পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এখন আমরা জানি যে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে হামলাকারী ব্যক্তি খালিদ মাসুদের (৫২) অপরাধ সংঘটিত করার কারণে কয়েকবার দন্ড হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে তিনি প্রথম ফৌজদারি জেল খাটেন। সর্বশষ জেল খাটেন ২০০৩ সালে একজনকে ছুরিকাঘাত করে। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার কোনো ঘটনাই বিস্ময়কর মনে করা উচিত নয়।
হামলাকারীরা সম্ভবত ইসলামী উগ্রপন্থী মতাদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। এ মাসের গোড়ার দিকে প্যারিসের ওরলি বিমানবন্দরে যে ব্যক্তি পুলিশের কাছ থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র কেড়ে নিয়েছিল তার রক্তে কোকেইনের উপস্থিতি মিলেছিল এবং তার ফৌজদারি অপরাধের দীর্ঘ রেকর্ড ছিল। অন্যদিকে গত বছরের জুলাইতে ফ্রান্সের নিসে যে ৮৬ জনকে হত্যা করে তার ভীষণ মদ্যপান, ক্যানাবিস ব্যবহার ও নৈমিত্তিক সেক্সের ইতিহাস ছিল। ২০১৫ সালের নভেম্বরে একটি নেটওয়ার্কের কয়েকজন প্রধান ব্যক্তি প্যারিসে হামলা চালিয়ে ১৪০ জনকে হত্যা করে। তারা মাদক ও অস্ত্র বিক্রির সাথে জড়িত ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যের প্রায় প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ হামলাতেই জড়িতরা সাধারণ বা গুরুতর অপরাধে দÐিত হয়েছিল।
অপরাধ কর্ম ও ইসলামী উগ্রবাদের মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। ২০১৩ সালে দক্ষিণ পূর্ব লন্ডনে অফ-ডিউটি সৈনিক লি রিগবিকে হত্যাকারী একটি অপরাধী চক্রের তরুণ অপরাধী হিসেবে জেল খেটেছিল। ২০০১ সালে ট্রান্স আটলান্টিকের এক ফ্লাইটে জুতার বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টাকারী রিচার্ড রিড ছিল কিশোর অপরাধী।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অপরাধ কর্মের পশ্চাৎইতিহাসসহ ইসলামী জঙ্গিদের অনুপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর একটি কারণ হচ্ছে ২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ায় খেলাফত প্রতিষ্ঠাকারী ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাদের সদস্যদের অ্যাডভেঞ্চার, পারস্পরিক আস্থা, সহিংসতা, উত্তেজনা, তুলনামূলক আরাম, নগদ পুরস্কার এবং যৌন সুবিধা ভোগেরও সুযোগ দেয় যা আল কায়েদার মত পূর্ববর্তী জঙ্গি গ্রæপগুলোর সংযম ও কৃচ্ছ্রতার নাটকীয় রকম বিপরীত।
ডর্টমুন্ড বা লিয়ন বা শেফিল্ডের একজন তরুণ এভাবে অনেক কিছু পাওয়ার আশা করতে পারে যা দেশে একটি অপরাধচক্রের কাছ থেকে পেতে পারত। সহিংসতা এখন আর অন্যায় নয়, তা প্রতিরোধ এবং এমনকি মুক্তি। উগ্রপন্থীদের ধর্মীয় বিষয়ের বাছাইকৃত শিক্ষা সাবেক অপরাধীদের জিহাদের প্রতি অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে সাবেক অপরাধের দায় থেকে নিজেদের মুক্ত হিসেবে দেখতে উৎসাহিত করে।
লল্ডন হামলাকারী সম্পর্কে একটি বিস্ময়কর ব্যাপার যে অধিকাংশ জঙ্গিদের বয়সই বয়স ২৩ থেকে ২৮-এর মধ্যে। কিছু আবার কিশোর। কোনো প্রমাণ নেই যে, এত বয়স্ক ব্যক্তি মাসুদ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অপরাধকর্মে জড়িত ছিল। বস্তুত এক দশক বা আরো কিছু সময় আগের তার মত অস্থিতিশীল, জোরালো, পানশালায় গমনকারী ব্যক্তি হঠাৎ করেই প্রতিবেশীদের ভাষ্য অনুযায়ী সম্প্রতি একেবারে উল্টো ধর্মপ্রাণ ও শান্ত জীবনযাত্রার অনুসারী হয়ে পড়ে।
যতদূর মনে হয় মাসুদ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আমরা সঠিক জানি না যে ২০০০ সালে সম্ভবত তাকে আড্রিয়ান এলমস নামে ডাকা হত এবং দু’বছরের জন্য তিনি জেল খাটেন।
আরেকটি জীবন-পরিবর্তনকারী অভিজ্ঞতা যেমন বন্দিত্ব, এক নতুন সম্পর্ক, চাকুরি বা বিদেশযাত্রার প্রেক্ষাপটে ধর্মান্তর সংঘটিত হয়ে থাকে। ২০০৪ সালে মাসুদ সম্ভবত এক মুসলিম মহিলাকে বিয়ে করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তিনি সউদি আরবে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। সুতরাং মনে হয় এ হামলার ৮ থেকে ১৩ বছর আগে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
পাশ্চাত্যে হামলায় জড়িতদের মধ্যে বহুসংখ্যক জঙ্গিই ইসলাম গ্রহণকারী। যুক্তরাজ্যে ২০০১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্বদেশী জিহাদিদের ১২ শতাংশই ছিল ধর্মান্তরিত মুসলমান। তবে মোট মুসলিম জনসংখ্যার ৪ শতাংশেরও কম ধর্মান্তরিত মুসলমান।
এ ব্যাপারে পদ্ধতিগত গবেষণা কমই হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ঘটনায়ই আগে ধর্মান্তরিতদের উগ্রপন্থায় আগ্রহী হওয়ার নজির নেই। মাসুদ সম্ভবত ব্যক্তিগত আগ্রহেই সামাজিক মাধ্যম, উগ্রপন্থী ওয়েবসাইটগুলো এবং সমমনাদের অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক, সে সাথে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘটিত ঘটনা বা তার ব্যক্তি জীবনের ঘুরপাক খাওয়ার কারণে উগ্রপন্থার সাথে যুক্ত হন। কাউকে হত্যা বা শহীদ হওয়ার সহিংসতায় সম্পৃক্ত হওয়ার প্রকৃত সিদ্ধান্ত তিনি নেন নীরবে ও অতি সম্প্রতি।
এই আবর্তপথ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সন্ত্রাসের সাথে ক্লান্তিকরভাবে জড়িয়ে গেছে। স্কুল ফুটবল টিমের সদস্য হিসেবে প্রকাশিত মাসুদের একটি ছবি বিস্ময়ের সৃষ্টি করে যে একটি গাড়ি ও ছুরিসহ ওয়েস্টমিনস্টারে নিহত ব্যক্তিটির চেহারা এমন সাদামাটা হতে পারে। কিন্তু যে কোনো ভুল অবস্থানেই বিস্ময় সংঘটিত হতে পারে। অধিকংশ লোকের মত অধিকাংশ সন্ত্রাসী যে কোনো কিছু কিন্তু ব্যতিক্রমী হতে পারে। সামগ্রিকভাবে খুনীরা সাধারণ মানুষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।