পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : ভালো ফলনের কারণে টকটকে লাল রঙের মরিচে আর্থিক লাভের স্বপ্ন দেখছে পূর্ব বগুড়া অঞ্চলের যমুনা পাড়ের বাসিন্দারা। তারা খরা, বন্যায় ত্রাহি অবস্থা থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্নে শ্রম ও ঘাম ঝরিয়েই ফলিয়েছে বগুড়ার ঝাল মরিচ। কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও দ্বিগুণ জমিতে ফলানো লাল রঙা বগুড়ার নামকরা ঝাল মরিচ ঘরে তুলতে শুরু করেছে চাষিরা।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ৭শ’ ৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যমুনা নদী বেষ্টিত অর্ধশতাধিক চরসহ অন্য এলাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪ হাজার ২শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। এ জমি হতে ১০ হাজার ৩শ’ ৭৪ মেট্রিক টন কাঁচা এবং ৪ হাজার ৩শ’ ৩৫ মেট্রিক টন শুকনা মরিচের ফলন পাওয়া যাবে। মৌসুমের শুরুতে কাঁচামরিচ বিক্রি করে মরিচ চাষিরা লাভবান হয়েছে। বর্তমানে বাজারে পাকা মরিচ সাড়ে ৮শ’ হতে ৯শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চার হাজার হতে ৪ হাজার ৮শ’ টাকা মণ দরে। মরিচ চাষে লাভবান হওয়ার কারণে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতেও শুরু করেছে চাষী পরিবারগুলো।
জানা যায়, পূর্ব বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। যমুনা নদীর বারবার ভাঙনে নদী পাড়ের মানুষগুলো সব হারিয়ে হয়েছে সর্বহারা। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নিজেদের টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। নদীকে ঘিরে এবারের বন্যায় অনেকেই সর্বস্ব হারিয়েছে। বন্যায় তাদের সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বন্যার পর মরিচ চাষে নিজেদের দিন বদলের স্বপ্ন দেখছে বগুড়ার সারিয়াকান্দির মরিচ চাষিরা। বগুড়ার যমুনার চরাঞ্চলে এ বছর ব্যাপক মরিচের চাষ হয়েছে। বন্যার সময় চরাঞ্চলের পলিপড়া উর্বর জমিতে মরিচের বাম্পার ফলনও পেয়েছে চাষিরা। ফলে মরিচ চাষ করে মঙ্গাকবলিত এসব এলাকার অসংখ্য পরিবার এরই মধ্যে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বেলে-দোঁ-আশ মাটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। চরের মাটি বেলে-দোঁ-আশ হওয়ায় প্রতি বছর ব্যাপক মরিচ চাষ হয়। অর্থকরী ফসল মরিচ চাষ করে কৃষক লাভবান হওয়ায় মরিচ চাষে তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি, কাজলা, কর্ণীবাড়ি, বোহাইল ইউনিয়ন সম্পূর্ণ এবং হাটশেরপুর, চন্দনবাইশা এবং সদর ইউনিয়ন আংশিক যমুনার চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত। এসব চরগ্রামগুলোতে লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। চরগ্রামের মানুষের জীবন জীবিকা মূলত কৃষির নির্ভরশীল। ফলে যে কোন ফসল উৎপাদনে তারা ব্যাপক পরিশ্রম করে। উত্তাল যমুনা পাড়ি দিয়ে চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে গেলে দেখা যাবে মাঠের পর মাঠ জমিতে অর্থকরী ফসল মরিচ চাষ করা হয়েছে। উৎকৃষ্ট মানের মরিচ হওয়ায় সারা দেশব্যাপী বগুড়ার সারিয়াকান্দির মরিচের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে এখানে উৎপাদিত মরিচের দাম সব সময় বেশী। বর্তমানে সারিয়াকান্দির মরিচ চাষিরা তাদের উঠানে, নদীর তীরে, বাড়ির পাশে উঠান তৈরী করে রোদে মরিচ শুকিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বাজারে শুকনা মরিচ বিক্রি শুরু করেছেন। বগুড়ার সারিয়াকান্দি এলাকার সাহাদত জানান, যমুনা নদীর চরের মরিচ চাষিরা প্রথমে কাঁচা মরিচ বিক্রি করে। পরে তারা মরিচ পাকিয়ে নিয়ে রোদে শুকিয়ে শুকনা আকারে বাজারে বিক্রি করে থাকে। বর্তমান বাজারে শুকনা মরিচ খুচরা বাজারে ১শ’ ৩০ থেকে ১শ’৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এমনিতেই মরিচ চাষে লাভ বেশি। এবার উপজেলার চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নিজ বলাইল গ্রামের সুলতান মাহমুদ জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করে ৪০ মণ শুকনা মরিচ পাওয়ার আশা করছেন। মরিচ চাষে তাঁর খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার দরে তিনি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারবেন।
পাকুরিয়া চরের কৃষক জিল্লার রহমান জানান, তিনি ২ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। বন্যার পর কৃষি বিভাগের পরামর্শে শীত সবজির চাষ করেন। সবজির পরই তিনি মরিচ চাষ করেন। জমি থেকে কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছেন। এবার সব খরচ বাদে তিনি শুকনা মরিচ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করার চিন্তা করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শাহাদুজ্জামান জানান, বন্যার সময় চরে ব্যাপক পলিমাটি পড়ায় সেই উর্বর জমিতে ব্যাপক মরিচ চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষক মরিচ চাষ করায় ব্যাপক ফলন হয়েছে। এবার ভাল ফলন পাওয়া গেছে। শেষ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ফলন পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৩শ’ ৩৫ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষ হওয়ার কারণে উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।