Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্ব পানি দিবস পালিত

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও গতকাল (বুধবার) বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয়েছে। এই দিবসটি যখন পালিত হচ্ছিল সে সময় দেশের সকল নদ-নদী ধুঁকছিল পানি সঙ্কটে। ভাটির দেশ হিসাবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর। ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদীর মধ্যে ৫৪ টিই এসেছে ভারত থেকে। এসব নদীর উজানে ভারত বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
এতে করে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ পানি সঙ্কটে ভুগছে। এদেশের নদ-নদীগুলো নাব্যতার অভাবে মরে যাচ্ছে। আর বর্ষায় ভারত উজানে নির্মাণ করা বাঁধের মুখ খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দেয় বানের পানিতে। ২০০৬ সালে ভারতের সাথে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি হলেও এই চুক্তি মোতাবেক পানি বাংলাদেশ পায় না।
আর তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য সরকার ভারতের সাথে গত ৭ বছর ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ৭ এপ্রিল ৪ দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাবেন। সেখানে তিনি ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নদ-নদীগুলোর দুরবস্থা এবং তিস্তা চুক্তির অপরিহার্যতার কথা তুলে ধরবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বিশ্ব পানি দিবস নিয়ে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২৩ বছরে বিশ্বের ৬০ কোটি শিশু তীব্র পানি সংকটে পড়তে যাচ্ছে। বিশ্ব পানি দিবসে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। জলবায়ু পরিবর্তন এবং যুদ্ধ-সংঘাতে পানির উৎস কমে যাওয়াকেই সংকটের প্রধান কারণ মনে করছে ইউনিসেফ।
গতকাল বিশ্ব পানি দিবসে ‘থার্স্টিং ফর আ ফিউচার : ওয়াটার অ্যান্ড চিলড্রেন ইন আ চ্যাঞ্জিং ক্লাইমেট’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে ইউনিসেফ জানিয়েছে, দুই দশকের মধ্যে (২০৪০ সাল) ৬০ কোটি শিশু (বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ) তীব্র পানি সংকটে জীবন-যাপন করতে বাধ্য হবে। দরিদ্রদের অবস্থা হবে আরও শোচনীয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন রকম বিশুদ্ধ পানির উৎস প্রতিনিয়ত কমে আসছে। আর এর ফলে বিশ্বব্যাপী শিশুদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে। খরা এবং সংঘাতের ফলে ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং ইয়েমেন বর্তমানে মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। শুধু ইথিওপিয়াতেই ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছেন। দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া এবং ইয়েমেনে প্রায় ১৪ লাখ শিশু অপুষ্টির ফলে জীবন সংকটে রয়েছে।
সুদানে ৬৮ শতাংশ মানুষের কাছে অতিপ্রয়োজনীয় দরকারে পানি ব্যবহারের সামর্থ্য রয়েছে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে এর পার্থক্য ৬৪ ও ৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ, সুদানের মোট জনসংখ্যার ৩২ শতাংশই দূষিত পানি পান করছে। এসব পানীয় উৎসের মধ্যে রয়েছে পুকুর, ডোবার পানি। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ও দূষিত রাসায়নিক দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ।
বিশ্বব্যাপী ৮০ শতাংশেরও বেশি বর্জ্য পানি পুনরায় ব্যবহার না করেই বাস্তুতন্ত্রে ফিরে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের দেওয়া তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষ দূষিত উৎসের পানি ব্যবহার করে থাকে। আর বিশুদ্ধ পানির অভাব ও স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশনের ফলে প্রতিবছর আট লাখ ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষ শহরাঞ্চলে বাস করছে। ২০৫০ সালের মধ্যে সংখ্যাটি দাঁড়াবে ৭০ শতাংশে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পানি শোধন করে ব্যবহার করার মতো পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় পানির যথাযথ ব্যবহারও নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকহারে পানি দূষিত হচ্ছে। ইউনিসেফের ওই প্রতিবেদনের লেখক নিকোলাস রিস বলেন, ‘যেখানে চাহিদা প্রচÐ বেশি, সেখানে পানির কথা না ভেবেই নগরায়ন দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলে। আমরা আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল এবং এশিয়ার কথা উল্লে­খ করতে পারি।’
জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিশ্বের ৩৬টি দেশ তীব্র পানি সংকটের মধ্যে রয়েছে। ভারতে প্রায় ছয় কোটি ৩০ লাখ শিশু বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। এ প্রসঙ্গে রিস বলেন, আমরা শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনতে চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সংকটের কথা না উল্লে­খ করে ওই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ