পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উসাইদ সিদ্দিক, দি নিউ আরব : ২০০২ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সিআইএ পরিচালক জর্জ টেনেট সেই বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন- ‘এ হচ্ছে একটা সøাম ডাঙ্ক কেস’ (গায়ের জোরে বাস্কেট দিয়ে বল নিচে ফেলা)। ১৪ বছর আগে ২০০৩ সালে দ্বিতীয় উপসাগর যুদ্ধ শুরু করতে ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের (ডবিøউএমডি) উপস্থিতির ঘটনা সাজানো হয়েছিল।
কয়েকমাস যুদ্ধে লিপ্ত থাকার পর বুশ প্রশাসনের মধ্যে স্পষ্ট হতে থাকে যে ইরাকি স্বৈরাচারী সাদ্দাম হোসেনের কাছে আসলে কোনো ডবিøউএমডি ছিল না। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল ব্যাপকভাবে তার সব মিথ্যা উন্মোচিত হয়েছে।
কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
প্রায় ৯ বছর ধরে আমেরিকার ইরাক দখলের ঘটনায় লাখ লাখ ইরাকি নিহত হয়েছে, উগ্রবাদ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে , লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে অথবা অননুকূল পরিস্থিতিতে উদ্বাস্তু হয়েছে।
খারাপ থেকে খারাপতর অবস্থা
ইরাকে অস্ত্র পরিদর্শন প্রকল্পের তদারককারী জাতিসংঘ মনিটরিং, যাচাই ও পরিদর্শন কমিশনের প্রধান হ্যান্স বিøক্স ২০০৩ সালের ফেব্রæয়ারির শেষে বলেন, ডবিøউএমডির কোনো মজুদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তা সত্তে¡ও বুশ নেতৃত্বাধীন প্রশাসন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে বা সমর্থন ছাড়াই ইরাকে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
যখন তদন্ত করা হয় যে সাদ্দাম ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কী ঘটবে সে ব্যাপারে সরকারের কোনো পরিকল্পনা ছিল কিনা, বুশ প্রশাসন সে বিষয় এড়িয়ে যায়। যুদ্ধের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে ইরাক বিষয়ে কোনো কৌশলই গুরুত্বের সাথে প্রণীত হয়নি।
সরকারী মন্ত্রণালয়গুলো লুট ও ক্ষতিসাধন করার সময় মার্কিন প্রশাসনের অযোগ্যতা বিব্রতকরভাবে প্রতীয়মান হয়। এ সময় আমেরিকান সৈন্যরা গোটা ব্যাপারটি নিষ্ক্রিয়ভাবে তাকিয়ে দেখে। একমাত্র তেল মন্ত্রণালয়ই এ তাÐব থেকে অক্ষত ছিল। সামান্য কিছু লোক যারা বুশ মন্ত্রিসভার সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাক্সক্ষার বিষয়টি বুঝতে পেরেছিল তারা ঝুঁকি নিয়ে তেল মন্ত্রণালয়কে রক্ষা করে।
ইরাকে মার্কিন সরকারের পয়েন্ট ম্যান পল ব্রেমার ইরাকি সেনাবাহিনী ভেঙ্গে দেন। ফলে হাজার হাজার ইরাকি সৈন্য বেকার হয়ে পড়ে। মার্কিন প্রশাসন তাদের আগ্রাসনের বিরাট সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল। বুশ ২০০৩ সালের মে মাসে ইউএসএস লিংকনের উপর দাঁড়িয়ে প্রত্যয়ের সাথে বিজয়ের কথা ঘোষণা করেন। তার পিছনে লেখা ছিলÑ মিশন সম্পন্ন।
সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বুশ ও অন্য ভূমিকা পালনকারীদের জন্য ইরাকে তারপর যেসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তা চিরকাল তাদের জীবনে কলঙ্ক হয়ে থাকবে।
সাদ্দামের পর যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় তাতে বৈধতা লাভের জন্য বহু গ্রæপকে লড়াই করতে দেখা যায় যার পরিণতিতে লাখ লাখ ইরাকি নিহত ও বহু গৃহহীন হয়। অন্যদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ও আল-কায়েদা (যাদের অস্তিত্ব আগে ইরাকে ছিল না) এক সময়ের সুন্দর দেশটিকে ছারখার করে দেয়।
ব্রাউন বিশ^বিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের হিসাবে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আনুমানিক ১ লাখ ৬৫ হাজার ইরাকি মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের সরাসরি ফল হিসেবে নিহত হয়েছে। তারা বলেছে, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরো অনেক বেশী হতে পারে।
ডবিøউএমডির অজুহাতকে যখন ইরাকে আমেরিকার উপস্থিতির আর যুৎসই কারণ হিসেবে দেখানো যাচ্ছিল না তখন বুশ প্রশাসন গণতন্ত্র কার্ড খেলে এ বলে যে এক নির্মম স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইরাকের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
মার্কিন নিয়োজিত ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নূরী আল মালিকি গোষ্ঠিগত ও ধর্মীয় সহিংসতা কবলিত দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার সামান্যই চেষ্টা করেন, বরং তিনি এক গ্রæপের বিরুদ্ধে আরেক গ্রæপকে লেলিয়ে দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে বেশী সচেষ্ট ছিলেন। তিনি মার্কিনিসহ সুন্নীদের দূরে সরিয়ে, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন করে, বেপরোয়া দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতি করে তার অপরিসীম ব্যর্থতার প্রমাণ দেন।
ইরাককে স্থিতিশীল করার ন্যূনতম সুযোগটুকুও চরম আঘাতের শিকার হয় যখন ২০১৪ সালে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস ফাল্লুজা বা মসুলের মত শহর দখল করে ইরাক সরকারের নাকের ডগায় ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে।
এ গ্রæপটি অকল্পনীয় নিপীড়ন-বর্বর নির্যাতনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে যা আয়মান আল জাওয়াহিরি বা তালিবানের মত সংগঠনকেও এর নিন্দা জানাতে বাধ্য করে।
সাবেক বাথিস্ট ও এর আগে পল ব্রেমারের মুক্ত করা ইরাকি সামরিক অফিসারদের নেতৃত্বে আইএস ব্যাপক শক্তি অর্জন করে এবং বেশ কয়েক মিলিয়ন মানুষ অধ্যুষিত এলাকার নিয়ন্ত্রণ লাাভ করে। অবস্থা দাঁড়ায় এই যে আমেরিকানরা যেটুকু অর্জন করেছিল, অবশ্য যদি তাকে অর্জন বলা যায়, তা রক্ষার জন্য আবার ইরাকে ফিরে আসে।
বিচারহীনতা
প্রধান বিশ^শক্তিগুলোর ভূরাজনৈতিক স্বার্থ ও সুবিধাবাদিতার দাবার বড়ে হয়ে ইরাকিরা ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও তারা এ পর্যন্ত ন্যায়বিচার পায়নি। যার ভুয়া তথ্য বিশ^কে পররাষ্ট্র সম্পর্কের জলাভূমিতে লুটোপুটি খাইয়েছে সেই বুশ আজো জবাবদিহিতার বাইরে রয়ে গেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির যুগে বুশের নিষ্ঠুরতার উত্তরাধিকার এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, এদিকে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তার এক বা দু’লাইন উচ্চারণ ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্যরাসহ ট্রাম্পের নিন্দুকদের কানে সঙ্গীতের মত শোনাচ্ছে।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যমকে ট্রাম্পের অব্যাহত সমালোচনার আলোকে ট্রাম্পের সমালোচনা করে বুশের বক্তব্য সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে। বুশ সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য বলে আখ্যায়িত করেন।
খুব কম লোকই স্মরণ করেন যে এই বুশ প্রশাসনই ইরাক আগ্রাসনের প্রথম দিকে বাগদাদে আল-জাজিরা ব্যুরোর উপর বোমাবর্ষণ করেছিল। শুধু তাই নয়, তারা প্রায়ই চ্যানেলটির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা করা ও সুবিধা প্রদানের অভিযোগ করে।
ইরাকে আগ্রাসনের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত যা ঘটছে তার মধ্যে একটি সরল রেখা টানা যেতে পারে। ২০১৫ সালে রেনো টাউন হলে এক সভায় বুশের ছোট ভাই জেব বুশ এক ছাত্রের রোষের শিকার হন যে তাকে পরিষ্কার বলে যে আপনার ভাই-ই ইসলামিক স্টেটের স্রষ্টা।
ইরাক যুদ্ধের অধিকাংশ বিচক্ষণ পর্যবেক্ষকই এ বক্তব্যের সাথে একমত।
বুশের উত্তরাধিকারকে পুনরীজ্জীবিত বা সুবিধামত তার ইরাক হামলার নির্মম পরিণতিকে অগ্রাহ্য করার যে কোনো চেষ্টা হবে তার কাÐজ্ঞানহীন কর্মকাÐের সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় নিহত হাজার হাজার নিহত মানুষের প্রতি অপমান। আর এগুলো এমন কাজ যা অনাগতকাল ধরে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।