Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

ইসির কঠোর নির্দেশনা : সীমা-সাক্কুকে নিয়ে আগামীর ভাবনায় ভোটাররা

| প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে কোনোভাবে যাতে ভোটারদের অধিকার ক্ষুণœ না হয় সেদিকে কড়া সতর্ক দৃষ্টি রাখতে নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল দৃঢ়তার সাথে বলেছেন কুমিল্লা সিটির ৩০ মার্চের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচন কমিশনের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে এ নির্বাচন নিয়ে নিরাপত্তা ও নির্বাচনী কাজে নিয়োজিতদের কোনরকমের অবহেলা, শৈথিল্য বরদাশত করা হবেনা। ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এজন্য নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্যে রাখতে কমিশন বদ্ধপরিকর। এদিকে নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুকে নিয়ে আগামীর ভাবনায় বিভোর সাধারণ ভোটাররা। নাগরিক সুবিধা ও নগর উন্নয়নে কে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারবেন এনিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ রাখতে চায় না নির্বাচন কমিশন। শান্তিপূর্ণ ভোটদানে বাধা, হুমকি বা অন্য কোনো উপায়ে ভোটারদের অধিকার ক্ষুণœ করার অপচেষ্টা রোধে কঠোর ভূমিকায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে জানান, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু করার ব্যাপারে প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। ভোটাররা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে এরকম ব্যবস্থা করবে কমিশন। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। আর এর প্রমাণ মিলবে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিদিন সবকটি ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি, ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিম যথাযথভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সীমা-সাক্কুকে নিয়ে ভোটারদের ভাবনা
কুসিক নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার শেষের দিকে আলোচিত দুই মেয়র প্রার্থী সীমা ও সাক্কুর ভালো-মন্দের খবরটাই বেশি চাউর হচ্ছে ভোটারদের মুখে মুখে। দুই মেয়র প্রার্থী দলীয় প্রতীক নির্ভর হলেও দলমতের উর্ধ্বে থাকা ভোটারদের ভাবনা চিন্তায় ভর করেছে যোগ্য নগরকর্তা নির্বাচিত করার বিষয়টিতে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থকরা রাজনৈতিকভাবে নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে সমালোচনার জায়গায় থাকলেও নগরীর অন্তত ত্রিশভাগ সাধারণ ভোটারের ভাবনা আগামীর স্বপ্নের নগর কুমিল্লাকে নিয়ে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের এসব সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নিম্ন আয়ের লোকজন, সাধারণ চাকরিজীবী, মধ্যমশ্রেণীর ব্যবসায়ী, সংগঠক ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধি রয়েছেন। যারা নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের মাঠে আলোচিত প্রার্থী সীমা ও সাক্কুর ভালো-মন্দ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। আর এভাবনা থেকেই এসব ভোটাররা ৩০মার্চ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। এসব সাধারণ ভোটারদের মাঝে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে আফজল খান কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমার ভোটযুদ্ধ অনেকটা প্রেস্ট্রিজ রক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ভোটারদের অনেকেই বলছেন সাংগঠনিক কাঠামোবিহীন একটি নতুন সিটির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সাক্কু নগরীকে অনেকটা বর্ণিল করে সাজিয়েছেন। ও যানজট রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে ড্রেনেজ কাজ তদারকি করেছেন। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ডিভাইডার স্থাপন করেছেন। তিনি নগরবাসীর ওপর অত্যাধিক করের বোঝা চাপিয়ে দেননি। নগরীর অন্তত ৮০ভাগ রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, কালভার্ট, ডাস্টবিন সংস্কার ও উন্নয়ন হয়েছে। বস্তিবাসীর উন্নয়নে দারিদ্র্য হ্রাসকরণ প্রকল্পে পেয়েছেন সফলতা। সিটি করপোরেশনের অধীনে নগর স্বাস্থ্যসেবায় যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমনি নগর মাতৃসদনগুলোর কার্যক্রমে রোগীরা হয়েছেন সন্তুষ্ট। সিটি করপোরেশনের টেন্ডার নিয়ে বন্ধ হয়েছে বাণিজ্য। নগরভবনের দরজা সব মানুষের জন্য ছিল উন্মুক্ত। এসব সাধারণ ভোটারের অনেকের ভাবনা নগর কর্তার আসনে ফের সাক্কু ফিরে এলে নগরীর উন্নয়নে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন এবং মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে একটি পরিকল্পিত মডেল নগরীতে রূপান্তরিত করবেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিটির সাবেক কাউন্সিলর আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের ভাবনায় নগর কুমিল্লাকে এগিয়ে নেয়ার বিষয়টি ফুটে ওঠেছে। এসব ভোটাররা মনে করছেন রাজনৈতিক গন্ডির বাইরে সীমা তার কমিটমেন্ট রক্ষা ও বাস্তবায়নে এক অসাধারণ নারী ব্যক্তিত্ব। আফজল খান পরিবারের নানা সমালোচনার উর্ধ্বে রেখে সীমার নির্ঝঞ্জাট পথচলা সব শ্রেণীপেশার মানুষের নজর কেড়েছে। কাউন্সিলর পদে দায়িত্বে থেকে ওয়ার্ডবাসীর জন্য সীমার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল প্রশংসনীয়। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে হয়েও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার দুস্বপ্ন সীমাকে ছুঁতে পারেনি। পেশা হিসেবে শিক্ষকতা বেছে নিয়ে স্বচ্ছতা, সততায় সীমা ওঠে এসেছেন জনপ্রিয়তার কাতারে। আগামীদিনে সীমার মতো একজন নগরকর্তার স্বপ্ন দেখছেন এসব সাধারণ ভোটাররা। তারা মনে করেন সীমা মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। নগরীর রাস্তায় সঠিক নীতিমালা ও পরিকল্পনার মধ্যদিয়ে সবধরনের যান চলাচল করলেও যানজট হবেনা। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণে কঠোর ভূমিকা নিয়েও সফল হবেন। নগর ভবনের সকল অনিয়ম দুর্নীতি বিদায় করাটা সীমার পক্ষেই সম্ভব বলে মনে করেন সাধারণ ভোটাররা। নগর উন্নয়নে এবারের নির্বাচনে নগরকর্তার আসনে পরিবর্তন আসবে বলেও সাধারণ ভোটারদের অনেকেই তাদের আগামীর ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
কুসিক নির্বাচনী এলাকায় পুলিশি হয়রানি বন্ধ রাখতে নির্বাচন কমিশনের চিঠি
স্টাফ রিপোর্টার : আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকায় সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানি বন্ধ রাখতে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজি, বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসারকে দেয়া হয়েছে বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছেন ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি
কমিশনের নির্দেশনাপত্রে বলা হয়েছে, যেখানে নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নির্দেশ দিচ্ছে, সেখানে কোনো ভয়ভীতি ও শিথিলতার অবকাশ নেই। এ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো ধরনের শৈথিল্য বরদাশত করা হবে না। সেখানে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কারও প্রতি কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। সেখানে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে নির্বাচনের সময় গ্রেপ্তার করা ঠিক না। এ নিয়ে কোনো খারাপ কথা শুনতে চাই না। নির্বাচনের তিনদিন পর্যন্ত এ আদেশ বলবদ থাকবে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা নিরপেক্ষ করতে ওসিকে প্রত্যাহার করেছি। আরো পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুসিক নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। প্র্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধি ও আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় করেছি। এ সভায় চার মেয়র প্রার্থী, ১১৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৪০ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল সদস্যরা ছিলেন। কমিশনার বলেন, সেখানে আমি বলেছি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। এ ক্ষেত্রে কারও প্রতি কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। এ নির্বাচন আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা। সমগ্র জাতি এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি বলেন সেখানে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে নির্বাচনের সময় গ্রেপ্তার করা ঠিক না।
কমিশনের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচন কমিশন তাঁর অস্তিত্বের প্রশ্নে আপস করবে না। আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনীয় এলাকায় কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানি করা যাবে না তা বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিছু ঘটলে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সম্মিলিত গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও কুসিক নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবিতে নাগরিক মানববন্ধনে এ দাবি জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা বাতুলতা ছাড়া কিছুই নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাত্রলীগ আর জনতার মঞ্চের ক্যাডার। তার কাছে কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করা যায়?।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ