পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভ্যালু ওয়াক : চীনের জন্য এক বিরাট আন্তর্জাতিক বিজয় ও ভারতের জন্য এক বড় ধরনের পরাজয় হচ্ছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংযোগবিষয়ক এক প্রস্তাবে প্রথমবারের মতো চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বহু শত কোটি ডলারের উত্তরাধিকার প্রকল্পকে এক গেম-চেঞ্জার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় যা এশিয়ায় আঞ্চলিক সংযোগকে উন্নত করবে এবং এ অঞ্চলে অসংখ্য অর্থনৈতিক ও চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
চীন যখন দাবি করছে যে, বিআরআই পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও কিছুসংখ্যক ইউরোপীয় দেশসহ অন্যূন ১০০টি দেশের সমর্থন লাভ করেছে তখন এর অংশীদার হতে চীনের আমন্ত্রণ সত্তে¡ও ভারত এখন পর্যন্ত এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে চলেছে। বিআরআই এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরসহ (সিপিইসি) চীনের অন্যান্য আঞ্চলিক উন্নয়ন উদ্যোগ বিষয়ে ভারতের কতিপয় সমস্যা রয়েছে।
যদিও বিআরআই ও সিপিইসি এ অঞ্চলে সংযোগের তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন ঘটাবে এবং ভারতসহ সকল আঞ্চলিক খেলোয়াড়দের জন্য নয়া অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করবে, কিন্তু নয়াদিল্লি পাকিস্তানের সাথে কয়েক দশক ব্যাপী ভূখÐ বিরোধের কারণে শক্তভাবে এ প্রকল্প অনুমোদন করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। সিপিইসি কাশ্মীরের বিরোধপূর্ণ এলাকার মধ্য দিয়ে গেছে যে এলাকা পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে। সিপিইসি বা বিআরআইতে স্বাক্ষর করার অর্থ যে ভারত কাশ্মীরের উপর তার দাবি ছেড়ে দিয়েছে বা ন্যূনতম ভাবে এমন কিছু যা ভারত সরকারের অনেকে চিন্তা করে।
চীনের আরো একটি আন্তর্জাতিক বিজয়, ভারতের পরাজয়
নয়াগৃহীত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে বিআরআই বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সকল আঞ্চলিক খেলোয়াড়দের তাদের প্রচেষ্টা সংহত ও জোরদার করার আহŸান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদ আফগানিস্তান এবং সামগ্রিকভাবে এ অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা উন্নয়নের আহŸান জানিয়েছে।
চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত সিনহুয়া বার্তা সংস্থার খবর অনুযায়ী এটা করতে জাতিসংঘ প্রস্তাবে সিল্ক রোড ইকনোমিক বেল্ট ও বিআরআইসহ চীনের আঞ্চলিক উন্নয়ন উদ্যোগের উল্লেখ করেছে যা একটি অত্যাধুনিক বাণিজ্য ও অবকাঠামো নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এশিয়া , ইউরোপ ও আফ্রিকাকে যুক্ত করবে। আফগানিস্তানে জাতিসংঘ সাহায্য মিশনের ম্যান্ডেট এক বছর নবায়ন করে প্রস্তাবে মানব সমাজের জন্য ভবিষ্যত অংশীদারিত্বমূলক সমাজ সৃষ্টির জন্য আহবান জানানো হয়।
এই প্রথম জাতিসংঘ কোনো প্রস্তাবে চীনের নিজ উদ্যোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি সৃষ্টিতে বেইজিংয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানালো।
ভারতের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা গভীরতর হচ্ছে
নয়া দিল্লী এ পর্যন্ত চীনের আঞ্চলিক উদ্যোগগুলোর অংশীদার হওয়ার প্রতি বা এমনকি নিছক অনুমোদন দিতেও কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেনি। গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শংকর চীনের আঞ্চলিক উন্নয়ন উদ্যোগের ব্যাপারে তার দেশের সমস্যার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, চীনের সিপিইসি বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর এলাকার ভিতর দিয়ে যাওয়ায় ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টি হয়েছে।
আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করতে আরো আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের আহবানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ অঞ্চলে ভারতকে আরো নিঃসঙ্গ করে ফেলতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত তার সবচেয়ে বিশ^স্ত মিত্র রাশিয়ার সমর্থন হারিয়েছে। রাশিয়া ভারতের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে মনে হয় এবং পরিবর্তে এ অঞ্চলে ভারতের প্রধান দু’শত্রæ পাকিস্তান ও চীনের সাথে সম্পর্ক উষ্ণ করতে শুরু করেছে। এদিকে ভারত আর মার্কিন সমর্থনের উপর নির্ভর করতে পারছে না। উল্লেখ্য, ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরদার মস্কোকে এ অঞ্চলে নতুন মিত্র সন্ধান শুরু করতে উদ্বুদ্ধ করে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে অনেক বেশী কিছু আছে। ট্রাম্প এখনো তার দক্ষিণ এশিয়া নীতি স্থির করেননি বা নয়া দিল্লীর সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মত উদ্যোগ অব্যাহত রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেননি। কেউ বলতেই পারেন যে ভারত আর কখনোই এখনকার মত বিচ্ছিন্ন ছিল না।
ভারত চীনের প্রভাব বাড়তে দেখছে
চীনের বেলট অ্যান্ড রোড ফোরাম আয়োজনের কয়েক সপ্তাহ আগে জাতিসংঘের এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হল যার লক্ষ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা। বেইজিং মে মাসে প্রথমবারের মত বিআরআই শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজ করবে। এতে ২০ জনেরও বেশী সরকারী নেতা ও ৫০টিরও বেশী আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত মিডিয়ার মতে, প্রকৃতপক্ষে ভারত যদি বিআরআইতে যোগ না দেয়, তাকে ক্রমবর্ধমানভাবে চীনের আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধি দেখতে হবে যখন সে কিছুই করতে পারবে না। ২০ মার্চ চীনের গেøাবাল টাইমস এক নিবন্ধে বলে যে নয়া দিল্লী চীনের আঞ্চলিক উন্নয়ন উদ্যোগের গতি রোধ করতে পারবে না। ভারত নিজেকে আরো বিচ্ছিন্ন করার ঝুঁকি নিচ্ছে।
পত্রিকাটি বলে, ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবোর) উদ্যোগ যখন বিশ^ সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন লাভ করছে এমন সময় ভারত যদি এ থেকে নিজেকে বাইরে রাখতে চায় তাহলে তাকে শুধু চীনের আন্তর্জাতিক খ্যাতি বৃদ্ধি তাকিয়ে দেখতে হবে।
চীনা সংবাদপত্র আরো বলে যে বিআরআই ও অন্যান্য চীনা উদ্যোগ বাস্তবায়নের পর এ অঞ্চলে যে ব্যাপক বিনিয়োগ সুযোগ প্রবাহিত হবে ভারত তা থেকে পরিত্যক্ত হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছে। সংবাদপত্র উল্লেখ করে যে বিআরআই ও সিপিইসি যেখানে সম্পূর্ণ রূপে অর্থনৈতিক সেখানে চীন ভারতের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করছে বলে নয়াদিল্লীর আশংকা তাকে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি প্রকল্পগুলোর সুফল লাভ থেকে সরিয়ে রাখছে।
গেøাবাল টাইমস বলেছে যে স্বাভাবিক বাণিজ্যিক বিনিয়োগ ও ভারতের সার্বভৌমত্ব লংঘনকর কর্মকান্ডের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে জানা প্রয়োজন।
বিচ্ছিন্নতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ভারত কি বিআরআইতে যোগ দেবে?
উচ্চাকাক্সক্ষী সংযোগ প্রকল্পে যোগদানের জন্য ভারতের প্রতি চীনা নেতৃত্বের আহবানের প্রতিধ্বনি করে সংবাদপত্র বলে যে ভারত আসলে বিআরআই-র কেন্দ্রীয় ভরকে তার দিকে হেলাতে পারে, আর তা শুধু এ প্রকল্পে যোগদানের মাধ্যমেই সম্ভব।
গেøাবাল টাইমস উল্লেখ করে যে অবকাঠামোর মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেইজিং ও নয়াদিল্লির মধ্যে সহযোগিতার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিআরআই-র অংশ হওয়া বেইজিং-নয়াদিল্লি অর্থনৈতিক সম্পর্ককেই শুধু লাভবান করবে না; সামগ্রিকভাবে গোটা অঞ্চলকেই লাভবান করবে।
চীনা পত্রিকার নিবন্ধে এও বলা হয় যে, বিআরআইতে যোগদান করা থেকে বিরত রাখতে অন্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এতে যোগ দেয়াই নয়াদিল্লির জন্য ভালো হবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত নতুন প্রস্তাবের ব্যাপারে ভারত এখনো যখন কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি তখন বিশেষজ্ঞরা বিতর্ক করছেন যে, ভারত বিআরআই বিষয়ে তার অবস্থান পরিবর্তন করবে কিনা এবং এতে তার যোগ দেয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। তা যদি করা হয় তার অর্থ কি এই দাঁড়ায় যে এ অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া থেকে রক্ষা পেতে নয়াদিল্লি কাশ্মীরের উপর তার দাবি ছেড়ে দিচ্ছে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।