পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরিত্যাক্ত হতে পারে মোবারকপুর গ্যাসফিল্ড; সরকারি অর্থের অপচয় ও লুটপাট করে পালাতে চাইছেন সংশ্লিষ্টরা- দাবি এলাকাবাসীর
মুরশাদ সুবহানী, পাবনা থেকে : গ্যাসের চাপ কম, বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন করা যাবে না বলে পাবনা জেলার মোবারকপুরের দেশের ২৭তম গ্যাস ফিল্ড যে কোন মুহুর্তে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হতে পারে। সংশ্লিষ্টর দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে মওজুদ গ্যাস উত্তেলনের পর তা জাতীয় গ্যাস লাইনে সংযোগ দেওয়ার সম্ভবনার দৃঢ় আশাবাদের কথা জানালেও এখন সংশয়ের কথা বলা হচ্ছে। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা এই গ্যাস ফিল্ড পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হতে পারে যে কোন সময়। এলাকাবাসী এটা মানতে পারছেন না, তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তাদের কন্ঠে প্রতিবাদ এবং সরকারি অর্থ অপচয়-লুটপাটের কথা শোনা যাচ্ছে। দেশের উত্তরের ১৬ জেলাসহ সব জেলার মানুষের বহুদিনে প্রতীক্ষার বাস্তবায়নে এলাকাবাসী পাবনার মোবারকপুরে গ্যাস ফিল্ডের কার্যক্রম এবং গ্যাস উত্তেলন করার কথা জোর দিয়ে বলছেন। প্রায় ৩৭ বছরের কিছু আগে পাবনার সুজানগর উপজেলায় নদীর কিনার ঘেঁষে তেল ভাসতে দেখে এলাকার মানুষজন। সে সময় ধারণা করা হচ্ছিল, ফেরি, লঞ্চ থেকে নদীর পানিতে ভাসা তেল বর্ষায় কিনারে চলে এসেছে। অপরদিকে, এক সময় দৈনিক ইনকিলাবে এই প্রতিবেদক এক ভূ-তত্ত¡ ও নদী বিশেষজ্ঞের মতামত তুলে ধরে, জানিয়েছিল পদ্মা ও যমুনা নদী বেষ্টিত পাবনা জেলায় গ্যাস, তেল ও অন্যান্য খনিজ সম্পাদ থাকার সম্ভবনার কথা। ভূ-তত্ত¡বিদ জনাব শহীদুল করিমের মন্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, নদীতে ডুবে যাওয়া, গাছ, প্রাণি ও অন্যান্য সম্পদ দীর্ঘ বিবর্তনে গ্যাস ও অন্যান্য সম্পদে পরিণত হয়। বাপেক্সের পক্ষ থেকে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জার্মানের একটি কোম্পানি জিজিএজি উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় গ্যাস ও তেল ক‚পের অনুসন্ধানে সার্ভে কাজ পরিচালনা করে। এ সময় পাবনার সুজানগর উপজেলায় এই পরীক্ষা চালানো হয়। পরে এখান থেকে সরে গিয়ে সাঁথিয়া উপজেলাধীন মোবারকপুর গ্রামে তেল ও গ্যাসের সম্ভাব্য মজুতের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। মোবারকপুর গ্রামের কূপের প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার গভীরে প্রায় ২০০ থেকে ১ হাজার বিলিয়ন ঘন ফুট গ্যাস এবং প্রায় ২.১ মিলিয়ন (২১ লাখ) ব্যারেল তেল মজুদ আছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। এরপর এই গ্যাস উত্তোলনের জন্য ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে তৎকালীন বিএনপি সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ০৬ জুন ,২০০৬ সালে একনেক বৈঠকে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার “মোবারকপুর অনুসন্ধান ক‚প খনন প্রকল্প” নামে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পে শর্ত দেওয়া হয় যে, কূপ খননের পূর্বে গ্যাস পাওয়ার বিষয়ে ভূ-তাত্তি¡ক দ্বি-মাত্রিক (টু-ডি) সার্ভের ফলাফল ভালো হলেই অনুসন্ধান করার অনুমতি পাওয়া যাবে। পরে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেখানে ১৬০.৩৮ কি.মি. লাইন টেনে সার্ভে সম্পন্ন করা হয় এবং ডিসেম্বর মাসে এর ফলাফল প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। টু-ডি’র প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে বাপেক্স সেখানে গ্যাসের অস্তিত্বে ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে। কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রকল্পের কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি।
এরপর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট সরকার গঠনের পর মোবারকপুর ক‚প খনন প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাগিদ দেন। বিগত ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ৮৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা অর্থায়নে এই প্রকল্পটি পুনরায় অনুমোদন দেয় হয়। পরে বাপেক্স টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে মোবারকপুর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে সাঁথিয়া উপজেলার পাগলাদহ, চন্ডিপুর ও বিষ্ণুবাড়ীয়া মৌজায় প্রায় ৯ একর জমি ২০১০ সালে ২ বছরের জন্য লীজ নিয়ে নতুন কাঠামো গড়ে সেখানে প্রকল্পটি স্থানান্তর করে। অবকাঠামো নির্মাণের পর প্রায় দু’বছর ’রিগ’ মেশিন যথা সময় না পাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এ কূপ খনন কাজ শুরু করা যায়নি। সময়সীমা আবার বাড়িয়ে ’রিগ’ মেশিন পাওয়া সাপেক্ষে ২০১৪ সালে কূপ খননের সিদ্ধান্ত হয়। অবশেষে বাপেক্স নতুন ভাবে রিগ মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ব্যাপারে মোবারকপুর তেল- গ্যাস কূপ খনন প্রকল্পের প্রকল্পর তৎকালীন পরিচালক মো. আতাউর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, চীনের হুয়াং হু কোম্পানি থেকে ১৯০ কোটি টাকা দিয়ে রিগ মেশিন কেনা হয়েছে যা ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর এসে পৌঁছেছে। এই সব মেশিনারিজ দিয়ে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পাগলাদহ, চন্ডিপুর ও বিষ্ণুবাড়ীয়াস্থ মোবারকপুর তেল-গ্যাস ক‚প খনন প্রকল্প এলাকায় তেল ও গ্যাস সন্ধানে কূপ খননের কাজ শুরু হয়। ১৫ হাজার ফুট পর্যন্ত খনন করার পর নিশ্চিত হওয়া যায় এখানে গ্যাসের মওজুদ রয়েছে।
এখানে কর্তব্যরত বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানা যায়, মোবারকপুরে কূপের মুখে আগুন দিয়ে গ্যাসের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া গেছে। আগুন নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন কূপে ভূ-তাত্বিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এরপরই বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। পাবনার মোবারকপুরে গ্যাস ক্ষেত্রে গ্যাসের অস্তিত্ব বিদ্যমান এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, তবে নানা জটিল ভূ-তাত্তি¡ক কাঠামোর কারণে কূপ খননের আরও কাজ বিঘিœত হচ্ছে। যে কারণে সময় বেশি লাগছে। তবে আশা করছেন, জটিলতা দূর করে যথা শিঘ্রই বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু করার জন্যে। দীর্ঘ ৩৭ বছর অপেক্ষার পর আবিস্কৃত পাবনার মোবারকপুরে দেশের ২৭তম গ্যাস ফিল্ড হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করা হলেও এখন এখানে বাণিজ্যিকভাবে এ বছর ১৯ জানুয়ারি ক‚পের ৪ হাজার ২২০ থেকে ৪ হাজার ২২৩ এবং ৪ হাজার ২৪০ থেকে ৪ হাজার ২৪৪ মিটার গভীরে দুইটি স্তরে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এখন চাপ আশানারূপ নয় বলে বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বাণিজ্যিকভাবে এই গ্যাস উত্তোলন করা যাবে না বলেছেন।এটাকে ষড়যন্ত্র বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।
মোবারকরপুর গ্যাস ফিল্ড এলাকার আশপাশের বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রথম প্রজ্জ্বলনের পর সংশ্লিষ্ট গ্যাসের চাপ এতো বেশি যে, তা উত্তোলন করার মতো যন্ত্রই নাকি তাদের নেই। কয়েক দফা যন্ত্রপাতি আনার কথা বলে কাজ বন্ধও রাখা হয়। এখন হঠাৎ করেই বলা হচ্ছে, এখানে উত্তোলনযোগ্য (বাণিজ্যিকভাবে) গ্যাসই নাকি নেই। অদক্ষতা, গ্যাস ক্ষেত্র নষ্ট, সরকারি অর্থের অপচয় ও লুটপাট করে তারা এখন পালাতে চাইছে এই সব কথা বলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।