Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘গণহত্যা দিবস’ নিয়ে ক‚টনৈতিক তৎপরতা চালাবে বাংলাদেশ : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে

| প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আহমদ আতিক, চট্টগ্রাম থেকে : আগামী ২৫ মার্চের আগেই বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে গণহত্যাবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, গণহত্যাবিষয়ক জাতিসংঘের আরেকটি দিবস থাকায় বাংলাদেশের এ স্বীকৃতি পাওয়া বিশেষ জটিলতার মধ্যে পড়তে পারে। তবে গণহত্যা দিবস পালনে স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্য বাংলাদেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম থেকে কোস্টগার্ডের জাহাজ তাজউদ্দিনে করে সমুদ্র এলাকা পরিদর্শনকালে ইনকিলাবসহ বেশকয়েকটি গণমাধ্যমকে শাহরিয়ার আলম বলেন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের পাশে যারা ছিল সেই রাষ্ট্রগুলোকে ও রাষ্ট্রের জাতীয় সংসদ বা আইনসভাগুলোকে আমরা গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য বলব। যে রাষ্ট্রগুলো আমাদের পাশে ছিল, আমরা আশা করি এ দিবসটির স্বীকৃতি তারা সবার আগে দেবে। তাদের স্বীকৃতির পরে আসবে বাকি দেশগুলোকে উদ্বুদ্ধ করার কাজ।
তিনি বলেন, ঘটনাটি ৪৫-৪৬ বছর আগের। এখন যারা আইন প্রণেতা, রাষ্ট্রনেতা আছেন তাদের নতুন করে বিষয়টি জানাতে হবে। ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিলেন, দুই লাখেরও বেশি নারী নির্যাতিত হয়েছিলেন, সেটি পাকিস্তানি বাহিনী ২৫ শে মার্চ ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে শুরু করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী নয় মাস এটি অব্যাহত রেখেছিল।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ ইতোমধ্যে ২০১৫ সালে ৯ ডিসেম্বর গণহত্যা সনদ গ্রহণ করেছে। সেখানে দিবসটিকে সরাসরি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস না বলে গণহত্যার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে একটি দিবস ঘোষণা করেছে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস এটি হবে না। তবে যেটা সম্ভব সেটি হলো এটা যে গণহত্যা ছিল তার স্বীকৃতি আদায় করে নেয়া। এটি করার জন্য আমাদের কিছু ‘ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং’ দরকার। আমাদের সেভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আমরা ইতোমধ্যে জাতিসংঘে ও জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদে পাঠিয়েছি। ওই দুই সংস্থার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কী কী কাজ করতে হবে তারা তা খোঁজ নিয়ে দেখবেন। সেখানে তারা ‘ফ্যাক্টস ফাইন্ড’ করবেন এবং আমরা সেগুলো বিশ্লেষণ করে পরবর্তি কর্মপন্থা নির্ধারণ করব।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, আগামী ২৫ মার্চের আগেই বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে গণহত্যাবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হবে। সে অনুযায়ী মিশনগুলো তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা উদাহরণ হিসেবে রুয়ান্ডার গণহত্যাকে জাতিসংঘের স্বীকৃতির বিষয়টি নিতে পারি। রুয়ান্ডার গণহত্যার জন্য আলাদাভাবে একটি দিবস পালনকে জাতিসংঘ সমর্থন করে। রুয়ান্ডার গণহত্যার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের গাফিলতি একটি বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন ছিল। আমাদের দেশের মানুষের স্বাধিকার আদায়ের যে সংগ্রাম তাকে দমন করার জন্য পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল।
তিনি বলেন, আমাদের উদ্যোগটি নতুন উদ্যমে শুরু হলো। এখানে আমাদের যতটুকু রসদ দরকার তা সবই আছে। এই ইতিহাসের মধ্য দিয়ে আমরা বেড়ে ওঠেছি। কেউ যদি নিজেকে বাঙালি বা বাংলাদেশি হিসেবে দাবি করেন তাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে।
কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার
বঙ্গোপসাগরে মহড়ায় কোস্টগার্ডের জাহাজ সিজিএস তাজউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলেছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, সরকার এখন সমুদ্রের সম্পদ সংরক্ষণে কোস্টগার্ডকে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এই বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে।
গতকাল কোস্টগার্ডের সিজিএস তাজউদ্দিন জাহাজের মহড়া পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। কোস্ট গার্ডের টহল কার্যক্রম পরিচালনা, অন্য জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল ও শত্রæপক্ষ দমনে শক্তিশালী কামান ব্যবহার করার মহড়া দেখতে এই বাহিনীর আমন্ত্রণে বঙ্গোপসাগরে যান গণমাধ্যমকর্মীরা। এসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমুদ্র সীমানা সংরক্ষণের দায়িত্ব কোস্টগার্ডের ওপরে পড়েছে। তাই কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। কোস্ট গার্ডের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, ধীরে ধীরে আমাদের বিশাল সমুদ্র সম্পদের মূল্যায়ন হওয়া উচিত। এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
কোস্টগার্ডের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, আগে পাশের দেশ থেকে ট্রলার এসে মাছ ধরে নিয়ে যেত, কিন্তু সেই সংখ্যা এখন শূন্যের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। সবাই এ বার্তা পেয়েছে যে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গেলে ছাড় পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, সাবমেরিন অন্তর্ভুক্তির ফলে সারা বিশ্বে আমাদের নৌবাহিনীর অবস্থান ১৩৭ থেকে উন্নীত হয়ে ৪৬তম হয়েছে। এ বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা রয়েছে। এর পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় সার্ক স্যাটেলাইটেও যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা আছে বাংলাদেশের।
কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সা¤প্রতিক জঙ্গি হামলাকে সরকার বিবেচনায় নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে কোস্টগার্ড শুধু সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত। কিন্তু সমুদ্রপথে মাদক, অস্ত্রসহ নানা রকম চোরাচালান যে হয়ে থাকে, তা কিন্তু শেষ পর্যন্ত জঙ্গিবাদে অর্থায়নের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে জঙ্গিবাদ দমন বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের আওতায় কোস্টগার্ড ভূমিকা রাখবে।’
এসময় কোস্ট গার্ডের উপ-মহাপরিচালক কমোডর ইয়াহিয়া সাঈদ সাংবাদিকদের বলেন, কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা বাড়াতে নানা প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা ১১টি নতুন জাহাজ, জাহাজ টেনে আনার জন্য টাগ এবং স্যালভেজ জাহাজ তৈরি করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা এর মধ্যে চারটি অফশোর পেট্রোল ভেসেল সংগ্রহ করেছি, যার দু’টি কোস্টগার্ডে সংযুক্ত হয়েছে এবং বাকি দু’টি আগস্টে সংযুক্ত হবে। এগুলো ইতালি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
কমোডর ইয়াহিয়া সাঈদ জানান, স¤প্রতি খুলনা শিপইয়ার্ডে দুটি বৃহদায়তনের টহল জাহাজ নিজেদের অর্থায়নে তৈরি করেছে বাংলাদেশ। সাবমেরিন টেনে আনার জন্য যে বিশেষ ধরনের টাগ ব্যবহৃত হয়, সেটিও খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি করা হয়েছে। নারায়াণগঞ্জ শিপইয়ার্ডেও কোস্ট গার্ডের জাহাজ তৈরি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সিজিএস তাজউদ্দিন ও সিজিএস নজরুল বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী জাহাজ। এ দু’টি জাহাজ গত জানুয়ারি মাসে কোস্ট গার্ডেসংযুক্ত হয়। একটি জাহাজে শত্রæকে পরাস্ত করার জন্য শক্তিশালী কামান এবং অন্য জাহাজে আগুন নেভানোর কামান ও সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টি-পলিউশন গিয়ার রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ