Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সোহেল হোসেনকে ফিরিয়ে দিতে মায়ের আকুতি

| প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর মারা যাওয়া মো: হানিফ মৃধার বন্ধু সোহেল হোসেনকে ফিরিয়ে দিতে আকুতি জানিয়েছেন তার মা মমতাজ বেগম। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘এক মায়ের এক ছেলে ফিরিয়ে দিন’। মমতাজ বেগম জানান, সোহেল তার একমাত্র সন্তান।
গতকাল সোমবার উত্তরায় র‌্যাব-১ কার্যালয়ের বাইরে কথা হয় মমতাজ বেগমের। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে ছেলের জন্ম। ছেলের এক বছরের মাথায় স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি ছেলেকে নিয়ে বরগুনা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভিক্ষা করে ছেলেকে বড় করেন। আজিমপুরে একটি স্কুলে এসএসসি পর্যন্ত পড়িয়েছেন ছেলেকে। ২০০৬ সালে বিয়ে দেন। ছেলের ঘরে এখন এক নাতি রয়েছে। সোহেল হোসেন গুলশান-১ এ পুরনো ফার্নিচারের ব্যবসা করেন।
হানিফের পরিবারের দাবি, হানিফের সঙ্গে সোহেলকেও র‌্যাব ধরে নিয়ে গেছে। হানিফ ও সোহেলের নিখোঁজের বিষয়ে ৪ মার্চ হানিফের ভাই মো: হালিম মৃধা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জিডি করেন।
নিখোঁজের ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মমতাজ বলেন, হানিফ আর সোহেল বন্ধু। বরিশালে চরমোনাই পীরের ওরসে গিয়ে তাদের দেখা হয়। সোহেলের এক মামা (মায়ের চাচাতো ভাই) সগীর মাস্টার ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চালান। সোহেল হানিফকে নিয়ে মামার লঞ্চে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তিনি তার মামাকে জানান, হানিফের গাড়ি তাদের নিতে আসবে। তাদের যেন কাঁচপুরে নামিয়ে দেয়া হয়। এ সময় তারা কাঁচপুর সেতুর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা হানিফের গাড়িটি লঞ্চের ছাদ থেকে মামাকে দেখান। তারা নামার পর মামা লঞ্চের ছাদ থেকে দেখতে পান, তারা গাড়িতে উঠতে গেলে কয়েকজন ধরে অন্য গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। মামা সঙ্গে সঙ্গে সোহেলের মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পান। এরপর তিনি বিষয়টি মমতাজ বেগমকে ফোন করে জানান।
ফোন পেয়েই বরগুনা থেকে মমতাজ বেগম ঢাকায় ধলপুরে ছেলের বাসায় ছুটে আসেন। সোহেলের স্ত্রী নীপা জানান, লঞ্চ যখন চাঁদপুরে, তখন শেষবার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়। তারা হানিফের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, হয়তো তার ছেলেও র‌্যাব-১ এর হেফাজতে আছে।
হানিফের মৃত্যুর বিষয়টি জানার পর এখন মমতাজ বেগম তার ছেলের বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। মমতাজ বলেন, এর মধ্যে একদিন একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। জানতে চায়, আপনি কি মন্টুর (সোহেলের ডাক নাম) মা? ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দেন মমতাজ। ওপাশ থেকে কে বলছেন জানতে চাইলে বলেন প্রশাসনের লোক। পরে ফোন দেবেন। কিন্তু কোনো ফোন আসেনি। তিনি বলেন, ‘হানিফের পরিবারের সঙ্গে র‌্যাব যোগাযোগ করেছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে করেনি। তাই আমার ছেলে কোথায়, কেমন আছে কিছুই জানি না। আমি প্রধানমন্ত্রী ও র‌্যাবকে অনুরোধ করছি, আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।’
সোহেল ও হানিফের পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম রোববার বলেছিলেন, এ ঘটনার সঙ্গে র‌্যাবের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গতকাল মমতাজ বেগম, সোহেলের স্ত্রী নিপা ও তার চার বছরের ছেলে আবির হোসেন মাহিন এবং তাদের আত্মীয় আবদুল জলিল র‌্যাব-১ এর কার্যালয়ে যান।
এদিকে নিহত হানিফের পরিবার বলেছে, রাজধানীর আশকোনায় র‌্যাব সদর দফতর ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতারের পর নিহত মো: হানিফ মৃধাকে গত ২৭ ফেব্রæয়ারি ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয় । এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল। এখনো খোঁজ নেই তার সঙ্গে থাকা বন্ধু মো: সোহেল হোসেন মন্টুর। রায়েরবাজারে হানিফের বাসায় তার স্ত্রী কুলসুম বেগম বলেন, গত ২৪ ফেব্রæয়ারি বরিশালে চরমোনাই পীরের মাহফিলে গিয়েছিলেন হানিফ ও সোহেল। সেখান থেকে ২৭ ফেব্রæয়ারি তারা লঞ্চে ফিরে আসেন। নামেন কাঁচপুর সেতুর কাছে। তাদের আনতে প্রাইভেট কার নিয়ে যায় চালক জুয়েল। সেখানে গিয়ে জুয়েল দেখতে পান সাত-আটজন নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে হানিফ ও সোহেলকে হাইয়েস গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। আর কয়েকজন এসে প্রাইভেট কারে উঠে জুয়েলকে অস্ত্র ঠেকিয়ে চালাতে বলে। এরপর তারা জুয়েলকে মারধর করে পূর্বাচলে ফেলে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় হানিফের ভাই মো: হালিম মৃধা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৪ মার্চ জিডি করেন। হালিম প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে র‌্যাব-১ –এর একটি গাড়ি ও সাদা রঙের একটি হাইয়েস গাড়ি তাদের বাসায় আসে। রায়েরবাজার শাহ আলী গলির মুখে র‌্যাবের গাড়িটি দাঁড়ায়। আর সাদা গাড়িটি বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। সাদা গাড়ি থেকে চার-পাঁচজন হানিফকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ঢোকে। এরপর বাসার লোকজনের সামনে কুলসুমকে বলে, আপনার স্বামী একটি অন্যায় কাজে সহযোগিতা করেছে। এরপর হানিফের ব্র্যাক ও ডাচ্–-বাংলা ব্যাংকের চেকবই এনে ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার চেকে সই করিয়ে নেয়। হানিফের গাড়ির ব্যবসা ছিল। তার তুরাগ পরিবহনের তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেট কার রয়েছে। তার বাড়ি বরগুনার আমতলীর আমড়াগাছিয়ায়। আর সোহেলের গুলশান-২ নম্বরে পুরনো ফার্নিচারের ব্যবসা রয়েছে।
হানিফের বেয়াই রেজাউল ইসলাম বলেন, বাসায় আসা লোকজনের মধ্যে একজনের গায়ে র‌্যাবের পোশাক ও হাতে অস্ত্র ছিল। তার বুকের মধ্যে নেমপ্লেটে ইকবাল লেখা ছিল। এ ছাড়া আর কারো নাম-পরিচয় জানানো বা বলা হয়নি। হানিফকে সঙ্গে নিয়ে আবার চলে যায়। যাওয়ার সময় বাসায় রাখা পালসার ব্র্যান্ডের একটি মোটরসাইকেলও নিয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার তারা টেলিভিশনে জানতে পারে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে হানিফ নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তখন তারা সেখানে যান। পরিচয় দেখে নিশ্চিত হন এই ব্যক্তি তাদেরই হানিফ।
এ ব্যাপারে র‌্যাব-১ এর লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম এর আগে গত শুক্রবার বলেছিলেন, র‌্যাব সদর দফতরের ফোর্সেস ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলার দিন মুন মুন কাবাবের পাশে কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিল। র‌্যাবের গাড়ি দেখে পালানোর সময় সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব অফিসে নেয়ার পরই বুকে ব্যথা শুরু হলে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২২ মার্চ, ২০১৭, ৬:৩১ এএম says : 0
    আমি যখন ছোট স্কুলে পড়ি তখন আমাদের বাসায় উর্দু কথা বলার চর্চা ছিল কিন্তু আমি কখনও নিজে এই ভাষায় কথা না বলে ইংরেজিতে কথা বলতে ভালবাসতাম কারন আমার এখনও মনে পরে আমি বলতাম অন্য ভাষা শিখলে শ্রেষ্ট ভাষা শিখব সেটা হচ্ছে ইংরেজী ভাষা। উর্দু আসার কারন আজ আমি এই ভাষার সাথে বাংলা মিলিয়ে একটা কোট করতে চাই যানাকি আমি সেসময়ে শুনতাম, সেটা হচ্ছে “ডালমে কুছ কালা হায়”। এই সংবাদটা পড়ার সাথে সাথে আমার সেই ছোট বেলায় শুনা ছোলকটা মনে পড়ে তাই পাঠকদেরকে আমার সাথে অংশিদার (শেয়ার) করলাম। আমি বিশ্বাস করি সংবাদদাতা ইনকিলাবের ষ্টাফ রিপোর্টার সঠিক সংবাদ এখানে তুলে ধরেছেন তাই তাকে প্রথমেই আমার দোয়া দিয়ে আমি আমার মন্তব্য লিখছি। এখানে সাংবাদিক সাহেব ঘটনা বলির সাথে টাকার লেন দেনের যে তথ্য দিয়েছেন এটাই তার সংবাদের সত্যতার অকাট্য মানে সঠিক প্রমানও তিনি দিয়েছেন যেমন...... এটা প্রমান করলেই “ডালমে কুছ কালা হায়” প্রমান হয়ে যাবে। আমি চাই মন্ত্রী এর জবাব দিন। উনি জনগণের প্রতিনিধি প্রথম পরে তিনি মন্ত্রী তাই ওনাকে জনগণের কাছে এর সঠিক জবাব দিতেই হবে। যদি টাকা লেন দেন প্রমান হয় তাহলে এইসব র্যা ব সদস্যকে প্রকাশ্যে ফাঁশি দেয়ার দাবী জানাচ্ছি। আমি জানি পূর্বের ন্যায় এসব ধামা চাপা দেবার জন্য সোহেলের মাকে খরিদের চেষ্টা নয়ত আরো বিভিন্ন মামলায় তার সন্তানদের অন্যায় ভাবে জড়িত করে মামলায় ফেলার প্রচেষ্টা (যা নাকি আমরা লিমন সহ অনেক ঘটনা পত্রিকায় পড়েছি) চলবে এটাও আমি দেখেছি। এখন একমাত্র ভরসা আল্লাহ্‌ ,তাই কাওর কাছে কোন প্রতিকার না পেয়ে আল্লাহ্‌তালার কাছেই সাহায্য চাচ্ছি; তিনি আমাদেরকে স্বঘোষিত দেশের রাজা মানে পুলিশের এবং তাদের রাজপুত্রদের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ