Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাক্কুর ইশতেহারে শান্তি সমৃদ্ধি ও বিশ্বমানের নগরী গড়ার অঙ্গীকার

| প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : পরিকল্পিত উন্নয়ন, সবার জন্য সমান অধিকার, নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা বিধান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সামাজিক অনাচারমুক্ত এবং মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত শান্তি-সম্প্রীতি সমৃদ্ধির বিশ্বমানের নগরী গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল তিনটায় নগরীর ঝাউতলা সড়কের ধর্মসাগর পাড়ে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে তিনি তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী পানিবদ্ধতা, যানজট নিরসন এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও তরুণ-যুবকদের কর্মসংস্থান, সংস্কৃতি-বিনোদন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বেশক’টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ২৭টি প্রতিশ্রæতির ইশতেহারে নগরবাসীর ওপর করের বোঝা চাপিয়ে না দেয়ার কথাও জানানো হয়। ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক, কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, সঞ্জিব চৌধুরী, মনিরুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ২০দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জামায়াতের কর্মপরিপরিষদ সদস্য কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সালাহ উদ্দিন ভূইয়া শিশির প্রমুখ।
বাস্তবতার নিরিখে নগর উন্নয়নের প্রতিশ্রæতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে সিটির সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, গত পাঁচ বছর নগরীতে ৪শ’ ৩১ কোটি ২৭ লাখ টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু চলমান থাকার বিষয়টি সন্তোষজনক হওয়ায় আগামী বছরগুলোতে সিটি করপোরেশনের জন্য সরকারি ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। গত পাঁচ বছরে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয়ের মূলখাত হোল্ডিংট্যাক্স এক টাকাও বৃদ্ধি করা হয়নি। বরং ট্যাক্স দিতে অক্ষম নাগরিকদের টাকার পরিমাণ কমিয়ে ট্যাক্স পরিশোধের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আগামীতেও ট্যাক্স বাড়বেনা বলে ইশতেহারে প্রতিশ্রæতি দেন বিএনপির প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। পানিবদ্ধতা ও যানজট অনেকাংশে কমিয়ে এনেছেন দাবী করে ইশতেহারে মেয়র সাক্কু বলেন, পুরনো শহর কুমিল্লা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠার কারণে পানিবদ্ধতা ও যানজট সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিলুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়েও তিনি এসমস্যা সমাধানে কাজ করেছেন। সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এ দুটি খাতকে তিনি বেশি প্রাধান্য দেন। পানিবদ্ধতা নিরসনে তিনি নগরীর পার্শ্ববর্তী খালগুলো সংস্কার করেন। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী পানিবদ্ধতা ও যানজট নিরসনেও কাজ শুরু করেন। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে এ দুটি সমস্যার সমাধানের সুফল নগরবাসী ভোগ করতে পারবে।
ইশতেহারে শিক্ষাক্ষেত্রে কুমিল্লার অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে সাক্কু বলেন, নগরীর বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়েছে। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। সাক্কু বলেন, তাঁর দায়িত্বকালীন সময়ে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আক্রাম উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে চৌয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ইশতেহারে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে ১১টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এসব প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- নগরীর কোটবাড়ি এলাকায় কীর্তিমান নারী নওয়াব ফয়েজুন্নেসা চৌধুরানীর নামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নগরীতে সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব শচীনদেব বর্মণের নামে সঙ্গীত কলেজ, নগরীর দক্ষিণাঞ্চলে মেয়েদের জন্য দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নগরীর পূর্বাঞ্চলে প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়, নগরীর পশ্চিমাঞ্চলে ছেলেদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। এছাড়াও লালমাই ময়নামতি পাহাড়ের আদিবাসী নৃতাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীর জন্য মাতৃভাষা কেন্দ্র, নগরীর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সিটি করপোরেশনের আওতায় এনে উন্নত ও আধুনিক করা।
কুমিল্লাকে ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির শহর উল্লেখ করে ইশতেহারে সাক্কু বলেন, নগরীর শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি কর্মীদের জন্য নগর সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। জ্ঞানচর্চার লক্ষ্যে ২৭টি ওয়ার্ডে বরেণ্য ব্যক্তিদের নামে পাঠাগার গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডকে করা হবে মাদক, সন্ত্রাস ও ইভটিজিংমুক্ত। সাক্কু বলেন, পুরাতন গোমতী নদীকে হাতির ঝিলের আদলে একটি বিনোদন স্পটরূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাইকার অর্থায়নে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইশতেহারে নগরীর দক্ষিণাংশের ৯টি ওয়ার্ডের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সাক্কু বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে একশ’ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে জাইকা, এমজিএসপি ও ডিপিপির সহযোগিতায় তিনশ’ কোটি টাকার মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে স্টেডিয়াম, শিশুপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ইশতেহারে স্বাস্থ্যসেবার কথা উল্লেখ করে সাক্কু বলেন, নগরীতে মা ও শিশুর চিকিৎসার জন্য ৮টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল ওয়ার্ডে এধরনের স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে সাক্কু বলেন, রিসাইকিলিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে দুইটি কোম্পানীর সাথে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। নগর সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করে সাক্কু বলেন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও জনগণের সহযোগিতায় কুমিল্লা শহর এখন আগের চেয়ে অনেক পরিচ্ছন্ন, অনেক সুন্দর। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নগরীতে উন্নয়ন কাজ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়ে ইশতেহারে সাক্কু বলেন, নিউ মার্কেটের ৫ম তলায় একটি আইটি সেন্টার গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার এসোসিয়েশনের সাথে চুক্তি হয়েছে। নগরীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ফ্রি ওয়াইফাই জোনের আওয়তায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নগরীতে একাধিক আইটি পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে বড় পরিসরে আউসোর্সিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও ইশতেহারে সাক্কু প্রতিশ্রæতি দেন। ইশতেহারে হকারদের পুনর্বাসন, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের আবাসন, বস্তিবাসীর নিরাপদ স্বাস্থ্য ও সেনিটেশন এবং নগরীর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প ব্যয়ে ঘর নির্মাণ, কর্মজীবী মহিলাদের জন্য নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা ও মহিলাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল এলাকায় পাবলিক টয়লেট নির্মাণ এবং ক্ষুদ্র মাঝারি বিনিয়োগে উদ্দীপনা ও সহায়তা দিয়ে বর্ধিত কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
কুসিক নির্বাচনকে কুমিল্লার মর্যাদা রক্ষার নির্বাচন উল্লেখ করে সাক্কু বলেন, প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগের নাম পরিবর্তনের যেকোন অপচেষ্টা প্রতিহত করতে কুমিল্লাবাসী ঐক্যবদ্ধ। নগর প্রতিনিধির দায়িত্ব পেলে আগামীতে শান্তি, সম্প্রীতি, সমৃদ্ধি এবং বিশ্বমানের নগর গড়তে নগরবাসীর কল্যাণে সর্বশক্তি আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সাক্কু ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে জয়ী করার আহŸান জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ