Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

স্বাধীনতা দিবসে দুপুর ২টায় র‌্যালী করবে বিএনপি

| প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে দেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা হুমকিতে পড়বে -মির্জা ফখরুল
স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আলোচনা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রকাশ করেন।
আগামী ৭ এপ্রিল ৩ দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত যাচ্ছেন। এই সফরে বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে গণমাধ্যম রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তবে সরকারের তরফ থেকে সফরের কথা জানানো হলেও চুক্তির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখন স্বাধীন আছি কিনা- এটা এখন বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমাদের তো ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে। এখন আমাদের যেটাকে আমরা বলি জিওগ্রাফিকাল (ভূগোলিক) ফ্রিডম, সেটাও হুমকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে কেন্দ্র করে যে বিষয়গুলো আলোচিত হচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে সমগ্রজাতিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আমরা জানি না, প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন, কি কি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন, এটা জনগণকে জানানো হয়নি, জনগণ জানে না। পত্র-পত্রিকাগুলোর মধ্যে যে  স্পেকুলেশনগুলো হচ্ছে, যেটা বলা হচ্ছে। এটাতে আমরা যারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি, যারা আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে এসেছি, আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না।
প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরোধী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো চুক্তি এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
নয়া পল্টনে মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঘোষিত শোভাযাত্রা সফল করার লক্ষ্যে এই প্রস্তুতি সভা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে পানি সমস্যা রয়েছে, যেটা আমাদের প্রধান সমস্যা তার সমাধান হওয়ার দরকার। আমাদের যে তিস্তা নদীর পানির চুক্তি এখনো হয়নি। গঙ্গার নদীর পানির একটা চুক্তি হয়েছে, সেটাও পূর্ণাঙ্গভাবে হয়নি। ৫৪টি নদীর পানির চুক্তি হয়নি, সেই পানি আমরা পারছি না।
গত কয়েকদিন আগে ভারতের একটি আদালত রায় দিয়েছে, নদীকে নদী হিসেবে দেখলে চলবে না, এটা একটা জীবন্ত মানুষের মতো। সেই নদীকে যদি রুদ্ধ করা হয়, যদি বিষাক্ত করা হয়, সেই নদীকে যদি বাঁধা দেয়া হয়, সেটা মানবহত্যার শামীল। আজকে দুঃখজনকভাবে সত্য বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে এসে পড়েছে। সেদিকে সরকার ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
অন্যদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রীর মুখে আমরা শুনতে পাই, তিস্তা নদীর পানি চুক্তি হবে কিনা সে নিয়ে তিনি সন্দিহান। তালে কোন চুক্তি হবে?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সেই দল, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, আমরা এই প্রশ্নের কখনো নতি স্বীকার করতে পারি না, আপোষ করতে পারি না।
বর্তমান সরকারকে নতজানু অভিহিত করে তিনি বলেন, দেশে একটার পর একটা ষড়যন্ত্র চলছে, কি করে এই নতজানু সরকারকে টিকিয়ে রাখা যায়। একদলীয় শাসনব্যবস্থার মতো তারা একটা শাসন চালাতে পারে, সেজন্য তারা কৌশল করে একের পর এক অত্যাচার-নির্যাতন-গুম-খুন করে বিরোধী পক্ষ অর্থাৎ যারা স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে, জনগণের পক্ষে কথা বলে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার  চেষ্টা করছে। কয়েকদিন ধরে জঙ্গি জঙ্গি হত্যা আমাদের গোটা জাতিকে উদ্বিগ্ন করে ফেলেছে। সন্ধ্যার পর রাস্তায় একেবারে খালি হয়ে যায়। মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বের হয় না।
জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করতে সকল রাজনৈতিক দল ও মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে যে একটা সমন্বিত উদ্যোগ নেবে- সরকার তা নিচ্ছে না বলে অভিযোগও করেন ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা কী দেখছি, কিছু একটা হলেই বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশে বিএনপিকে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আসল রহস্য হচ্ছে, এখানে ঘরোয়া জঙ্গিবাদের কথা বলে রাজনৈতিক বিরোধী প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। প্রত্যেকবার একরকম ধোঁয়া তুলে বøক রেড করে বাড়িবাড়ি থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে জেলে দেন, নির্যাতন করা। এটা চলতে পারে না। সরকারকে বলছি, আপনি আগুন নিয়ে খেলছেন। আপনারা আমাদের কোন দিকে নিয়ে যেতে চান। আপনাদের আসল উদ্দেশ্যটা কী? যদি জঙ্গিবাদ উদ্ঘাটন করতে চান, অবশ্যই সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সত্য উদ্ঘাটন করুন।
স্বাধীনতা দিবসের র‌্যালী শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেয়ার আহŸান জানান বিএনপি মহাচিব।
তিনি বলেন, আমাদের জেগে উঠতে হবে। উটপাখির মতো বালুর ভেতরে মুখ লুকিয়ে চুপ করে বসে থাকলে চলবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একতরফাভাব নির্বাচনী প্রচারণা করছে অভিযোগ করে সকল দলকে প্রচারণার সমান সুযোগ দেয়ার দাবিও জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম।
মহানগর বিএনপির আহŸায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি মুক্তিযোদ্ধার দল। এই দলে সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধা আছে, অন্যকোনো দলে তা নেই। ২৬ মার্চ আমাদের র‌্যালী হবে বর্ণাঢ্য ও শান্তিপূর্ণ। দুপুর ২টায় নয়া পল্টন থেকে এই র‌্যালী শুরু হবে।
আব্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সাবেক এমপি ও মহানগর বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, কাজী আবুল বাশার, ইউনুস মৃধা, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ