Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামেই প্রথম ব্যবহার হয় সুইসাইড ভেস্ট

| প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অজানাই থেকে যাচ্ছে জঙ্গিদের  অস্ত্র-গোলাবারুদের উৎস
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক জঙ্গি আস্তানা থেকে অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার হলেও এসবের উৎস থেকে যাচ্ছে অজানা। কারা তাদের এ ভয়ঙ্কর পথে ঠেলে দিচ্ছে তাও থেকে যাচ্ছে আড়ালে। ধরা যাচ্ছে না মাষ্টারমাইন্ড বা মূলহোতাদের। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা প্রচেষ্টার পরও জঙ্গিদের অপতৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাড়ছে। বিশেষ করে জঙ্গিদের আত্মঘাতী হয়ে উঠার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে। আর আত্মঘাতী বা সুইসাইড ভেস্ট ব্যবহারের ঘটনা শুরু হয় চট্টগ্রাম থেকেই।
বিগত ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর নৌবাহিনীর ঈশা খান ঘাঁটিতে জুমার নামাজ চলাকালে জেএমবির সদস্যরা হাতে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখান থেকে ‘সুইসাইডাল ভেস্ট’ পরা জেএমবির আত্মঘাতী দলের সদস্য আবদুল মান্নানকে আটক করা হয়। ওই ঘটনায় একই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর নগরীর ইপিজেড থানায় মামলা হয়। তবে এখনও ওই সুইসাইড ভেস্টের উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ রাজধানীর আশকোনা ও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডেও সুইসাইড ভেস্ট ব্যবহার করে আত্মঘাতী জঙ্গিরা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, জঙ্গি নির্মূলে সবার আগে দরকার তাদের অস্ত্র গোলাবারুদের উৎস ও নাটেরগুরুদের খুঁজে বের করা। সীতাকুন্ডের ছায়ানীড়ের ওই জঙ্গি আস্তানায় বিপুল বোমা ও বোমা তৈরির উপকরণ পাওয়া যায়। এসবের উৎস কি তাও এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তার আগে চট্টগ্রামের সদরঘাটে ছিনতাই করতে গিয়ে একে-২২ রাইফেল ব্যবহার করে জেএমবির জঙ্গিরা। পরবর্তীতে রাজধানীর হলি আর্টিজেনসহ আরও কয়েকটি জঙ্গি আস্তানায় ভয়ঙ্কর একে-২২ রাইফেল পাওয়া যায়। জঙ্গিদের হাতে এ যুদ্ধাস্ত্র কিভাবে এলো তার রহস্যও এখনও উদঘাটন করা যায়নি।
এদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে জঙ্গি আস্তানায় যে ধরনের বোমা পাওয়া গেছে, ঢাকার আশকোনায় আত্মঘাতী বিস্ফোরকের সঙ্গে তার মিল পেয়েছে পুলিশ। সীতাকুন্ডে দুটি জঙ্গি আস্তানায় গত সপ্তাহে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে নিহত পাঁচজনের মধ্যে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় অন্তত দু’জন। আস্তানা থেকে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় বোমাও উদ্ধার করা হয়। তার পরপরই গত শুক্রবার ঢাকার আশকোনায় র‌্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় আরেক জঙ্গি।
আত্মঘাতী ওই ব্যক্তির বিস্ফোরকের সঙ্গে সীতাকুন্ডে উদ্ধার বোমার মিল পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম কয়েকদিন আগে বলেছেন, চট্টগ্রাম থেকে বোমাগুলো নেওয়া হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তারা। তিনি বলেন, কুমিল্লায় পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপকারীদের কাছ থেকে এবং সীতাকুন্ডে উদ্ধার হওয়া বোমাগুলোর মধ্যে মিল রয়েছে। ঢাকায় র‌্যাব ব্যারাকের বোমাগুলোও কুমিল্লা ও সীতাকুন্ডে উদ্ধার হওয়ার বোমাগুলোর মতোই।
গত ৭ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনায় পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপকারী হাসান ও ইমতিয়াজ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলেন, তারা বোমাগুলো চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে প্রথমে মিরসরাইয়ে অভিযান চালানো হয়। এরপর অভিযান হয় সীতাকুন্ডে। সীতাকুন্ডে নিহত দুজন নব্য জেএমবির বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলে পুলিশের ধারণা। মিরসরাইয়ের আস্তানায় বোমা তৈরি হত বলেও তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, জঙ্গিরা বোমাগুলো চট্টগ্রামে বানিয়ে ঢাকায় পাঠাচ্ছিল। আর এসব বোমার উপকরণের বেশিরভাগ জঙ্গিরা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করেছে। আবার বোমা গ্রেনেড তৈরির জেলসহ বেশকিছু উপকরণ বিদেশ থেকেও এসেছে। পুলিশের মতে, এক সঙ্গে বেশি সরঞ্জাম সংগ্রহ না করে অল্প অল্প করে সঞ্চয় করে সীতাকুন্ডের আস্তানায় জঙ্গিরা বোমা তৈরি করছিল। প্রেমতলার ছায়ানীড়ে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে বেশকিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে পুলিশ। যেসব দোকান থেকে জঙ্গিরা বিস্ফোরকের বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে তাদের কয়েকটির ঠিকানাও পেয়েছে পুলিশ।
ছায়ানীড় ভবনের জঙ্গি আস্তানায় চার দিনের তল্লাশিতে মোট ৩৯টি বোমা, গ্রেনেড ও সুইসাইড ভেস্ট উদ্ধার করে পুলিশ। সীতাকুন্ড পৌর শহরের নামার বাজার এলাকায় সাধন কুটির নামের একটি দোতলা বাড়ি থেকে ১৫ মার্চ দুপুরে জসিম ও আর্জিনা নামের দুই জঙ্গিকে বাড়িওয়ালার সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন বিকেলে প্রেমতলায় ছায়ানীড়ে অভিযান শুরু হয়। প্রায় ১৯ ঘণ্টার সেই অভিযান শেষ হয় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে চার জঙ্গির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। পরে ওই বাড়িতে বোমায় বিক্ষত এক শিশুর লাশ পাওয়া যায়।
অভিযান শেষে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল সারাদিন ওই বাসায় তল্লাশি চালায়। সেদিন ১০টি গ্রেনেড ও তিনটি সুইসাইড ভেস্ট উদ্ধারের পর সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। এরপর শনিবার চট্টগ্রাম নগর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ভবনের নিচ তলার একটি কক্ষে ছয়টি এবং ছাদে একটি বোমা পায়। পরদিন ওই বাসার টয়লেট ও কিচেন থেকে উদ্ধার করা হয় ১৮টি বোমা। সর্বশেষ সোমবার ওই বাসার একটি কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে একটি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। এছাড়া পাঁচ দিনে ১১টি বিস্ফোরক জেল, পাঁচ ড্রাম হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এবং এক ড্রাম এসিড উদ্ধার করা হয় বলে জানায় পুলিশ।
অপরদিকে ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার জঙ্গিনেতাদের অধিকাংশ উত্তরাঞ্চলের হলেও এবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দা পাওয়ায় তাও ভাবাচ্ছে পুলিশকে। ছায়ানীড়ে আত্মঘাতী কামাল ও তার স্ত্রী জোবায়দা পাশের এলাকা আমিরাবাদের সাধন কুঠির থেকে গ্রেপ্তার জঙ্গি জসিমের বোন ও দুলাভাই। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নে তাদের বাড়ি। বাইশারির একটি কৃষক পরিবারের সন্তান তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ