পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে শিগগির কাজ শুরু
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক কর্ণফুলী নদীতে ফের শুরু হচ্ছে ক্যাপিটাল ড্রেজিং। আইনি জটিলতা শেষ হয়েছে অনেক আগে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটও ইতোমধ্যে তাদের সমীক্ষা প্রতিবেদন দিয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে নতুন ডিপিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দরের এক অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন আগামী মাসে কাজ শুরু করা যাবে।
জানা গেছে, প্রকল্পটির ‘বন্দর ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ নাম পাল্টে এখন নতুন নাম হয়েছে ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং’। এ প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চরের প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা সমুদ্র সমতল থেকে চার মিটার গভীর করা হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা।
নিয়মিত ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি কয়েক বছর পর বন্দরে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা জরুরি। কিন্তু দীর্ঘদিন কর্ণফুলী নদীতে ড্রেজিং না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত নদীর প্রায় ২৫০ থেকে প্রায় ৩০০ মিটার পর্যন্ত চর জেগে উঠেছে। ভাটার সময় কর্ণফুলী নদীর চার-তৃতীয়াংশ পলি জমা চর দেখা যায়। আর কর্ণফুলী সেতুকে কেন্দ্র করে ভাটির দিকে চর জেগে উঠার হার সবচেয়ে বেশি। জেগে উঠা চর বেদখল হয়ে যাচ্ছে। মূল্যবান জমি হারাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর।
এছাড়া ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় লাইটার জাহাজের জেটি নির্মাণ করা হলেও পলি জমার কারণে তাও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে অকার্যকর হয়ে আছে লাইটারেজ জেটি। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার ভেড়ানোর জন্য কর্ণফুলী সেতুর কাছে একটি জেটি নির্মাণ করা হলেও চরের কারণে তা বন্ধ হয়ে আছে। পর্যটনের বিনোদনের জন্য নির্মাণ করা দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের আদলে গড়ে উঠা স্পটে রাখা হচ্ছে মাছ ধরার নৌকা।
দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের দাবি একটি রাজনৈতিক দাবিতে পরিণত হয়। জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বশেষ ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ হয় ১৯৯০ সালে। সেবার এ কাজ করে চায়না হারবার নামে একটি বিদেশি কোম্পানি। এর আগে ১৯৮১ সালে কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের কাজ করে হল্যান্ডের একটি কোম্পানি। বন্দর সংলগ্ন নদীর নাব্য ঠিক রাখতে সাধারণ ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি কয়েক বছর পরপর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কার্যক্রমও সম্পন্ন করা জরুরি হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছে না।
৯০ সালের পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের দাবি উঠে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১১ সালের ৫ জুলাই কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু হয়। ‘ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও ব্যাংক (নদীতীর) প্রটেকশন’ নামের ওই প্রকল্পের আওতায় বন্দরের দুই কিলোমিটার উজানে সদরঘাট জেটির ১০০ মিটার ভাটি থেকে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর ৫০০ মিটার উজান পর্যন্ত অংশে নদীর নাব্যতা ফেরাতে ৩৬ লাখ ঘনমিটার বালি/মাটি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণের কথা ছিল।
মালয়েশিয়ার মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন ২২৯ কোটি ৫৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬ টাকা সর্বনিম্ন দর দিয়ে প্রকল্পের কাজ পায়। ড্রেজিং ছাড়াও প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৬১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে তীর নির্মাণ, মেরিন ড্রাইভ তৈরি ও সদরঘাট এলাকায় ৪০০ মিটার লাইটারেজ জেটি নির্মাণের কথা ছিল। ড্রেজিং শেষ হলে সংশ্লিষ্ট নদী এলাকার গভীরতা চার মিটার ও নদীর সঙ্গে যুক্ত মূল দুই খাল রাজখালী ও চাক্তাইয়ের সম্মুখভাগের গভীরতা আরো বাড়ার কথা ছিল।
চুক্তি অনুযায়ী কাজ শুরুর ৬০০ দিন অর্থাৎ ২০১৩ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরবর্তীতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এদিকে ২০১৩ সালের আগস্টে কাজ অসমাপ্ত রেখেই চলে যায় যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় এজেন্ট। ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই চুক্তি বাতিল করে প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি হাইকোর্টে রিট করলে আদালত স্থগিতাদেশ দেয়। এর পর কর্ণফুলীতে আর ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে আরবিট্রেশনের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিসহ সকল জটিলতা কাটিয়ে এখন নতুন করে ড্রেজিংয়ের প্রকল্প নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
পলি জমে প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়া কর্ণফুলীর ওপর জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা বুয়েট তাদের সমীক্ষা রিপোর্ট জমা দেয় গত ডিসেম্বরে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে ডিপিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, বুয়েটের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার মাটি তুলতে খরচ হতে পারে ৩৭৩ টাকা। আর সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২৫০ মিটার চওড়া এলাকা থেকে ৪২ লাখ ঘনমিটার মাটি তুলতে হবে। এ মাটি উঠানোর পর এখানকার পানির গভীরতা হবে সমুদ্র সমতল থেকে ৪ মিটার। শুধু ড্রেজিংয়েই শেষ নয়, ড্রেজিং শেষ হওয়ার পর পরবর্তী তিন বছর তা মেইনটেনেন্সও করতে বলা হয়েছে রিপোর্টে।
ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন) যুগ্মসচিব মোঃ জাফর আলম ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার পর কাজ শুরু হবে। এ লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।