Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

সর্বনিম্ন দরদাতা মারুবিনি

মাতারবাড়ি ১২শ’ মে. ও. বিদ্যুৎ প্রকল্পের আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয়েছে : মে মাসের মধ্যেই কার্যাদেশ : আগস্টের মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হবে

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে দরপ্রস্তাব জমা দেয়া দুই জাপানি কোম্পানিই কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। গতকাল (বুধবার) কোম্পানি দুটির আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয়েছে। সুমিতমো কর্পোরেশন প্রায় ৪.২ বিলিয়ন ডলার যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৩২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা এবং মারুবিনি কর্পোরেশন ৩.৯ বিলিয়ন ডলার যা দেশীয় মুদ্রায়  প্রায় ৩০ হাজার ৪২৩ কোটি টাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে।
সুমিতমোর সঙ্গে আছে জাপানেরই তোশিবা ও আইএইচআই কর্পোরেশন। আর মারুবিনির সঙ্গে আছে  সে দেশেরই মিতশুবিশি ও টোয়া কর্পোরেশন। আর্থিক প্রস্তাব অনুসারে সর্বনি¤œ দরদাতা হয়েছে মারুবিনি। জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার ঋণে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতার বাড়িতে ১ হাজার ২০০  মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। কেন্দ্রটি আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলবে।
গত জুলাইয়ের গুলশানের হলি আর্টিসানে সন্ত্রাসী হামলার পর এই প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সন্ত্রাসী হামলায় জাপানি নাগরিক নিহতের পর জাপানি ঠিকাদাররা এদেশে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত আপত্তি জানায়। পরবর্তীতে জাপানি কোম্পানিগুলোর আগ্রহে প্রস্তাব জমা দেয়ার সময় তিন দফায় বাড়িয়ে গত ৩১ জানুয়ারি শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়। সরকার জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর মাধ্যমেও নিরাপত্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারের আশ্বাসে কোম্পানিগুলো শেষদিন (৩১ জানুয়ারি) দরপ্রস্তাব জমা দেয়। তারা পৃথক খামে কারিগরি এবং আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়। কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হওয়ায় গতকাল উভয়  কোম্পানির আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয়।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (সিপিজিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম জানান, এখন তারা আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন করবেন। এরপরযোগ্য কোম্পানিকে আগামী মে মাসের মধ্যেই কার্যাদেশ দিতে চান। আগস্টের মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সুমিতমো’র অন্যতম অংশীদার তোশিবা বিদ্যুৎকেন্দ্রেরর প্রধান যন্ত্রপাতি প্রস্তুুত ও সরবরাহ করবে বলে দর প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তোশিবা গত বছর ৪৯৯ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন আর্থিক লোকসান গুনেছে। চলতি বছর তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৯০ বিলিয়ন ইয়েন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাইকার ঋণ প্রদানের অন্যতম শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে দরপত্র দাতাদের যথেষ্ট আর্থিক সচ্ছলতা থাকতে হবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান যন্ত্রপাতি প্রস্তুু‘‘তকারক ও সরবরাহকারী যদি আর্থিকভাবে লোকসানে থাকে তবে  প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। কারণ ঠিকাদাররের আর্থিক দুরবস্থার কারণে সিদ্ধিরগঞ্জে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানির (ইজিসিবি) ৩৩৫ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির কাজ গত সাড়ে চার বছরও শেষ হয়নি।
স্পেনের আইসোলাক্স এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে ২০১২ সালে ইজসিবির সঙ্গে চুক্তি করে। ২০১৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর কথা ছিল। এরপর কয়েক দফা এই কেন্দ্রের বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর (সিওডি) পরিবর্তন করা হয়েছ। ইজিসিবি’র সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদেশি কর্মীদের নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে কয়েকবার নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছিল আইসোলাক্স। তবে মূল কারণ হলো আর্থিক সঙ্কটের কারণে ঠিকাদার কোম্পানি কার্যক্রমে ধারবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি।  
অভিযোগ রয়েছে, দরপত্রে অযোগ্য বিবেচিত হলেও বিশ^ব্যাংকের চাপে স্পেনের এই কোম্পানিটিকে কাজ দেওয়া হয়। এখনও এই প্রকল্পের ২০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।
মাতারবাড়িতে আমদানি করা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জাইকার সহযোগিতায় সেদেশরই টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার সার্ভিস কোম্পানি ও টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি ২০১৪ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। এর মধ্যে জাইকা দেবে ২৯ হাজার কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে। অবশিষ্ট দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিপিজিসিবিএল দেবে। ২০১৫ সালে এই প্রকল্প একনেকের অনুমোদন লাভ করে।
প্রকল্পটির আওতায় ১৫ হাজার একর ভ‚মি অধিগ্রহণ, ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৩৫৪ ঘনমিটার ভ‚মি উন্নয়ন, মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি কাজ, প্রকল্প এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণ, স্থায়ী টাউন শীপ নির্মাণ, ফ্লুু গ্যাস ডি সালফারাইজেশন ইউনিট স্থাপন করা হবে। এছাড়াও কয়লা পরিবহন ব্যবস্থা, কয়লা খালাসের জন্য পৃথক জেটি নির্মাণ, কয়লা মজুতের জন্য সংরক্ষণাগার নির্মাণের কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, সুমিতমো’র অন্যতম অংশিদার তোশিবার আর্থিক দুরবস্থা বর্তমানে এতটাই খারাপ যে-এই কোম্পানিটির রেটিং ত্রিপল সি (সিসিসি) ক্যাটাগরিতে নেমে গেছে। আন্তর্জাতিক কোন কোম্পানির ক্ষেত্রে এরকম রেটিং থাকলে ওই কোম্পানিকে কোনো ধরনের কাজ দেয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে মারুবিনি সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ায় সরকার বড় ধরণের একটি আর্থিক ঝুঁকির কবল থেকে রক্ষা পেল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ