Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রোগী সেজে হাসপাতালে প্রভাবশালীরা

কারাগারের হালচাল-৪

| প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


সন্ত্রাসীরা হাসপাতালে বসে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে
হাসান-উজ-জামান : কারাগারে বন্দি। তবে প্রভাবশালী বন্দিরা চিকিৎসার নামে বাইরের হাসপাতালে থাকছেন। এ তালিকায় আছে সন্ত্রাসী বন্দিরও নাম। মাসের পর মাস হাসপাতালে থাকছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। হাসপাতালে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। হাসপাতালে বসে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব বন্দির প্রকৃত রোগ এবং হাসপাতালে অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। প্রভাবশালী বন্দিদের এ চিত্র সারা দেশের কারাগারেই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ৫৪ নম্বর বেডে ভর্তি আছেন প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ত্রুটি মামলার আসামি প্রকৌশলী শাহ আলম। গতকাল মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অসুস্থ হলেও স্ত্রী সেবায় তিনি ভালই আছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রিজন সেলে এক শীর্ষ সন্ত্রাসী, দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় গ্রেফতারকৃত এবং হত্যা মামলার আসামিসহ ৭ জন বন্দি অবস্থান করছেন। সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রায় ঘরোয়া পরিবেশেই তাদের সময় কাটছে।
কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে অসুস্থ বন্দিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগায় সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী বন্দিরা। কোন কোন ভিআইপি বন্দি গ্রেফতার পরবর্তী বাইরের হাসপাতালে অবস্থানের পর সেখান থেকেই মুক্তি লাভ করেছেন। এমন খবরও শোনা যায়।  
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ২১ জন বন্দি চিকিৎসার জন্য ভর্তি ছিলেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছেন। এরমধ্যে বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রিজন সেলে (দোতলায়) রয়েছেন, ফাঁসির দন্ডাদেশ থেকে মওকুফ পেয়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহম্মেদ যোশেফ। একই সেলে রয়েছেন, হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডাদেশ থেকে যাবজ্জীবন সাজার আসামি আলমগীর হোসেন। প্রিজন সেলে আরো আছেন, দুর্নীতির মামলার অন্যতম আসামি জহিরুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শাহজাহান ও হাফিজুর রহমানসহ মোট ৭ বন্দি। এছাড়াও বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিনে রয়েছেন ভিআইপি আসামি ডেসটিনির এমডি মোহাম্মদ হোসেন। একই হাসপাতালের ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ত্রæটির ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি জুনিয়র টেকনিশিয়ান শাহ আলম। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন। একই হাসপাতালে আরো রয়েছেন ২ জন বন্দি। এছাড়াও পঙ্গু হাসপাতালে ১জন, হৃদরোগ হাসপাতালে ১ এবং পঙ্গু হাসপাতালে ১ জন বন্দি রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪৯ নম্বর কেবিনে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার আসামি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান রানা। একই মেডিকেলের পুরান ভবনের তিন তলার ৩০৩ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছেন প্রতারণা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরো ৪ জন বন্দি রয়েছে।
গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে স্ত্রী’র সঙ্গে বসে গল্প করছেন আসামি শাহ আলম। তিনজন পুলিশ ও ২ জন কারারক্ষী শাহ আলমের প্রহরায় থাকলেও তারা বারান্দায় অলস সময় কাটাচ্ছেন। সেখানের দায়িত্বরত কারারক্ষীরা জানান, সম্প্রতি ফেস্টুলা রোগের অপারেশন হয়েছে শাহ-আলমের। কেবিনে থাকা সাবেক এমপি আমানুর রহমান রানার অনুমতি ছাড়া সেখানে কারো প্রবেশ নিষেধ সেখানে। কারা রক্ষীরা বলেন, সব সময়ই তার কাছে লোকজন আসেন। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা অনেক বন্দিই সাজানো রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্ভরযোগ্য সূত্র।
কারা সূত্র জানায়, রানা প্লাজার রানা, হলমার্কের তানভীরসহসহ দশ ট্রাক অস্ত্র, উদীচী হামলা, একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিকের হত্যা প্রচেষ্টা, ২১ আগষ্ট ও জঙ্গি মামলার আসামি এবং তালিকাভুক্ত  সন্ত্রাসীরা রয়েছেন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটিজ জেলে। চিকিৎসার প্রয়োজনে এসব মামলার আসামিদের মাঝে মধ্যেই হাসপাতালে নেয়া  হয়।
সূত্র জানায়, কাশিমপুর-কারাগারে আছেন সন্ত্রাসী ধানমন্ডির ইমন, ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা অন্যতম সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম ও মহাখালির আক্তার, কিলার আব্বাস, লিটন, পিচ্চি হেলাল ও রফিক। হাই সিকিউরিটিজ সেলে রয়েছেন সুইডেন আসলাম, আরমান, খোরশেদ আলম রাসু। এদের মধ্যে কোন কোন সন্ত্রাসীর বন্দি জীবনের যুগ পেরিয়ে গেলেও অপরাধ জগতে তাদের আধিপত্য কমেনি। বিভিন্ন মামলায় ঘনঘন হাজিরা দেখিয়ে তারা আদালতে আসার সুযোগ নেয়। সেখানে বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সাক্ষাৎ মেলে। এ সময় মোবাইলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের হুমকি দেয়।  
কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন কারাগারে থেকে অপরাধ করার সুযোগ নেই। মোবাইল ফোন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বাসনো হয়েছে জ্যামার। এছাড়া নিয়মিত কারাগার পরিদর্শন করা হয়। সকল বন্দির গতিবিধি এবং তাদের সাথে কারা সাক্ষাৎ করছে সেগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শুধু চিহিৃত সন্ত্রাসীরাই নয় কোন বন্দিই যাতে অন্যায় কিছু করতে না পারে এ জন্য কারা কর্তৃপক্ষ সতর্ক রয়েছে। একাধিক মামলার আসামিদের মাঝে মধ্যে এক জেল থেকে অন্য জেলে স্থানান্তর করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ