Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় কেউ বিনা চ্যালেঞ্জে থাকবে না

কোস্টগার্ডের মহড়া পরিদর্শনকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাবমেরিন অন্তর্ভুক্তিতে নৌ-বাহিনীর র‌্যাংকিং ১৩৭তম থেকে এক লাফে ৪৬তম হয়েছে
আহমদ আতিক, বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে : নীল অর্থনীতির বিকাশে সহায়তা এবং বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র উপকূলের নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি দূষণ রক্ষায় কাজ করছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। আর এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছোট-বড় নানান ধরনের জাহাজ ও নৌযান সংগ্রহ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন ডকইয়ার্ডেও কোস্ট গার্ডের জন্য তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে নানান ধরনের নৌযান। জাপানের পার্লামেন্টেও বাংলাদেশের কোস্ট গার্ডকে সহায়তা হিসেবে ২৪টি জাহাজ দেবার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে দিনকে দিন বাড়ছে কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা।
বর্তমান সরকারের সময়ে কোস্ট গার্ডকে আরো গতিশীল বাহিনীতে রূপান্তরের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ওপিভি (অফসোর পেট্রল ভেসেল) শ্রেণির ২টি জাহাজ সিজিএস তাজউদ্দিন এবং সিজিএস নজরুল যোগ হয়েছে কোস্ট গার্ডে। জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও এম মনসুর আলীর নামে আরো ২টি ওপিভি শীঘ্রই যোগ হবে এ বাহিনীতে। শুধু কোস্ট গার্ড নয় বতর্মান সরকার নৌবাহিনীকেও বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করেছে। সাবমেরিন অন্তর্ভুক্তির ফলে ১৩৭তম থেকে ৪৬তম অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় পৌনে দু’শ কিলোমিটার দূরে কোস্ট গার্ডের সিজিএস তাজউদ্দিন জাহাজের মহড়া পরিদর্শন শেষে এর ডেকে ইনকিলাবসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এসময় তার সাথে কোস্ট গার্ডের উপ-মহাপরিচালক কমোডর ইয়াহিয়া সাঈদ, কোস্টগার্ডের পূর্বাঞ্চলীয় জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন শহিদুল ইসলাম, কমান্ডার নাজমুল, সালেহউদ্দিন, জসিমসহ নৌবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
মহড়া চলাকালে সিজিএস তাজউদ্দিন থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে গোলাবর্ষণ করা হয়। এছাড়াও টহল কার্যক্রম পরিচালনা, যুদ্ধকালীন মাইন এলাকায় যাত্রা, অপরাধী দমন, সমুদ্রে তৈলসহ বিভিন্ন পদার্থের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দূষণ প্রতিরোধ এবং অপসারণ, অন্য জাহাজ ও নৌযানের আগুন নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল ও শত্রæপক্ষ দমনে শক্তিশালী কামান ও বিভিন্ন ধরনের রাইফেল ব্যবহারের মহড়া চলে। এই মহড়াকে সহায়তার লক্ষ্যে কোস্টগার্ডের আরও কয়েকটি গানশিপও নামানো হয়। সিজিএস তাজউদ্দিনে শত্রæকে পরাস্ত করার জন্য শক্তিশালী কামান এবং অন্য জাহাজে আগুন নেভানোর কামান ও সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টি-পলিউশন গিয়ার রয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সমুদ্রসীমা সুরক্ষার দায়িত্ব মূলত কোস্টগার্ডের। তাই কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। কোস্টগার্ডের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলায় বাংলাদেশ সরকার এখন সমুদ্রের সম্পদ সংরক্ষণে কোস্টগার্ডকে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে।
কোস্টগার্ডের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে পাশের দেশ থেকে ট্রলার এসে মাছ ধরে নিয়ে যেত, কিন্তু সেই সংখ্যা এখন শূন্যের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। কোস্টগার্ডের সরাসরি সুবিধা দেশের মানুষ পেয়েছে জাটকা নিধন অভিযানের মাধ্যমে। এখানে কোস্টগার্ডের যে সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়, আসলে সেটি আরও বেশি।
তিনি বলেন, সবাই এ বার্তা পেয়েছে যে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গেলে কেউ বিনা চ্যালেঞ্জে থাকবে না। সার্বভৌম শব্দটির অর্থ আমরা অনেক সময় উপলব্ধি করতে পারি না। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব মানে হলোÑ আমরা আমাদের সীমানায় যা করতে চাই তা করতে পারব। দুটি সাবমেরিন অন্তর্ভুক্তির কারণেই বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর র‌্যাংকিং ১৩৭তম থেকে এক লাফে ৪৬তম অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা রয়েছে। পাশাপাশি, সার্ক স্যাটেলাইটে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে।
কোস্ট গার্ডকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সা¤প্রতিক জঙ্গি হামলাকে সরকার বিবেচনায় নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে কোস্টগার্ড শুধু সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত। কিন্তু সমুদ্রপথে মাদক, অস্ত্রসহ নানা রকম চোরাচালান যে হয়ে থাকে, তা কিন্তু শেষ পর্যন্ত জঙ্গিবাদে অর্থায়নের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে জঙ্গিবাদ দমনবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের আওতায় কোস্ট গার্ড ভূমিকা রাখবে।
কোস্টগার্ডের উপ-মহাপরিচালক কমোডর ইয়াহিয়া সাঈদ সাংবাদিকদের বলেন, কোস্টগার্ডের উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিদেশ থেকে সরঞ্জাম আনার পাশাপাশি দেশেও অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা ১১টি নতুন জাহাজ, জাহাজ টেনে আনার জন্য টাগ এবং স্যালভেজ জাহাজ তৈরি করছি। আগে শুধু উপকূল পর্যন্ত এ বাহিনীর আধিপত্য ছিল। এখন গভীর সমুদ্রের সম্পদ সুরক্ষার সক্ষমতা এসেছে।
তিনি বলেন, স¤প্রতি খুলনা শিপইয়ার্ডে দুটি বৃহদায়তনের টহল জাহাজ নিজেদের অর্থায়নে তৈরি করেছে বাংলাদেশ। সাবমেরিনের টেনে আনার জন্য যে বিশেষ ধরনের টাগ ব্যবহৃত হয়, সেটিও খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি করা হয়েছে। নারায়াণগঞ্জ শিপইয়ার্ডেও কোস্ট গার্ডের জাহাজ তৈরি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
কোস্টগার্ডের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন শহিদুল ইসলাম জানান, আগস্টে আরও দুটি ওপিভি কোস্টগার্ড বহরে সংযুক্ত হবে। এগুলো ইতালি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। দেশটির নৌবাহিনীর ব্যবহৃত ফিগ্রেটগুলোকে বাংলাদেশে সরবরাহের আগে ওপিভিতে রূপান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক কর্মকাÐ অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি অপরাধও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এছাড়া দেশের সার্বিক অর্থনীতির গতি চাঙ্গা করতে সমুদ্রভিত্তিক নীল অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কোস্টগার্ডের লোকবল ও সরঞ্জাম বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কোস্টগার্ডের ১৪টি স্টেশন ও ৩টি অস্থায়ী স্টেশন রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এগুলো যথেষ্ট নয়।
বাহিনীটির কর্মকর্তারা বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে জাপানের সহায়তায় কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মাণাধীন জেটি, সিঙ্গাপুরের সহায়তায় উন্নয়ন প্রকল্প, সমুদ্রের বিভিন্ন বøকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। বিদেশিরা ওই এলাকার পরিপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছেন। কিন্তু ১৯৯৫ সালে জন্ম নেয়া কোস্টগার্ডের পর্যাপ্ত টহলযান ও লোকবল নেই।



 

Show all comments
  • sumon ২৩ মার্চ, ২০১৭, ৫:৩৮ এএম says : 0
    No defence deal with india. we do not want to loose our our freedom. SK hasina do not sell the freedom your father fought for us.
    Total Reply(0) Reply
  • Sabbir ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০৫ পিএম says : 0
    It's a very good news for us
    Total Reply(0) Reply
  • আরাফাত ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০৬ পিএম says : 0
    এই ধরনের নিউজ দেখলে খুব ভালো লাগে। ইনকিলাবকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • এস, আনোয়ার ২৮ মার্চ, ২০১৭, ৮:২৩ এএম says : 0
    স্থলসীমা দিয়ে আমাদের বন্ধুরুপী শত্রুর নিক্ষিপ্ত চ্যালেঞ্জ গুলোকে আরো কঠোর ও নির্মম ভাবে মোকাবেলার ব্যবস্থা করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ