Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিআইডবিøউটিসির জাহাজ পরিচালনে অব্যবস্থাপনা

| প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আইয়ুব আলী : অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে জাহাজ ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে বিপুল অংকের লোকসান গুনছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডবিøউটিসি)। সংস্থার সি-ট্রাকগুলো উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভাড়া দেয়া হলেও অভিযোগ রয়েছে, বড় বড় জাহাজগুলো বিশেষ মহলের যোগসাজশের মাধ্যমে উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই নামমাত্র দরে ভাড়া দেয়া হয়। এমনকি একই ব্যক্তিকে এসব জলযান ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ভাড়া দেয়ায় বিআইডবিøউটিসির বিপুল অংকের লোকসান হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলসিটি কাজল থেকে বিআইডবিøউটিসি মাসিক ভাড়া পায় ৮০ হাজার টাকা। অথচ ওই জাহাজে বিআইডবিøউটিসির স্টাফকে বেতন বাবদ পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে গত ৮ বছরে বিআইডবিøউটিসির লোকসানের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। একই ব্যক্তির কাছে উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই নামমাত্র দরে এমভি সোনারগাঁও নামে আরো একটি জাহাজ ভাড়া দেয়া হয়েছে। এলসিটি কাজল বর্তমানে নৌপথে চরম ঝুঁকি নিয়ে পর্যটক বহন করছে। এটির চলাচলের মতো সক্ষমতা নেই বলে গত ৫ মার্চ সংস্থার নিজস্ব তদন্ত দল কর্তৃক নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে প্রেরিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। বিআইডবিøউটিসি সূত্র জানায়, ৪০ বছরের পুরনো জাহাজ এলসিটি কাজল চট্টগ্রামের কুমিরা-স›দ্বীপ রুটে চলাচলের পর এখন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বিআইডবিøউটিসির উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শেখ মো: নাসিম গত ১৯ জানুয়ারি সাধারণ বীমার সহকারী জেনারেল ম্যানেজারকে এক চিঠিতে এলসিটি কাজলের বিপরীতে বর্তমানে কোনো বীমা নেই বলে জানিয়েছেন। জাহাজটির চার্টার গ্রহীতা কোনো রক্ষণাবেক্ষণ না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে আরো কয়েক গুণ বেশি ভাড়ায় এটি উপভাড়া দিয়েছে। এ বিষয়ে বিআইডবিøউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ঢাকাকে অবহিত করা হলেও রহস্যজনক কারণে অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জাহাজের ভাড়াটিয়া কোনো শর্ত পূরণ ছাড়াই বিআইডবিøউটিসির কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে নিয়মবহির্ভূতভাবে জাহাজ পরিচালনা করছে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে সাড়ে ৭শ’ পর্যটক নিয়ে যাওয়ার পথে গত বছরের ১১ জানুয়ারি দীর্ঘ সময় ডুবোচরে আটকা পড়ে এলসিটি কাজল, যা ধারণক্ষমতার দুই গুণ বেশি। এ সময় আটকা পড়া পর্যটকদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে। দীর্ঘ সময় পর সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলার এসে আটকে পড়া পর্যটকদের নিরাপদে সেন্টমার্টিনে নিয়ে যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এলসিটি কাজল প্রায় ৮ বছর আগে স›দ্বীপ চ্যানেলে চলাচলের চেষ্টা করে ঢেউয়ের কারণে ব্যর্থ হয়। গত বছরের ২৫ এপ্রিল এলসিটি কাজল ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে বলে জানিয়ে বিআইডবিøউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) বরাবর চিঠি দিয়েছেন জাহাজের ই: মা: অফিসার মোহাম্মদ আলী। প্রেরিত চিঠিতে তিনি বলেন, এলসিটি নৌযানটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা সত্তে¡ও মেরামতের কাজ না করেই বঙ্গোপসাগরের মুখে বিপজ্জনক অবস্থায় শতভাগ দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে চালানো হচ্ছে। জাহাজের নাবিক-স্টাফ ও যাত্রীরা যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। জাহাজটির মেইন ইঞ্জিন শ্যাফটের গø্যান্ড প্যাকিং অতিরিক্ত ফাঁকা, তলার ও সাইজের প্লেট অতি দুর্বল হওয়ায় বড় ছিদ্র হয়ে বিভিন্ন স্থান দিয়ে প্রচুর পানি প্রবেশ করছে, যা অপসারণের অবস্থা অপ্রতুল। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে জাহাজটির প্লেট গেজিং না করে বটম প্লেটের কাজ, ডাবল বটমের জায়গায় সিঙ্গেল বটম, ফোর ক্যাসেল প্লেটের উপর সিমেন্ট ঢালাই এবং একটি জেনারেটর ও জিপিএস নষ্ট অবস্থায় ব্রিজ রুমে রাডার ব্যতিরেকে জাহাজটির উপরিভাগে শুধু রঙের প্রলেপ দিয়ে দায়সারাগোছের মেরামত কাজ করে সার্ভে রিপোর্ট দেয়া হয় নৌ-বাণিজ্য অধিদফতর থেকে। বর্তমানে ইজারা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে উপভাড়ায় জাহাজটি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ