পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ময়মনসিংহ অফিস ও ভালুকা উপজেলা সংবাদদাতা : ভোর রাতেই সড়কপথে লাশের মিছিল। হঠাৎ মৃত্যুপুরী হয়ে উঠলো ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা। সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে একই পরিবারের ৫ জনসহ ১০ জনের নিহতের ঘটনায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কচিমুখ থেকে শুরু করে হত দরিদ্র পরিবারের যাত্রীদের এমন অকাল ও করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ।
ভয়াবহ এ সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে এতো তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ায় শুক্রবার ভোর থেকেই ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের মেহেরবাড়ি এলাকায় শত শত উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত মানুষের ঢল নামে। ঘুমকে হার মানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি স্বেচ্ছায় হতাহতদের উদ্ধারে পাশে দাঁড়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা।
তবে নিজেদের চোখের সামনেই ছটফট করে মানুষের মৃত্যু নিজের অজান্তেই অশ্রæ গড়িয়েছে চোখে। তাদের চোখে-মুখেও যেন ছিল স্বজন হারানোর বিমর্ষ ছাপ।
ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শহীদুর রহমান জানান, ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের চারলেনের কাজ চলায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ঢাকা থেকে জামালপুরগামী সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকটি শুক্রবার ভোররাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯ জনের লাশ উদ্ধার করে। গুরুতর আহত ৩ জনকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তির পর আরো একজন মারা যান।
পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, নিহতরা হলেন- তারাকান্দা উপজেলার একই পরিবারের ৫ জন ও শেরপুরের ৯ জন। এর মধ্যে তারাকান্দার আজিজুল ইসলাম (৪০), তার স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৩৫), তিন সন্তান মেহেদী হাসান (১১), নয়ন (৯) ও সিজান (৩)।
আর শেরপুরের চারজন হলেন- শেরপুরের সিরাজুল ইসলাম (২৮), শাহজাহান হোসেন (৪০), আব্দুল কদ্দুস (৩৫), মো: সলিম (২৮)। বাকী একজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
দুর্ঘটনাস্থল মেহেরবাড়ি এলাকা থেকে মাত্র ২শ’ গজ দূরে বাড়ি শ্রমিক নেতা হানিফ খানের (৪৫)। ভোর রাতে তিনি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় আচমকা বিকটশব্দে তিনি বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠেন। ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে দেখেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি উল্টে পড়ে গেছে।
এরপর ঘটনাস্থলে ছুটে এসে দেখেন সিমেন্টের বস্তার নিচে চাপা পড়েছেন অনেকেই। বেশ কয়েকজনের গোঙানির শব্দ পেয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো দুই কী তিনজন মানুষ হবেন। এরপর আরো অনেক মানুষকে চাপা পড়তে দেখে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই।
এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একে একে ৯ জনের লাশ উদ্ধার করে। আমার জীবনে এক সঙ্গে এতো লাশ কখনো দেখিনি। এতোগুলো প্রাণের অকাল মৃত্যুতে মুহূর্তেই গোটা এলাকায় শোকের স্তব্ধতা নেমে আসে।
তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর পরই চোখের পলকে চালক ও সহকারী চম্পট দেন। তবে চালক বা সহকারী পালিয়ে যাবার বিষয়ে নিশ্চিত করে কোন তথ্য দিতে পারেননি ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ।
এ দুর্ঘটনার খবর পেয়েই দ্রæত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় মেহেরবাড়ি এলাকার চঞ্চল চৌকিদার (৪২)। তিনি জানান, মহাসড়কের দুর্ঘটনার পয়েন্টটিতে গর্ত ছিল। কিন্তু ব্যারিকেড ছিল না। রাস্তা মেরামত কাজ চলছে এমন সতর্কবাণীও ছিল না। ফলে ভুল পথে গাড়ি গর্তে গিয়ে উল্টে পড়ে।
তবে তিনি এজন্য চালকের বেপরোয়া মনোভাবকেও দায়ী করেন। তার ভাষ্যে- চালক ঢাকা থেকে ময়মনসিংহমুখী লেনে গাড়ি না চালিয়ে বিপরীতমুখী লেনে ছুটেছেন। তার ভুলেই মুহূর্তেই ১০ জনের প্রাণ ঝরে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ট্রাকে থাকা সিমেন্টের বস্তার ওপরে বসে ময়মনসিংহের তারাকান্দা ও শেরপুরের হতদরিদ্র যাত্রীরা বাড়ি ফিরছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।