Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শেষ রক্ষা হচ্ছে না মহাসড়কের ডিভাইডার ভাঙা সেই ‘জেনভায়ো’র!

অ্যাকশনে ওবায়দুল কাদের

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো: শামসুল আলম খান : অবশেষে অ্যাকশনে গেলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ফলে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ডিভাইডার ভাঙা ওষুধ কোম্পানি জেনভায়োর আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না। সড়কের ক্ষতিসাধন করায় এ ওষুধ কোম্পানিটির বিরুদ্ধে শুধু মামলাই হয়নি। বাঁশের বেড়া তুলে মেরামত করা হয়েছে ভাঙা ডিভাইডারেরও।
মন্ত্রিত্বে স্বতন্ত্র স্টাইল বিনির্মাণ করা সড়কমন্ত্রীর এমন অ্যাকশনের দৌলতে অপকর্মের জেরে রীতিমতো ফেঁসে যাচ্ছে ত্রিশালের বাগান এলাকার জেনভায়ো নামের এ ওষুধ কোম্পানি।
গত ১১ মার্চ দৈনিক ইনকিলাবে বিতর্কিত এ ওষুধ কোম্পানির ডিভাইডার ভেঙে বাঁশের বেড়া দেয়ার ঘটনায় ‘ময়মনসিংহে মহাসড়কের বিভাজন ভেঙে তেলেসমাতি, ভাঙা অংশে বাঁশের বেড়া’ শীর্ষক সচিত্র একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবর প্রকাশের পর সৃষ্টি হয় তোলপাড়। সরেজমিন এ প্রতিবেদন নজরে আসে সড়কমন্ত্রীর।
দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগকে (সওজ) নির্দেশ দেন। এরপরেই হার্ডলাইনে যায় সওজ কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ নগরীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম প্রায় দুই বছর আগে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের পাশেই ত্রিশালের বাগান এলাকায় জেনভায়ো নামের একটি ওষুধ কোম্পানির নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
পরে এ ওষুধ কোম্পানির নির্মাণ সামগ্রী আনা-নেয়ার সুবিধার্থে সবার চোখের সামনেই ভেঙে ফেলা হয় ঝকঝকে এ মহাসড়কের ত্রিশালের বাগান পয়েন্টের ১৫ ফিট ডিভাইডার। আর এ কাজে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে সহায়তা করেন স্থানীয় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম আহŸায়ক আশরাফুল ইসলাম।
এ ডিভাইডার ভাঙার মাস কয়েক পরেই এ খবর পৌঁছে মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের দায়িত্বশীলদের কানে। সরেজমিন তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কারো নাম উল্লেখ না করে ত্রিশাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে দায় এড়ান। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
কিন্তু চলতি বছরের ১২ ফেব্রæয়ারি মহাসড়কের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে হুট করে প্রবেশ করার সময় মাটিভর্তি একটি ট্রাক সংঘর্ষ বাধিয়ে দেয় সেনা সদস্যদের একটি জিপের সঙ্গে। এতে চার সেনা সদস্য আহত হন। স্থানীয়রা কোম্পানিটির এমন কাÐে প্রতিবাদ জানায়।
এতে করে পুনরায় আলোচনায় আসে এ ডিভাইডার ভাঙার ঘটনা। পরে ওই নেতাই কোম্পানির সহায়তায় ডিভাইডারের ভাঙা অংশে দেন বাঁশের বেড়া। পরে এ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরেই স্থানীয় সওজ কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন সড়কমন্ত্রী।
এ বিষয়ে স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান জানান, মহাসড়কের ডিভাইডার ভাঙার অপরাধে সংশ্লিষ্ট উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম জেনভায়ো’র মালিক আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে একটি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেছেন।
মহাসড়কের প্রতিটি পয়েন্ট এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। যারাই ডিভাইডার ভাঙবে তাদের বিরুদ্ধে জেনভায়োর মতোই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানতে চাইলে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির জানান, সপ্তাহখানেক আগে জেনভায়োর বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের হয়েছে। মালিক দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর ডিভাইডারের ভাঙা অংশটিও দু’দিন আগে মেরামত করেছে স্থানীয় সওজ কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা জানায়, দুরুদুরু বুকে দুর্ভোগ সঙ্গী করে এক সময় ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে চলাচল করতে হতো। কিন্তু ২০১১ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বিভিন্ন স্থানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও আরামদায়ক করার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ৪ লেন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার।
সূত্র মতে, বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৫ জেলার মানুষের চলাচলের ‘হৃদপিÐ’ হিসেবে পরিচিত এ মহাসড়কের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ বার ছুটে এসেছেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার আন্তরিক প্রচেষ্টাতেই স্বপ্নের এ মহাসড়কে যাত্রা হয়ে উঠেছে আনন্দের।
নিজের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের ফসল এ মহাসড়কের ডিভাইডার ভাঙার মতো অপকর্ম করায় এ ওষুধ কোম্পানিকে ন্যূনতম ছাড় দেননি মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ‘মন্ত্রীর এমন পদক্ষেপ জনমনে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ ধরনের হার্ডলাইন মহাসড়ককের ডিভাইডারকে সুরক্ষা দেবে’, মত ত্রিশাল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ