন্দুদের সরিয়ে নেয়া অনুমোদন করেছে , তাদেরকে অ-তফশিলি সম্প্রদায় ও অ-তফশিলি উপজাতি হিন্দুদের ভোট বেসের সাথে একীভূত করেছে। তারা আরো দাবি করেছে যে একটি বিশেষ আর্থ-সামাজিক শ্রেণির মুসলিম পুরুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে যেমন দিয়েছে বিপুল সংখ্যক মুসলিম নারী। তিন তালাকের বিরুদ্ধে বিজেপির অবস্থান তাদেরকে এ দলে টেনে এনেছে। তবে বিজেপির প্রতি মুসলিম সমর্থনের বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য আমদের পূর্ণ তথ্য প্রয়োজন।
এ মুহূর্তে বিজেপি উত্তর প্রদেশের উচ্চবর্ণ হিন্দু ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রচলিত ভোট সমর্থনের বাইরেও ভোট লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। কয়েক দশক ধরে হিন্দুত্ববাদী আদর্শিক দল হিসেবে উত্তর প্রদেশে তাদের প্রতি সমর্থন কম ছিল।
বিজেপি যদি তার ভিশন ২০১৯ পর্যন্ত ও তার বাইরেও সম্প্রসারিত করতে চায় তাহলে এ নির্বাচনে সে যে সমর্থন লাভ করেছে তা ক্ষত্রিয়-হরিজন-আদিবাসী-মুসলিম জোটের সাথে সংহত করতে হবে যেমনটি কংগ্রেস করেছিল ১৯৭০ ও ১৯৮০-র দশকে গুজরাটে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দলের প্রকৃতি ও তার ডিএনএ-র প্রেক্ষিতে বিজেপি কি এ নতুন সমর্থন দৃঢ় করতে পারবে?
ইতোমধ্যেই অনৈক্যের লক্ষণ আভাসিত হয়েছে। বিজেপি এ নির্বাচনে একজন মুসলিমকেও প্রার্থী করেনি। যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করার ফলে তাদের গড়া জোট টিকে থাকবে কিনা সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আদিত্যনাথ উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোট নিশ্চিত করতে পারেন, কিন্তু মুসলিমদের সমর্থনের জন্য তিনি পরিচিত নন।
তবে কি বিজেপি নির্বাচনের সময় এক ভাষা ও সরকারে থাকার সময় আরেক ভাষায় কথা বলবে?
* নিবন্ধকার ডিএল শেঠ অনারারি সিনিয়র ফেলো ও সেন্টার ফর দি স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজ-এর সাবেক পরিচালক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।