পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপির মুসলিম বিদ্বেষী বিতর্কিত নেতা যোগী আদিত্যনাথের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণের পর একের পর এক মুসলিম বিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সেখানকার মুসলমানদেরকে দেশত্যাগের হুমকি দিয়ে উত্তর প্রদেশের গ্রামে পোস্টার সাঁটানোর ঘটনা ও ঐতিহ্যবাহী দেওবন্দের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগের সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
গতকাল (শুক্রবার) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ভারতের কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর উদ্দেশ্যমূলকভাবে সারা ভারত জুড়ে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। নানাভাবে ভারতীয় মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার হরণের যেন উৎসব চলছে। ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতারা কোন রাখঢাক ছাড়াই বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাব্যঞ্জক ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ঘর ওয়াফেসির নামে মুসলমানদেরকে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক হিন্দুত্বের দীক্ষা দেওয়া, দেশ ছাড়া করার হুমকি এবং হিজাব, বিয়ে, সন্তান জন্মদান, ধর্মীয় শিক্ষা, মাইকে আযান ও গরু জবাই নিষিদ্ধ করে একের পর এক রাজ্যে আইন জারি করে যাচ্ছে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে কার্যতঃ মুসলমানরা এখন তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো অবহেলা ও আতংকে জীবন যাপন করছে। ভারতে মুসলমানদের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে, এটা চরম নিন্দনীয় ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল। ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা, মানবাধিকার কর্মী ও শান্তিপ্রিয় নাগরিক সমাজের উচিত, এসব সাম্প্রদায়িক উস্কানী ও অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
বিবৃতিতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, গত ১৫ মার্চ টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় ‘পোস্টার ইন বেরেলী ভিলেজ আসক মুসলিম টু লিভ’ শীর্ষক এক উদ্বেগজনক সংবাদ প্রতিবেদনে জানতে পেরেছি যে, ভারতের উত্তর প্রদেশে স্থানীয় নির্বাচনে বিজেপির বিজয়ের পরে সেখানকার কয়েকটি গ্রামে মুসলমানদেরকে দেশত্যাগ করতে হুমকি দিয়ে পোষ্টার সাঁটা হয়েছে। পোষ্টারে ট্র্যাম্প যেভাবে কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, ঠিক তার অনুকরণ করা হবে বলেও স্থানীয় মুসলমান স¤প্রদায়কে শাসিয়ে হুমকিমূলক উক্তি ছাপা হয়।
তিনি বলেন, এর মধ্যে গত ১৭ মার্চ বিবিসি পরিবেশিত অপর একটি খবরে জানা যায় যে, ভারতের বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র দারুল উলূম যেখানে প্রতিষ্ঠিত, সেই দেওবন্দের নাম বদলের প্রস্তাব করেছেন বিজেপি’র একজন নেতা। এমনকি তিনি দেওবন্দের নাম বদলকে তার সরকারের অগ্রাধিকারমূলক কাজ বলেও উল্লেখ করেন। হেফাজত আমীর বলেন, দেওবন্দ আজ সরা বিশ্বে দারুল উলূমের কারণেই খ্যাতি ও পরিচিতি পেয়েছে। আর বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে দারুল উলূমের আলেমদের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ অবশ্যই উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর বলেন, আমরা সবসময় যে কোন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো, বিভেদ তৈরি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের যে কোন ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ ও তাদেরকে হেয় করার ঘোরতর বিরোধী। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে মুসলমানদের ঈমান ও আকিদা রক্ষার লড়াইয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশে সমাজের সকল ধর্মীয় স¤প্রদায়ের স¤প্রীতিমূলক সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। আমরা চাই, বাংলাদেশের মুসলমানরা পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগ করুক এবং অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষও যার যার অবস্থানে স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালন করুক। বাংলাদেশে আমরা সবাইকে নিয়েই সমাজ গড়তে চাই। আমরা বিদ্যমান সকল বৈচিত্রের মধ্যেই বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রে মানুষে মানুষে ঐক্য চাই। ইসলাম আমাদেরকে সেই সুমহান ঐক্যের শিক্ষা দিয়েছে। তিনি বলেন, বিভেদাত্মক রাজনীতির সকল কুশীলবদের জানাতে চাই, ধর্ম আর স¤প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ ও হিংসার আগুন না জ্বালিয়ে কীভাবে যার যার ধর্মীয় স্বকীয়তা বজায় রেখে স¤প্রীতিপূর্ণ সমাজ গড়া যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।