পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে শেষ মুহূর্তে ভোটের অঙ্ক আরো জটিল হচ্ছে। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুর মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে মিলছে এলোমেলো হিসাব।
আলোচিত দুই প্রার্থীর নেতা-কর্মীরা নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করলেও ভোটের অঙ্কের হিসাব নিয়ে সাধারণ মানুষরা বলছেন এবারের ভোটের অঙ্কের হিসাব আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মেয়র নির্বাচিত করার জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। জয়-পরাজয়ের প্রভাব স্থানীয় রাজনীতিতেও পড়বে। ভোটের যুদ্ধে জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে রয়েছে। কিন্তু জয়ের আশার মধ্যেও আশঙ্কা ভর করেছে বিএনপির পথচলায়। দলের নেতাকর্মীরা গত কয়েকদিন ধরে পুলিশ আতঙ্কে বাড়ি-ঘরে থাকছে না। সাক্কুর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কয়েকজনকে পুলিশ আটকও করেছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারণায় বাধার সম্মুখীন হচ্ছে সাক্কুর কর্মীরা। বিএনপির অভিযোগ নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তার করছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আর মাত্র তিনদিন বাকি। মাঠ পর্যায়ে প্রচারণার সুযোগ রয়েছে দুইদিন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা শনিবার কুমিল্লায় এসে কুসিক নির্বাচনকে ঘিরে যে কেঠোর বক্তব্য দিয়েছেন তােেত সাধারণ ভোটাররা স্বস্তি ফিরে পেলেও আতঙ্কে রয়েছে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর নেতা, কর্মী-সমর্থকরা। বিএনপি প্রার্থী সাক্কুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচন কমিশনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি শুরু থেকে বলে আসছেন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য। বিএনপির দাবি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের উৎসবমুখর পরিবেশকে নষ্ট করে দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের আচার-আচরণে অতিমাত্রার জোর-জবরদস্তি ফুটে ওঠছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে। ভোটাররা নির্বিঘেœ কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিরাপদে ঘরে ফিরে আসুক এমন পরিবেশ প্রত্যাশা করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও দলের নেতারা। এদিকে গত দুইদিন ধরে নগরীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সীমার পক্ষে দলের বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে মাঠে রয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী সাক্কুর প্রচারণা আগের চেয়ে কিছুটা কমে আসলেও দলের নেতারা বলছেন তারা মাঠ গুছিয়ে রেখেছেন। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে ভোটারের ব্যাপক সমাগম ঘটাতে তারা কৌশলী হয়ে ওঠেছেন। প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ কেন্দ্র দখলের কৌশল নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে বলেও বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন।
এদিকে ভোটের অঙ্কে নির্বাচনী হিসাব দিন দিন জটিল হয়ে ওঠছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সূত্র মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে ভোটের হিসাব-নিকাশ গতবারের চেয়েও জটিল। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সার্বিক মনিটরিং, ওয়ার্ডকেন্দ্রিক দায়িত্ব বন্টন এবং দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বয় শেষ পর্যন্ত অটুট থাকলে নৌকার বিজয় নিয়ে আশাবাদী আওয়ামী লীগ। দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনেকেই বলেন, সিটি নির্বাচনই শেষ নয়, পরবর্তীতে স্থানীয় রাজনীতির গতিপথও অনেকটা নির্ধারণ করে দেবে এবারের নির্বাচনের ফল। দলীয় প্রার্থী সীমা তার ক্লিন ইমেজের কারণে এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন। নির্বাচনকে ঘিরে জেলার নেতাদের মধ্যে যে সমন্বয়, ঐক্য গড়ে ওঠেছে তার বাস্তব প্রতিফলনের ওপরও নির্ভর করছে নৌকার জয়। কেননা সাধারণ ভোটারের বাইরে নেতাদের বলয়ে থাকা ভোটের অঙ্কের হিসাবটাও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে এ নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাদের কাছে এ হিসাবটা এখনো সহজ হয়ে ওঠেনি। কেননা কুমিল্লার নেতাদের ভেতরে বাইরে অন্তরে অন্তরে নৌকা ও সীমার মূল্যায়ন সমানে সমানে কিনা অনেকের মাঝে সংশয় কাজ করছে। তবে এব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সীমা মনে করছেন নৌকা এবং কুমিল্লার জনগণ এক ও অভিন্ন। কোনো ভোটের অঙ্কে নয়, নগরবাসীর গভীর ভালোবাসা এবং অকুন্ঠ সমর্থনেই তিনি জয়ী হবেন।
অন্যদিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর জন্য এ নির্বাচন কঠির চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে। স্থানীয় রাজনীতিতে আগ থেকেই প্রভাবশালী সাক্কু এবারে নির্বাচিত হলে কুমিল্লা বিএনপিতে এক নতুন ডাইমেনশন তৈরি হবে। কুমিল্লায় বিএনপি আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত হওয়ায় দলীয় প্রার্থী সাক্কুকে নিয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা এ নির্বাচনে সাক্কুর পরাজয়ের কোন কারণ দেখছেন না। ভোটের অঙ্কে বিএনপির সাথে শরিক হওয়া ২০ দলের ভোট সাক্কুকে যেমন এগিয়ে নেবে তেমনি তৃণমূলের সাধারণ মানুষের ভোট ধানের শীষের এ প্রার্থীর জন্য বড় ধরনের প্লাসপয়েন্ট বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা। তবে কেন্দ্রে সাক্কু সমর্থিত ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতি না ঘটলে ভোটের অঙ্ক পাটিগণিতের সরল অঙ্কের মতো দুর্বোধ্য হয়ে ওঠবে। আর ভোট অঙ্কের এমন হিসাব-নিকাশকে সামনে রেখেই কুসিক নির্বাচনে বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা ঠাÐা মাথায় এগুচ্ছেন। কেবল তাই নয়, নির্বাচনের এসময়ে নানারকম ঝামেলাও সামাল দিচ্ছেন নেতারা। বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতারা তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রচারণা নিয়ে কোন সংশয় নেই। তবে সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টির মহড়া শুরু হয়ে গেছে। এসব কঠোরভাবে বন্ধ করা না গেলে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটাতে হলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন এমন আহŸান জানান সাক্কু।
বাড়ি-ঘরে নেই সাক্কুর কর্মীরা
বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর কর্মী-সমর্থকদের বেশিরভাগই এখন রাতে ঘরে থাকছে না। কর্মঠ এসব কর্মীরা আর দিনের বেলায় প্রচারণায় অংশ নিলেও থাকছেন অনেকটা সাবধানে। কারণ পুলিশি আতঙ্ক এসব কর্মীদের ওপর ভর করেছে। গত কয়েকদিনে সাক্কুর একাধিক কর্মীর বাড়িতে সাদা পোশাকে পুলিশের লোকজন হানা দিয়েছে বলে বিএনপি থেকে অভিযোগ করা হয়। সাক্কু নিজেও জানান, তার কর্মীরা পুলিশের হাতে আটকের ভয়ে রাতে ঘরে থাকতে পারছে না। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রোমান হাসান নামের ধানের শীষের এক কর্মীকে ওই ওয়ার্ডের চানপুর এলাকা থেকে সাদা পোশাকে কোতয়ালি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। ওই রাতে অন্যান্য এলাকা থেকেও ধানের শীষের একাধিক কর্মীকে পুলিশ আটক করে। রোমান হাসানের নামে থানায় কোনো ধরনের মামলা, জিডি, অভিযোগ না থাকার পরও পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিষ্ণুপুর এলাকার একটি ঘটনার মামলায় সন্দেহজনক আসামী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে কোর্টে চালান দিয়েছে। নির্বাচনের সময়ে পুলিশের এ ধরনের ভূমিকা পক্ষপাতপুষ্ট। পুলিশ অহেতুক ধানের শীষের কর্মীদের আটক করছে, হয়রানী করছে। সাক্কু অভিযোগ করেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে তার কর্মীরা প্রচারণা চালাতে গিয়ে নৌকা প্রার্থীর লোকজনের হুমকির মুখে পড়ছে। প্রচারণায় রিতীমত বাধা দেয়া হচ্ছে। প্রচারণায় আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তার করছে। শনিবার বিকেলে ২১ নম্বর এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে তার প্রচারের মাইক, যানবাহন ভেঙে প্রচারণা কাজে নিয়োজিত কর্মীদের মারধর করা হয়েছে।
কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচারণা
সিটি করপোরেশনের সবকটি ওয়ার্ড মুখর করে রেখেছে কাউন্সিল প্রার্থীদের প্রচারণা। কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাইক, গণসংযোগ আর উঠোন বৈঠক ঘিরে বিরামহীন প্রচারণায় উৎসবমুখর হয়ে ওঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। এবারে সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৪জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৪০জন মহিলা নারী কাউন্সিলর প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ৯টি সংরক্ষিত আসনে এবারে গত নির্বাচনে জয়লাভ করা মহিলা কাউন্সিলরদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন ধরাশায়ী হবেন নতুনমুখের প্রার্থীর কাছে। অন্যদিকে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে গত নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়া অন্তত ২০ জন কাউন্সিলরের এবারে জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।