Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীতে চলছে ব্লক রেইড রাস্তায় যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিদেশীদের জন্য কূটনৈতিক এলাকা বারিধারা গুলশান বনানীতে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা : সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় চলছে দফায় দফায় অভিযান
উমর ফারুক আলহাদী : রাজধানীতে চলছে ব্লক রেইড। জঙ্গিদের বসবাসের সন্দেহজনক স্থানে চলছে ব্যাপক তল্লাশি।  কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত বারিধারা-গুলশান ও বনানীতে নেয়া হয়েছে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর মধ্যে থাকছে চেকপোস্ট, প্রতিবন্ধক গেট এবং হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে আর্চওয়ে ও লাগেজ স্ক্যানার। সন্দেহভাজন যেসব জায়গায় জঙ্গি বা অপরাধী থাকতে পারে সেসব জায়গায় তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি প্রতিরাতে নিয়মিত ব্লক রেইড দেয়া হচ্ছে। জঙ্গিরা যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে পুলিশ।
বিশেষ করে বিদেশিদের স্বার্থে ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত রাতে বনানীর ফ্লাই ওভারের কাছে, উত্তরা-আবদুল্লাহপুর, গুলশান, শাহবাগ মোড়ে, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, কলাবাগান, সংসদ ভবন, মিরপুর, গাবতলী এবং যাত্রাবাড়ি এলাকার সড়কের বিভিন্ন পযেন্টে পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। ওই স্থানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্টগুলোতে বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিশেষ করে মোটর সাইকেল এবং সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে ব্যাপক তল্লাশি করা হচ্ছে। পাশাপাশি র‌্যাব পুলিশের বিশেষ টিমের টহল অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির মুখপাত্র মিডিয়া শাখার প্রধান মাসুদুর রহমান বলেন, জঙ্গি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যখন যেখানে প্রয়োজন হয় আমরা সেখানে অভিযান চালাই। তিনি বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর থেকেই বিভিন্ন সময় বøক রেইড দেয়া হয়েছে। জঙ্গিদের সন্দেহভাজন আস্তানায় এ ব্লক রেইড দেয়া হচ্ছে। এটা এখন জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নিয়মিত অংশ বলা যায়।  
বনানী-গুলশান এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়ে উপ-কমিশনার এসএম মোশতাক আহমেদ খান বলেন, গুলশান-বানানী এলাকার হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই এলাকায় বাড়তি চেকপোস্ট বসানোর। পাশাপাশি প্রতিটি হোটেল বা রেস্তোরাঁয় আর্চওয়ে ও প্রবেশ মুখে প্রতিবন্ধক গেট স্থাপন করা হবে। সেখানে তল্লাশি শেষে লোকজন ঢুকতে পারবেন। এছাড়া বিশেষ ক্ষেত্রে হোটেলে লাগেজ স্ক্যানার বসাতে হবে। তবে লাগেজ স্ক্যানার বসাতে যেহেতু বেশি টাকা খরচ হবে, সেক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় পাবেন ব্যবসায়ীরা।
মোশতাক আহমেদ বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গুলশান-বনানী এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার হয়েছে। সার্বক্ষণিক পুলিশের টহল দল সড়কে নিয়োজিত আছে। এছাড়া, চেকপোস্ট, আর্চওয়ে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের ঠিক আগ মুহূর্তে ঢাকার আশকোনায় র‌্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পের ভেতরে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় অজ্ঞাত দুই যুবক। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় র‌্যাবের চেকপোস্টে র‌্যাবের গুলিতে নিহত হয় আরো এক যুবক। র‌্যাবের দাবি, এই যুবককে চেকপোস্টে থামার সংকেত দিলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে তাকে গুলি করা হয়। নিহতের ব্যাগ ও শরীর থেকে কয়েকটি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পরই দেশের সব বিমানবন্দর ও কারাগারে বিশেষ সতর্কতা জারি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
গতরাতে রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী, খিলগাঁও, রামপুরা, ডেমরা, যাত্রবাড়ী ও বাড্ডা থানা এলাকায় কমপক্ষে শতাধিক মেস ও বাসা বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। গতরাত ১০টায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত বøক রেইডে গ্রেফতারের সংখ্যা জানা যায়নি।  
ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়তি প্রস্ততি হিসেবে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া সব থানা এলাকায় ব্লক রেইডের নির্দেশ আগে থেকেই দেয়া ছিল।
এদিকে ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি রাতে ব্লক রেইড পরিচালনা করছে সংশ্লিষ্ট থানাগুলো।
কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন ফকির জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিরাতেই তার এলাকায় ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কাউকে আটক করা হয়নি। তিনি বলেন, ব্লক রেইড পরিচালনার পাশাপাশি কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে ধারণা দিচ্ছে। সচেতন করার চেষ্টা করছে।
এছাড়া সন্তানদের চলফেরার ওপর নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দিতে অভিভাবকদের আহŸান জানানো হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু ঢাকায় প্রবেশের অন্যতম প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী, সেহেতু আমরা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছি। জননিরাপত্তার স্বার্থে আমরা  নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করেছি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দুই দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসাবাড়ি, ছাত্রাবাস এবং মেসে চলছে পুলিশের বøক রেইড। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে। কিন্তু এসব অভিযানের পর এলাকাবাসী, বাসার মালিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। ভুক্তভোগীরা বলছেন, রাতভর বøক রেইড দিয়েও পুলিশ কোনো জঙ্গি সদস্য বা অপরাধী পায়নি। তারপরও কেন এ অভিযান। এ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। সঠিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালালে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক বাড়ির মালিক। বিভিন্ন ভবন ও বাড়ির মালিকেরা বলেছেন, ঢাকা মহানগরীতে হাজার হাজার মেস বা ছাত্রাবাস রয়েছে। এসব মেস ভাড়া দিয়েই ভবন মালিকদের সংসার চলে। কিন্তু জঙ্গি দমনের নামে এভাবে যত্রতত্র তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কিসের ভিত্তিতে গত ২ দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক বাসাবাড়িতে বøক রেইড দেয়া হলো। তবে পুলিশ বলছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযান চালানো হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, জঙ্গিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসাবেই  সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় বøক রেইড দেয়া হচ্ছে। তবে কাউকে কোন ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে না। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ব্যাচেলরদের কাছে বাসা ভাড়া দেয়া না দেয়ার ব্যাপারে বাসার মালিকদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে ভাড়াটিয়াদের সকল তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিরাতেই রাজধানীর কোথাও না কোথাও পুলিশ জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ বলছে, রাজধানীতে বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গিরা আস্তানা গড়ে তুলেছে। এসব আস্তানায় জঙ্গি প্রশিক্ষণের তথ্যও পুলিশের কাছে রয়েছে। এ কারণেই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর আগে জঙ্গি আস্তানা খুঁজে বের করার কৌশলসহ নানা ধরনের দিক-নির্দেশনা দিয়ে রাজধানীর পুলিশের সব অপরাধ বিভাগকে চিঠি দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
পুলিশ বলেছে, এসব মেসে মূলত কোচিং সেন্টারের এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা থাকে। জঙ্গি তৎপরতায় তাদের কেউ জড়িত কিনা, সেটা খতিয়ে দেখতেই তল্লাশি ও অভিযান চালানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ