Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ.লীগের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপগঞ্জ রণক্ষেত্র

স্বাধীনতা দিবস পালন নিয়ে

| প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৭, ১:২১ এএম


গুলি, টিয়ারশেল, পথচারীসহ আহত ৪০

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা  : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালনে যোগদানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করেন। সংঘর্ষে পুলিশ-পথচারীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বহিরাগত সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় এলাকায় প্রবেশ করায় যে কোন সময় ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। রোববার দুপুরে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে মুড়াপাড়া  স্টেডিয়াম মাঠে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন উপজেলা প্রশাসন। সেখানে সকাল ৭টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। বিশেষ অতিথি ছিলেন তারাব পৌর মেয়র মিসেস হাছিনা গাজী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুইয়া, এসিল্যান্ড সাইদুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হারেজ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আল-আমিন দুলাল প্রমুখ।
অপরদিকে, ইছাখালী এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জায়েদ আলীসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। সেখানে কয়েকশ’ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মুড়াপাড়া স্টেডিয়াম মাঠের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস অনুষ্ঠানে যোগদান করতে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সমর্থকরা আসছিলেন। এ সময় ইছাখালী এলাকায় পৌঁছামাত্র জায়েদ আলীসহ তার লোকজনের সঙ্গে চেয়ারম্যানের সমর্থকদের বাক-বিতন্ডা হয়। বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে রফিকুল ইসলাম রফিকের সমর্থকদের একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে কয়েকজনকে মারধর করা হয়।  
এদিকে, দুপুর ২টার দিকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে যোগদানে যাওয়ার সময় গাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের সংবাদ পেয়ে রফিকুল ইসলাম রফিক ও তার সমর্থকসহ বহিরাগতরা সশস্ত্র অবস্থায় ইছাখালী এলাকায় আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত জায়েদ আলীসহ তার লোকজনের উপর হামলা চালায়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজনসহ পথচারীরাও ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পথচারী, পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় এলাকাজুড়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মিলাদ মাহফিলে থাকা প্রায় ৫ শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করে রান্না করা খাবার নষ্ট করে ফেলা হয়। ভাঙচুর করা হয় মাইকসহ সাউনবক্সও। আহতদের মধ্যে ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন, জোৎস্না বেগম, আরজুদা, হাসি, ফেরদৌসি, পুলিশ সদস্য শেখ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, আলাউদ্দিন, দিক বিজয়, দ্বীন ইসলাম, রিফাত, নুর আলম, জামাল বাদশা, শাহাদাত, রবিউল ইসলাম, ফয়সাল, জোবায়ের, শাকিব, আবিদ, মোহাম্মদ আলী, আবুল হোসেন, রুবেল, আওলাদের নাম জানা গেছে। এদের মধ্যে দ্বীন ইসলাম, রুবেল, ফয়সাল, আওলাদ ও দিক বিজয়কে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
দুই গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থানের সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুইয়ার একটি গাড়ি বহর ঘটনাস্থল হয়ে কাঞ্চনের দিকে চলে যায়। এ সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের (গ অঞ্চল) সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উভয়পক্ষকে লক্ষ্য করে ৪০ থেকে ৫০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করেন।
এদিকে, বিকেলে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালানোর প্রতিবাদে ইছাখালী এলাকায় অবস্থান নিয়ে জায়েদ আলীসহ তার লোকজন প্রতিবাদ সভা করেন। অপরদিকে, নাওড়া এলাকায় পাল্টা প্রতিবাদ করেন ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক। ওই প্রতিবাদ সভায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে যোগদানে বাধা প্রদানকারীদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের (গ অঞ্চল) সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইছাখালী এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 



 

Show all comments
  • এস, আনোয়ার ২৭ মার্চ, ২০১৭, ৭:১৫ এএম says : 0
    বিশেষ বিশেষ জাতীয় দিবস গুলোতে মহাধুমধামে এরকম শক্তির মহড়ার আয়োজন না করলে আমরা কপালপোড়া সাধারন পাবলিকেরা কেমন করে বুঝবো কোন্ নেতার শক্তির দাপট কতটুকু আছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ