Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দলটির প্রশ্ন কার স্বার্থে প্রতিরক্ষা চুক্তি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগুন রহস্যজনক বিএনপি

| প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রিজার্ভ চুরির ঘটনার একবছর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগুন লাগার ঘটনা রহস্যজনক বলে অভিহিত করেছে বিএনপি। প্রতিরক্ষা চুক্তি প্রসঙ্গে দলটির নেতারা প্রশ্ন রেখে বলেছেন, কার স্বার্থে প্রতিরক্ষা চুক্তি? একটা স্বাধীন দেশের সাথে একটি স্বাধীন দেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে না। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ড. আব্দুুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী পৃথক আলোচনা সভায় প্রশ্ন তুলেছেন, কিভাবে সংরক্ষিত এলাকায় অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে।
ড. আব্দুুল মঈন খান বলেন, ৩২ তলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১৩/১৪ তলায় বৈদেশিক বিভাগ। সেখানে কেনো আগুন লাগলো তা রহস্যজনক। এর আগে এই ব্যাংকের রিজার্ভ শাখা থেকে অর্থলোপাট হয়েছিলো ছুটির দিনে। এবারও যে আগুনের ঘটনাটি ঘটেছে তাও ছুটির দিনেই হয়েছে। এই দুইটি ঘটনাই ছুটির দিনে ঘটলো- এটা রহস্যজনক।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন লেগেছে, প্রশ্নটা উঠা স্বাভাবিক। এর কারণ কী? আমি জানি না। এটাই জনমনে প্রশ্নœ, কেনো এই আগুন ?
গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২৮ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের ১৪ তলার কক্ষে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ৩৪ মিনিটে তা নিয়ন্ত্রণে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের ১৪ তলায় বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০৮ কোটি টাকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করা হয় যা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত ছিলো। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বাংলাদেশ একাউন্ট থেকে চুরি হওয়া ১০০ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের জুয়ার বাজারে পাওয়া গেছে। এই ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড.আতিয়ার রহমান পদত্যাগ করেন। ঘটনার তদন্তে সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সর্বোচ্চ কমিটি করা হলেও তার তদন্ত রিপোর্ট আজো প্রকাশিত হয়নি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বাংলাদেশ কৃষক দলের উদ্যোগে এই আলোচনা সভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এই সময়ে আগুন লাগার বিষয়টি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভও চুরি হয়ে যায়। ওই রিজার্ভ চুরি হওয়ার পর দুই মাসেও ঘটনাটি কেউ জানালো না। দুই মাস পর সেটা আসলো ফিলিপিনসের একটি নিউজ পেপার থেকে।
রিজার্ভ চুরির এই ঘটনা তদন্ত করা হয়েছে, যার তদন্ত রিপোর্ট আজো দেয়া হচ্ছে না। এটা তাদের ভেতর থেকে কাজটা হয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকও বলেছে, এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতর থেকে কাজটা হয়েছে। যে কারণে তদন্ত রিপোর্ট দিচ্ছে না। শুধুমাত্র গভর্ণরের চাকরি খেয়ে এতো বড় ঘটনা চাপা দিতে চাচ্ছে। একইভাবে শেয়ার বাজারে অর্থ লোপাট হলো, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, একটি পরিবার, একটি ব্যক্তি নিয়ে ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আমির খসরু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর নিয়ে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তিস্তা নদীর চুক্তি হচ্ছে না। আমাদের চাহিদা তিস্তাসহ ৫৪টি নদীর পানি নিয়ে। আমাদের যেখানে চাহিদা নেই, সেটা কার চাহিদার জন্য উনার (শেখ হাসিনা) ভারত সফর। কিসের জন্য তিনি সেখানে যাচ্ছেন আমরা জানি না, ভারতের গণমাধ্যম থেকে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা বলতে চাই, এই চুক্তি (প্রতিরক্ষা চুক্তি) নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। এই চুক্তি যদি হয়, এটা পুরোপুরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হবে। আমরা বলতে চাই, আপনি হয়ত চুক্তি সই করতে পারেন, কিন্তু এই চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই প্রতিরক্ষা চুক্তি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এই স্পর্শকাতর বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কোনো এখতিয়ার নেই। ভারত আধিপত্যবাদী আগ্রাসন শক্তি। তাদের সাথে যদি চুক্তি করা হয়, সেটা হবে স্বাধীনতা বিপন্ন করার চুক্তি, ক্রীতদাস হওয়ার চুক্তি। একটা স্বাধীন দেশের সাথে একটি স্বাধীন দেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে না।
কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, কৃষক দলের সহ-সভাপতি এম এ তাহের, নাজিম উদ্দিন, তকদির হোসেন মো. জসিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভা কক্ষে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আলোচনা সভায় ড. মঈন খান ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয় নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় দেখলাম, প্রতিরক্ষা চুক্তি ভারত চাচ্ছে, অন্য কেউ চাচ্ছে না। আমাদের চারিদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারত। অন্যকোনো দেশ নেই। তাহলে কেনো এই চুক্তি, কার স্বার্থে এই চুক্তি- এটা আজ আমাদের মানুষের কাছে প্রশ্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে অগ্নিকাÐ পরিকল্পিত Ñরিজভী
বাংলাদেশ ব্যাংকে অগ্নিকাÐের ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র অভিহিত করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, এই ঘটনার সাথে ক্ষমতাসীনরা জড়িত। তিনি বলেন, একেরপর এক অঘটন নাটক কারণ দৃষ্টি ওদিকে দাও, দৃষ্টি দিল্লীর দিকে দিও না, দৃষ্টি হিন্দুস্থানের দিকে দিও না। দৃষ্টি জঙ্গি জঙ্গি নিয়ে থাকো। গতকাল শুক্রবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী আহম্মেদ বলেন, আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৪ তলা, ১৩ তলা, ১২ তলায় আগুন ধরে গেলো। বাহ! যেখানে ফরেন রেমিটেন্স, যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ব্যাপার, ঠিক ওই জায়গায় আগুন ধরে গেলো। যে তলাতে আমাদের পলিসি এবং নীতি, যেটা ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার জরুরী জায়গা সেখানে আগুন ধরে গেলো।
এটা কী খামোখা আগুন ধরেছে, আকস্মিকভাবে আগুন ধরেছে, আপনারা তো অনেকে কথা বলেন, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট। এগুলো কিছুই না। সরকারই জড়িত, শাসকদলই জড়িত।
এক বছর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, তারা যে ৮শ’ কোটি টাকা ফিলিপাইন আর দিতে চাইছে নাÑ খবরের কাগজে দেখুন, তারা এখন অনিহা প্রকাশ করছে। তারা কাগজপত্র, এই ধরনের বিভিন্ন ডকুমেন্টসগুলোকে পুড়িয়ে দিয়ে ছাই করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ১৩/১৪ তলায় আগুন লাগানো হয়েছে।
রিজভী বলেন, না হলে গুরুত্বপূর্ণ পলিসি ও নীতি আগুন ধরবে কেনো, পুড়ে যাবে কেনো। এটা শুধু রহস্যজনক নয়, এটা অত্যন্ত পরিকল্পিত ক্ষমতাসীনদের একটি ষড়যন্ত্র।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২৮ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের ১৪ তলার কক্ষে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ৩৪ মিনিটে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের ১৪ তলায় বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে ‘১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে সরিয়ে এইচএম এরশাদের ক্ষমতা দখলের কালো দিবস’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রতিরক্ষা চুক্তির সময়, হঠাৎ করে কয়েক মাসের বিরাম। প্রধানমন্ত্রী গর্ব করে বলেন, উন্নয়ন করেছে, এই করেছি, সেই করেছি, জঙ্গিবাদ দমন করেছি। আবার এখন জঙ্গিবাদ কোন গর্তের ভেতর থেকে একেবারে বিষাক্ত সাপের মতো ফণা দিয়ে উঠলো। আপনার চট্টগ্রাম শেষ না হতেই ঢাকার আশকোনার নাটক, এটা শেষ না হতে খিলগাঁও-এর নাটক। এর দুইদিন না যেতে না আজকে সিলেটে মহিলা জঙ্গিদেরকে বলা হচ্ছে, সোয়াত ঢাকা থেকে গেছে, ঘিরে রেখেছে।
কারণ দৃষ্টি ওদিকে দাও, দৃষ্টি দিল্লীর দিকে দিও না, দৃষ্টি হিন্দুস্থানের দিকে দিও না। দৃষ্টি জঙ্গি জঙ্গি নিয়ে থাকো। আমরা এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভারতের অঙ্গীভূত করবো, বাংলাদেশকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভারতের অধীনস্থ করবো। এটা অধীনস্থ করতে গিয়ে শেখ হাসিনার সাধের সিংহাসন, তার ময়ুরের সিংহাসন টিকে রাখতে পারবেন না। কারণ তিনি জনগণকে তালাক দিয়েছেন, তিনি মানুষের ইচ্ছাকে তালাক দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তার চিরকালের বন্ধু হিন্দুস্থানকে তালাক দেননি, তালাক দিতে পারবেন না। তার ক্ষমতার সব চাবিকাঠি দিল্লীর সাউথ বøকে। ওই চাবি তারা (ভারত) যখন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ঘুরাবেন, তখন পুতুলের মতো আওয়ামী সরকার নাচবে। এর বাইরে আর কিছুই নাই।
সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ‘র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৫ মার্চ, ২০১৭, ১০:৪৭ পিএম says : 0
    এখানে যেসব কথা এসেছে তার মধ্যে কিন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, শেয়ার মার্কেট নিয়ে কথা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য এসব প্রশ্নে জবাব অবশ্যই সরকারের দেয়া দরকার। তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কথা বলার কতটা অধিকার বিএনপির নেতারা রাখেন সেটা কিন্ত একটা বিরাট প্রশ্ন। ................................................................আল্লাহ্ আপনাদেরকে সঠিক পথে এনে দেশের জন্য ভাল কাজ করার এবং জনগণের কথা বুঝার ক্ষমতা দিন। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ