Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়া-হরিপুর সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে ২৪ মার্চ

গণমানুষের প্রাণের দাবিগুলো বাস্তবায়নের পথে

| প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দ্রুত এগিয়ে চলেছে মেডিকেল কলেজ ও বাইপাস সড়কের কাজ
এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে : কুষ্টিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিগুলো আটকে ছিল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির বলয়ে। তবে গত ৩ বছরে তা বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শহরের বাইপাস সড়ক সুইমিংপুল নির্মাণসহ অনেকগুলো প্রকল্প প্রায় শেষের পথে। সমাপ্ত হয়েছে কুষ্টিয়া হরিপুর সংযোগ সেতু নির্মাণের কাজ। এখন তা উদ্বোধনের অপেক্ষায়। দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার পর অচিরেই এসব উন্নয়নের সুফল পেতে যাচ্ছে কুষ্টিয়াবাসী।
সূত্রমতে, দীর্ঘদিন পর কুষ্টিয়ায় এই প্রথম এক সাথে বেশ কয়েকটি বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হতে চলেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ওয়াদা করেছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরে এসব উন্নয়নের ট্রেন দ্রæত চলতে শুরু করে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ নির্বাচনের আগে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ওয়াদা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বহু প্রতীক্ষিত বড় বড় এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় খুশি এলাকার সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মীরা।
জানা যায়, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর শহরের হাউজিং এলাকায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে বেগম খালেদা জিয়াও এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ওয়াদা করেছিলেন। বিএনপি সরকার কয়েক দফায় ক্ষমতায় থাকলেও মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়।
পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি নির্বাচিত হলে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কুষ্টিয়া- হরিপুর সেতু ও কুষ্টিয়া শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ বাস্তবায়নের ওয়াদা করেন।
তবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগেই বিশাল অনুষ্ঠান করে শহরের হাউজিং এলাকায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের গা ঘেঁষে লাহিনী মৌজায় মূলভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ স্থানটি পৌর এলাকার ২১নং ওয়ার্ডের অর্র্ন্তভুক্ত। গণপূর্ত বিভাগ এ কাজ বাস্তবায়ন করছে। ২০ একর জায়গার ওপর মেডিকেল কলেজ নির্মাণের কাজ চলছে। তবে সবগুলো ভবন নির্মাণের জন্য আরো ৫ একর অতিরিক্ত জায়গা প্রয়োজন। মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৫ কোটি টাকা।
কুষ্টিয়া গণপূর্ত-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও ৫০০ বেডের হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। তবে একাডেমিক ভবন, ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল, চিকিৎসকদের ডরমিটরি ভবন, অধ্যক্ষের বাসভবন নির্মাণের কাজ শেষের পথে। কয়েক মাসের মধ্যে এ সব ভবন হস্তান্তর করা হবে। তবে এর ব্যয় আরো ২৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজুল হক বলেন, জুন মাসেই নতুন ভবনে ওঠার কথা ছিল। তবে সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ নতুন ক্যাম্পাসে যেতে পারব বলে আশা করছি।
উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দি কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম বলেন, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক সরকারের আমলে নির্বাচনের আগে ভোট নেয়া হয়েছে। তারপরও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু ও বাইপাস সড়ক নিয়ে বারবার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমাদের নেতা হানিফ ভাইয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এসব কাজ বাস্তবায়ন হওয়ায় আমরা খুশি।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া-হরিপুরবাসীর যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করতে গড়াই নদীর ওপর কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল তাদের। সেতু বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম কমিটিও করেন তারা। একইভাবে শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণের দাবিতে সোচ্চার ছিল সদর উপজেলার লোকজন।
বিএনপি সরকারের সর্বশেষ মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগে কুষ্টিয়া-৩ আসনের তৎকালীন এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন তড়িঘড়ি করে গড়াই নদীর উপরে কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতুর ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন। আর তাদের আমলের যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমূল হুদাকে দাওয়াত দিয়ে এনে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বটতৈল এলাকায় বাইপাস সড়ক নির্মাণের নামে একটি ভিত্তিপ্রস্তর খাড়া করা হয়। তবে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকার চলতি মেয়াদে এসে গড়াই নদীর ওপর হরিপুর সেতুর কাজ শুরু করে। ৮১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০৪ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। নদী শাসন ও সংযোগ সড়কের কাজও শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসের ২৪ মার্চে জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
কুষ্টিয়া এলজিইডির নিবার্হী প্রকৌশলী মো. সোহরাব আলী বলেন, মূল ব্রিজের কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি কাজও দ্রæত এগিয়ে চলেছে। আগামী ২৪ মার্চ এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এ সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। তারপর তা খুলে দেয়া হবে চলাচলের জন্য। এ সেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে হরিপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। সেতুটি নির্মাণের পর কুষ্টিয়া-হরিপুর ইউনিয়ন, কয়া ইউনিয়ন, শিলাইদহ ইউনিয়নের ৫ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত হবে।
কুষ্টিয়া শহর বাইপাসের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। শহরের বটতৈল থেকে শুরু হয়ে ত্রিমোহনী এলাকায় গিয়ে শেষ হচ্ছে সড়কটি। ৬.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭১ কোটি টাকা।
এছাড়া জেলা পরিষদ গড়াই নদীর তীর ঘেঁষে একটি মনোরম পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। ৩১ একর জায়গার ওপর পার্কটি নির্মাণ করা হবে।
জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ শাহিনুজ্জামান বলেন, পার্কের বাউন্ডারি ওয়ালের নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ ও শোভা বর্ধনের কাজ চলছে।
এছাড়া শহরের হাউজিং এলাকায় মেডিকলে কলেজ সংলগ্ন ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলি ও জি কে সেচ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ নৈমুল হক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে শিলাইদহ কুঠিবাড়ির পাশে পদ্মা নদী সংলগ্ন সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এছাড়া ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে দৌলতপুর উপজেলায় পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে আবেদের ঘাট সংলগ্ন ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ চলমান। তিনি জানান, জিকে সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন প্রকল্পের পুনর্বাসন কাজ ১৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী বলেন, মাহবুব উল আলম হানিফের নেতৃত্বে দেশের অন্য যে কোনো জেলা থেকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কুষ্টিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় সব প্রকল্প শেষের পথে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় আগামীতে অন্য দলের ভোটের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ