Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়ক-মহাসড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ

একদিনে ২১ জন নিহত : গড়ে প্রতিদিন ১০ জনের মৃত্যু

| প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিনই ঝরছে তাজা প্রাণ। অনেকেই হচ্ছেন পঙ্গু। দুর্ঘটনা কমাতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। মহাসড়কগুলোতে আগের মতোই চলছে নিষিদ্ধ যানবাহন। সাথে যুক্ত হয়েছে মোটরচালিত রিকশা। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় ট্রাক-ভটভটি মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। এছাড়া সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় যাত্রীবাহী বাসের চাকায় পিষ্ট হয়েছেন এক ডাল ব্যবসায়ী। গতকাল রাজধানীর ঢাকায় নিহত হয়েছেন দু’জন। এর মধ্যে বাড্ডার নতুন বাজার এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের চাপায় ক্যামব্রিয়ান কলেজের এক শিক্ষক নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৪৫ দিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৪২১ জন। এ হিসাবে গড়ে প্রতিদিন সারাদেশে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১০ জন। বেসরকারি হিসাবে, গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে প্রায় ৪৭ হাজার। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৬ শতাংশের সমান। বেসরকারি সংস্থাগুলো সড়ক দুর্ঘটনা পর্যালোচনা করে কয়েকটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছে। কারণগুলো হলো- বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, নিয়ম ভঙ্গ করে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং করার প্রবণতা, চালকদের দীর্ঘক্ষণ বিরামহীনভাবে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, আনফিট গাড়ি ও থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও সড়কের বেহালদশা। কারণগুলোর সাথে দুর্ঘটনারোধ করার জন্য কতিপয় সুপারিশও করা হয়। কিন্তু সে সব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি এগুলো বাস্তবায়নের জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে না। বরং বছর শেষে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।
সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য দেশের ২১টি মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকসহ নছিমন, করিমন, ভটভটি চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। গত বছর এ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর এখনও মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানগুলো অবাধে চলছে। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উচ্চ আদালতও এসব যানবাহন যাতে মহাসড়কে চলাচল করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের প্রতি নির্দেশনা দেয়। উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনায় মানা হচ্ছে না। এতে করে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। গতকাল ভোরে চুয়াডাঙ্গার-দামুড়হুদা উপজেলায় ট্রাক-ভটভটি মুখোমুখি সংঘর্ষে মোট ১৩ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের জয়রামপুর বটতলা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকালে উপজেলার বড় বলদিয়া গ্রাম থেকে ১৫/১৬ জন ঠিকাদারী শ্রমিক ভটভটিযোগে কাজ করার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার পথে জয়রামপুর বটতলা নামক স্থানে পৌঁছায়। এসময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই ভটভটির চালক জজ মিয়াসহ আটজন নিহত হন এবং বাকিরা আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও পাঁচজন মারা যায়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে, ২০১৪ সালের সারাদেশে ৫ হাজার ৯২৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৮ হাজার ৫৮৯জন। ২০১৫ সালে সারাদেশে ৬ হাজার ৫৮১ দুর্ঘটনায় নিহত ৮ হাজার ৬৪২ এবং আহত ২১ হাজার ৮৫৫ জন। গত বছর ৪ হাজার ৩১২টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৫৫জন। আহত হয়েছে ১৫ হাজার ৯১৪ জন। সরকারি হিসাবে গত বছর জুলাই মাস পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১ হাজার ৪২২ জন, আহত ১ হাজার ২৮৯ জন। পরিসংখ্যান বলছে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনার হার অনেকটাই কম ছিল। এর কারণ গত বছর মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন যাতে না চলতে পারে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। হাইওয়ে পুলিশ ছিল সক্রিয়। বেসরকারি হিসাব বলছে চলতি বছরের শুরু থেকেই সারাদেশেই সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। বাড়তে বাড়তে এটি ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। ফেব্রæয়ারি মাসের দুই দিনে মারা গেছে ৫০ জন। এর মধ্যে একটি গ্রামে ফিরেছে ১২টি লাশ। গতকাল তেমনি একটি স্থানে এক সাথে ১৩টি প্রাণ ঝরে গেল।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার শতকরা ৬৪ ভাগই সংঘটিত হয় গ্রামাঞ্চলের রাস্তাসমূহে। আর শুধু গ্রামের মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। গবেষণায় বলা হয়, মহাসড়কের মাত্র ৪ ভাগ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতেই ৩৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। শহর ও গ্রামাঞ্চলের দুর্ঘটনাগুলো সাধারণত রাস্তার মোড়, পথচারী পারাপারে, বাস স্টপেজে, লেভেল ক্রাসিং, শিক্ষা/ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সিনেমা হল এলাকা, হাটবাজার, রাস্তার বাঁক, সেতু/কালভার্ট এলাকা, মিল/কারখানা এলাকায় ঘটে। এছাড়া, ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। আর চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭ শতাংশ। পরিবেশ-পরিস্থিতিসহ অন্য কারণে দুর্ঘটনার পরিমাণ মাত্র ১০ শতাংশ। বুয়েটের গবেষণা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার ৪৩ শতাংশই ঘটছে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মহাসড়কে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, নিয়ম ভেঙ্গে ওভারটেক করা এবং নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার চলাচল।



 

Show all comments
  • আশিক ২৭ মার্চ, ২০১৭, ১:১৫ এএম says : 0
    আর কত প্রাণ গেলে এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে?
    Total Reply(0) Reply
  • ২৭ মার্চ, ২০১৭, ৮:২৭ এএম says : 0
    আমি মনে করি,সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বেশী দায়ী,সড়ক গুলো এতো ভাঙ্গা আবার অদক্ষ ড্রাইভিং আইন গত বাধ্য বাধকতা এগুলো, মনে হয় দেশে সবাই রাজা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ