পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কখনই কোন বিদেশী রাষ্ট্র বা দাতাগোষ্ঠীর কাছে মাথানত করবে না। কারণ বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত উন্নয়নের জন্য কারো ওপর নির্ভরশীল নয়।
বিশ্ব ব্যাংকের পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আর অবহেলা করা যায় না। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থাÑ যারা কথায় কথায় মিথ্যা দোষারোপ করে তাদের কাছে নতজানু করে রাখতে চায়, তারা সে শিক্ষাটা পেয়ে গেছে। আর কেউ এভাবে মাথা নিচু করে চলার জন্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারবে না। আমাদের বাৎসরিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ ভাগই এখন আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে পারি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন পদ্মাসেতু নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। কানাডার ফেডারেল কোর্ট যার রায়েও বলেছেÑ এসব মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট। এখানে অভিযোগের কোন সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৭’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ সব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমেই ঘোষণা দিয়েছিলাম আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করবো। আমরা আল্লাহর রহমতে নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ শুরু করেছি। আমি অন্তত এইটুকু বলতে পারি, এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তার সরকার কাজ শুরু করে। ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালে দেশে কোন দরিদ্র থাকবে না, সেলক্ষ্য পূরণেই তাঁর সরকার দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।
এ বছর ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে স্বাধীনতা পদক ২০১৭-তে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং উন্নয়নসহ জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এই পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেকে ৩ লাখ টাকার চেক, ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের একটি পদক ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবছর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেনÑ গ্রæপ ক্যাপ্টেন (অব:) শামসুল আলম-বীরউত্তম, স্বাধীন বাংলা বেতারের কর্মকর্তা আশরাফুল আলম, শহীদ মো. নাজমুল হক, প্রয়াত মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী (মরণোত্তর), শহীদ এনএম নাজমুল আহসান (মরণোত্তর), শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদ (মরণোত্তর), চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যাপক ডা. এএইচএম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী, সাহিত্যে রাবেয়া খাতুন ও মরহুম গোলাম সামদানী কোরায়শী (মরণোত্তর), সংস্কৃতি ক্ষেত্রে প্রফেসর ড. এনামুল হক ও নৃত্যকলায় ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল, সমাজকল্যাণে খলিল কাজী (ওবিই), গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এবং মরহুম অধ্যাপক ড. ললিত মোহন নাথ (মরণোত্তর) এবং জনপ্রশাসনে প্রফেসর মো. আসাদুজ্জামান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং স্বাধীনতা পদক বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন। স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে অধ্যাপক ড. এনামুল হক নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন। পদকপ্রাপ্তরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে পদক গ্রহণ করেন। আর বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বাধীনতা পদক প্রহণ করেন।
মরণোত্তর পদকের ক্ষেত্রে শহীদ মো. নাজমুল হকের পক্ষে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল ইসলাম হক, সৈয়দ মহসিন আলীর পক্ষে স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসিন এমপি, শহীদ এন এম নাজমুল আহসানের পক্ষে ছোট ভাই এম এন সদরুল আহসান, শহীদ ফয়জুর রহমান আহমেদের পক্ষে কন্যা মিসেস সুফিয়া খাতুন, মরহুম গোলাম সামদানী কোরায়শীর পক্ষে পুত্র গোলাম ইয়াজদানী কোরায়শী এবং মরহুম অধ্যাপক ড. ললিত মোহন নাথের পক্ষে স্ত্রী আরতি নাথ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক প্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদক বিজয়ীদের সঙ্গে ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, চিফ হুইপ ও হুইপবৃন্দ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনিতিকবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত সম্মানিত সুধীবৃন্দ, আমি মনে করি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তারা পুরস্কার পেয়েছেন। যারা পুরস্কার অর্জন করেছেন, আপনারা সমাজের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। আমাদের সমাজে যারা নিজেদের জীবনকে উন্নত করে গড়ে তুলতে চায়Ñ তাঁরা আপনাদের পথ অনুসরণ করবে। আপনাদের মেধা-মনন দিয়ে একটি প্রগতিশীল সমাজ আমরা গড়ে তুলতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এভাবে একটি আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠবে এবং স্ব-স্ব কর্মক্ষেত্রে কৃতিত্বের সঙ্গে অবদান রাখবে। একইসঙ্গে আপনাদের পদাংক অনুসরণ করে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং পাকিস্তানীদের শোষণ-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি জাতি ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬-দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ের পথ ধরে বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়।
তিনি বলেন, আগরতলা মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে আটক করা হয়। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে আনে বাঙালি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টালবাহনা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাক দেন। তিনি ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসনের মধ্যে প্রায় অর্ধেকটাই জেলে কেটেছে বঙ্গবন্ধুর, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে ২৬-শে মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈন্যদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বিশ্বের প্রায় সকল দেশের স্বীকৃতি আদায় করেন এবং সমগ্র জাতিকে একটি সংবিধান উপহান দেন।
প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রমহারা নারীদের পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ প্রসঙ্গে বলেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা থেকে শুরু করে সে সময় জন্মানো শিশুদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসন-এর কাজ সবই বঙ্গবন্ধু করেছেন। যাদেরকে পরিবার গ্রহণ করতে চায়নি সে সব দুস্থ নারীদের অনেককেই নিজে পিতৃ পরিচয়ে বঙ্গবন্ধু বিয়ের ব্যবস্থা করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদেরকে বঙ্গবন্ধু বলেন লিখে দাও বাবার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। ঠিকানা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয় এবং তখন থেকেই এদেশে হত্যা, ক্যু এবং ষড়যন্ত্রের রাজনীতির গোড়াপত্তন করে ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের শুরু হয়।
দেশকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ়প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এগিয়ে নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে নয়, আমরা মাথা উঁচু করে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো। তিনি এ সময় মাথা পিছু আয় ১৪শ’ ৬৬ ডলার, ৭ দশমিক ১ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের খÐ চিত্র তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী দেশ। আমরা ইতোমধ্যেই নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ কখনও নিম্নে থাকতে পারে না। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যেই একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হব। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।