Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নয়া শত্রুকে রুখতে পুরনোকে মিত্র বানাতে প্রস্তুত মমতা

| প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর প্রশ্নে এখনও নিজের কঠোর অবস্থানে অটল রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে উত্তর প্রদেশে ৩শ’রও বেশি আসনে জিতে বাংলার ঘাড়ে শ্বাস ছাড়তে উদ্যত বিজেপির মোকাবিলায় মহাজোট হলে তাতে যোগ দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার এবিপি আনন্দ সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলা’র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব কথা বলেছেন। পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার পর কিছু করার থাকলে বাংলাদেশের জন্য করবেন বলে তিনি জানান। তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্র সরকার তার সঙ্গে কোনও আলোচনা করছে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে (৭-১০ এপ্রিল) ভারতে সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে তিস্তা চুক্তিতে সায় দেবেন কিনা জানতে চাইলে মমতা এবিপি আনন্দকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য যা করার করবো, তবে বাংলার স্বার্থ বাঁচিয়ে।’
ভারতের কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘রাজ্যের স্বার্থে আমি যা করার তাই করবো। ওরা আমাদের না জানিয়ে নিজেরা ইচ্ছামতো করে, রাজ্যকে ওরা জানানোর প্রয়োজন মনে করে না। আমার সঙ্গে ওই বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব ভালো, রাজনৈতিক সম্পর্কও ভালো। যদি ভালো না হতো তাহলে আমরা কীভাবে ছিটমহল চুক্তি করে দিলাম, যা ৬৬ বছরে হয়নি।’
মমতা আরও বলেন, ‘আমি যেহেতু এই জায়গাটাতে আছি মানুষতো আমাকেই ধরবে। আমি মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না, বেঈমানি করতে পারি না বাংলার স্বার্থে। কিন্তু যেখানে আমরা পারবো এবং দু’দেশেরই ভালো হবে সেটা আমি করবো।’
কেন্দ্রীয় সরকারকে ইঙ্গিত করে মমতা বলেন, ‘তোমরা সবকিছু প্রস্তুত করে যদি তাতে স্ট্যাম্প মারতে বলো তাহলে আমি দুঃখিত। আমাকে রাজ্যের স্বার্থ দেখতে হবে, আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। রাজ্যকে বাঁচিয়ে আমি বাংলাদেশকে যতটা সাহায্য করা যায় তা করবো।’
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়ের উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। প্রায় চারদশক ধরে তিস্তা পানিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে বাংলাদেশ। ২০১১ সালে ভারত এ চুক্তি করতে সম্মত হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের চরম বিরোধিতার কারণে এ চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে একাধিকবার ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেওয়ার পরও এ চুক্তি কবে হতে পারে, তা বলতে পারছে না ভারত। এ চুক্তির মূল বৈশিষ্ট্য হলো- বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন ৫৪ নদীর ক্ষেত্রে তিস্তা চুক্তির খসড়া ব্যবহার করা যাবে।
ওরা বাংলাকে টার্গেট করলে আমি দিল্লিকে
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদি একাই তিনশো প্লাস। এবার কি তাদের টার্গেট বাংলা? এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যখন জল্পনা তুঙ্গে, তখন বিজেপির দিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবিপি আনন্দকে বল্লেন, বিজেপি ইউপিতে জিতেছে বলে সারা ভারতে জিতবে এটা হবে না। ওরা বাংলাকে টার্গেট করলে আমি দিল্লিকে টার্গেট করব। এটা চ্যালেঞ্জ, চ্যালেঞ্জ, চ্যালেঞ্জ।
২০১৯’এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে রুখতে মহাজোট হলে তিনি যে আছেন, তা আগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন একধাপ এগিয়ে তিনি জল্পনা আরও উস্কে দিলেন। বললেন, ভোট ভাগাভাগি করা উচিত নয়। যেখানে যে স্ট্রং, সেখানে তাকে সাপোর্ট করা উচিত। এসপি-বিএসপি হাফ হাফ সিটে লড়লেও অনেক সিট পেয়ে পেয়ে যাবে, না হলে পাবে না।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে উত্তরপ্রদেশে একাই ট্রিপল সেঞ্চুরি, তাতে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে অ্যাডভান্টেজ বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। বলেন, উত্তরপ্রদেশে একতরফা জিতেছে। বিরোধীরা লড়াই করতে পারেনি। উত্তরপ্রদেশে ফুল চেঞ্জ হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে তিনি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা-রাজীব গান্ধী থেকে শুরু করে রাজ্যের বাম আমলের কথাও টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ইন্দিরা ৭৭-এ হেরেছিল। ১৯৮০ সালে ফিরে এসেছিল। রাজীব ১৯৮৯-এ হেরেছিল, ১৯৯১ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল। বুদ্ধদেব ২৩৫ নিয়ে ২০০৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু ২০০৭ থেকে হাওয়া অন্যরকম। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এখনও অনেক সময় বাকি দেখুন না কী হয়। যোগী আদিত্যনাথ বলতেই পারেন, মোদী কেন, আমিও প্রধানমন্ত্রী হতে পারি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এবার উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি এবং মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি হাত মেলালে অন্যরকম ফল হতে পারত। এই সূত্র ধরেই তৃণমূলনেত্রীর স্পষ্ট বার্তা, বিজেপিকে রুখতে বিজেপি বিরোধীদের একজোট হতে হবে। যে যেখানে শক্তিশালী, সেখানে তাকে সমর্থন। বুঝিয়ে দিলেন, এটাই তাঁর ফর্মুলা।

 



 

Show all comments
  • এস, আনোয়ার ২৫ মার্চ, ২০১৭, ৩:০৮ পিএম says : 0
    পাটা আর পুতার পাতানো ঘষাঘষিতে মরিচের সর্বনাশ সাধনের ফন্দি আরকি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ