পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : যারা ধর্মের নামে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে হত্যা-সন্ত্রাসে জড়াচ্ছে, তাদের সৎ পথে ফেরার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের জীবন-জীবিকার জন্য সরকার সবকিছু করবে। সেই সঙ্গে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে, এটা চলবে এবং কঠোর হাতে তা আমরা দমন করব। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম বলেছে, আত্মঘাতী হওয়া মহাপাপ, গোনাহর কাজ। আজ যারা বিপথে যাচ্ছে, তারা যেন সৎ পথে ফিরে আসে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, আত্মহননের পথ যেন বেছে না নেয়।
শিক্ষার্থীরা যাতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়, সেদিকে আরও বেশি নজর দেয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, আমাদের শিশুরা মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। অভিভাবকদের কথা শুনবে, শিক্ষকদের কথা শুনবে। আর মাদক বা কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের প্রচেষ্টায় আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন উন্নত জীবন পায়, সৎ চরিত্রের হয়, মানুষের মতো মানুষ হয়। কারণ আজকের প্রজন্মই আগামী দিনে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যেমন প্রধানমন্ত্রী হয়েছি; আজকে যারা শিশু, আগামী দিনে তাদের মধ্যে থেকেই কেউ না কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে। মন্ত্রী হবেন, অফিসার হবেন, বিভিন্ন সেনা- নৌ ও বিমানবাহিনী থেকে শুরু করে পুলিশ বাহিনী, বিজিবি কর্মকর্তা হবেন। তারা দেশকে গড়ে তুলবেন, দেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী করে তুলবে। আজকের যে প্রজন্ম তারাই একদিন শিক্ষা-দীক্ষায় পরিপূর্ণ হয়ে উন্নত মানবসম্পদে পরিণত হবেন। এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিন অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন এবং শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ ডিসপ্লে উপভোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচিকে এবার আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। তবেই আমরা গড়ে তুলতে পারব ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’। আমরা স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। এই প্রসঙ্গে ১৯৭৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অংশ বিশেষ তুলে ধরে বলেন, সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংগ্রামের সমাপ্তি এবং অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধের শুরু। এই যুদ্ধে এক মরণপণ সংগ্রাম আমরা শুরু করেছি। এই সংগ্রাম অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। তবে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থেকে কঠোর পরিশ্রম করি এবং সৎ পথে থাকি তবে, ইনশাল্লাহ জয় আমাদের অনিবার্য।
প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ জাতির পিতার নেতৃেত্ব শুরু হয়। ২৫ মার্চ কালরাতে যখন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা শুরু করে তখন বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চের শেষ এবং ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর আগে ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে ঘোষণা দেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এর মাধ্যমে তিনি একটি সম্পূর্ণ গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার দিক-নির্দেশনা দিয়ে যান।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা স্বাধীন জাতি। জাতির পিতা স্বাধীনতা ঘোষণার পর তাকে পাকিস্তানী বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তিনি কারাবন্দি থাকেন। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানোর ষড়যন্ত্র করা হয়। কিন্তু ততদিনে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধ বিজয় অর্জন করি এবং আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন। ফিরে এসেই এই রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশ কিভাবে চলবে তাঁর দিক-নির্দেশনা দিয়ে বক্তব্য দেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলা শুরু করেন। দুর্ভাগ্য আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকাকে স্তব্ধ করে দিয়ে পরিবার-পরিজনসহ জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। যার কথা জাতির পিতাই তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে বলে গেছেন ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’। তবে, অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে ২১টা বছর এদেশের মানুষকে দাবায়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে। আমরা ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যে কাজ শুরু করেছি আজও দেশের মানুষ তার সুফল পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তির কর্মসূচীকে এবার আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। তবেই আমরা গড়ে তুলতে পারব ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’। আমরা স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে চাই।
স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৭তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে রাজধানীতে ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সন্মুখে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পার্ঘ প্রদানের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিকৃতির সম্মুখে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এরপর দলের পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পার্ঘ প্রদান করে শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট সাহারা খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ও ড. আবদুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক। এ ছাড়াও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া ধানমন্ডিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে পুষ্পার্ঘ প্রদান করে শ্রদ্ধা জানান।
স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর উপহার ও শুভেচ্ছা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ৪৭তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে প্রতি বছরের মতো এবারও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মোহাম্মদপুরের গজনভী রোডে শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব সাইফুজ্জামান শিখর, উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ও প্রটোকল অফিসার খুরশিদ আলম গতকাল রোববার সকালে শুভেচ্ছা সামগ্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করেন।
মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের মতো প্রত্যেক জাতীয় দিবস ও উৎসবে তাদেরকে স্মরণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তারা মোহাম্মদপুরে ১৩ তলার আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১সহ মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনে নেয়া ব্যাপক পদক্ষেপের জন্যও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করেন।
স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৪৭তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি স্মারক ডাক টিকিট, একটি উদ্বোধনী খাম এবং একটি ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেছেন।
শেখ হাসিনা গতকাল রোববার বিকালে তার সরকারি বাসভবন গনভবনে ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাক টিকিট ও একটি উদ্বোধনী খাম এবং ৫ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেন। এ বিষয়ে একটি বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মন্ডল।
স্মারক ডাক টিকিট, উদ্বোধনী খাম এবং ডাটা কার্ড আজ থেকে ঢাকা জিপিও-এর ফিলাটেলিক ব্যুরোতে বিক্রি করা হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য জিপিওি/প্রধান ডাকঘরসহ দেশের সকল ডাকঘর থেকে এ স্মারক ডাক টিকিট বিক্রি করা হবে। উদ্বোধনী খাম ব্যবহারের জন্য চারটি জিপিওতে বিশেষ সিলমোহরের ব্যবস্থা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।