Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকুন্ডে ভাড়াটিয়াদের কর্মকান্ড খতিয়ে দেখার নির্দেশ পুলিশের

আর কোথাও জঙ্গি আস্তানা রয়েছে কিনা অনুসন্ধান চলছে

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : সীতাকুন্ডের ভাড়াটিয়াদের কর্মকান্ডের উপর নজরদারি রাখাসহ তাদের সব তথ্য সংগ্রহে রাখার জন্য বাড়িওয়ালাদের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। পৗরসদরের সাধন কুঠির ও ছায়া নীড়ের মত আর কোথাও জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অবশ্য এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাড়ির মালিকরাও। তারাও চান প্রশাসন যেন সবসময় এ নজরদারি অব্যাহত রাখে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সীতাকুন্ড পৌরসদরের নামার বাজার ও চৌধুরীপাড়ার দুটি ভাড়া বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর উপজেলার আর কোথাও এভাবে ভাড়াটিয়া সেজে আস্তানা গেড়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আর কোন ভাড়াটিয়াকে হালকাভাবে দেখতে পারছে না। তাই এ ঘটনার পরপরই বাড়িওয়ালাদের কাছে ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ ও কর্মকাÐ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সীতাকুÐ থানার ওসি মোঃ ইফতেখার হাসান। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ভাড়াটিয়াদের ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বের সাথে দেখছি। ইতিমধ্যে তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছি। বাড়িওয়ালাদের বলা হয়েছে তারা যেন ভাড়াটিয়ার কর্মকাÐের নজরদারি রাখেন এবং তাদের সব তথ্য থানায় জমা দেন। আর কোথাও সাধন কুঠির বা ছায়ানীড়ের মত ছদ্মবেশে জঙ্গিরা অবস্থান করছে কিনা তা বের করতেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এদিকে পুলিশের এ পদক্ষেপ সাধুবাদ জানিয়েছেন বাড়ির মালিকরা। এ প্রসঙ্গে সীতাকুÐ পৌরসদরের এক বাড়ি মালিক মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের কাছ থেকেই আগেই ভাড়াটিয়াদের তথ্য চেয়েছিলো পুলিশ। আমরা সেসব তথ্য পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, প্রশাসনের এ তৎপরতা যেন থেমে না যায়। পুলিশ যদি এ নজরদারি অব্যাহত রাখে তাহলে আমরাও খুশি। তিনি আরো বলেন, আসলে বাড়ির মালিক হিসেবেও আমাদের বেশ কিছু কর্তব্য রয়েছে। আমাদের ভাড়াটিয়া কি কাজ করেন। তার পরিচয় সঠিক কিনা এসব জানা খুবই জরুরী। তাহলে আর সাধন কুঠির বা ছায়ানীড়ের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। একই কথা বলেন, অপর এক বাড়িওয়ালা আমজাদ হোসেনও। তিনিও বাড়িওয়ালাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে আলোচিত সাধন কুঠির থেকে ভাড়াটিয়াদের ছদ্মবেশে থাকা জঙ্গিদের হাতে নাতে ধরা যুবক সাগর ভট্টাচার্য্য বলেন, আসলেই প্রত্যেক বাড়ি মালিকের উচিত ভাড়াটিয়াদের উপর নজর রাখা। ভাড়াটিয়া আসলে কি কাজ করেন তা নিশ্চিত না হয়ে ভাড়া দিলে এরকম ঘটনা ঘটবে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, সাধন কুঠিরের জঙ্গিরা ঘরটি ভাড়া নেওয়ার পর সবসময় ঘর বন্ধ রাখত এবং তাদের চলাফেরা সন্দেহজনক ছিলো। বিষয়টি মালিক সুরেশ লক্ষ্য করায় আমাদের সাথে পরামর্শ করে ঐ ঘরের বাথরুমে কাজ করানোর নাম করে হঠাৎ সেখানে প্রবেশ করলে সন্দেহজনক সার্কিটগুলো দেখে। এতে সন্দেহ আরো বৃদ্ধি পেলে তাদের দেওয়া আইডি কার্ড যাচাই করতে গিয়ে সেটি জাল বলে ধরা পড়ে। এতেই আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই যে তারা কোন অপকর্ম করতে এসেছে। সাগর বলেন, সুরেশের মত সব বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের কর্মকাÐের দিকে লক্ষ্য রাখলে আর এমন ঘটনা ঘটতে পারবে না। বাড়ির মালিক সতর্ক না হলে পুলিশের একার পক্ষে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে ভাড়াটিয়াদের কর্মকাÐ জেনে আসা বড় কঠিন কাজ।
সীতাকুÐ পৌরসদরের চৌধুরীপাড়া এলাকার পৌরকাউন্সিলর শফিউল আলম মুরাদ প্রতিবেদককে বলেন, থানার নির্দেশ অনুসারে ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধানের বিষয়ে রবিবার মেয়র সাহেবসহ আমরা মিটিং করেছি। আমরা নিজেদের লোক দিয়ে সবগুলো বাড়ি যাচাই করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেভাবেই কাজ করব আমরা।
প্রসঙ্গত, সাধন কুঠিরে গ্রেপ্তারকৃত দুই জঙ্গি অন্যদের সাথে প্রথমে চৌধুরীপাড়ার ছায়া নীড়েই ভাড়া থাকতেন। কোন কারণে তারা আলাদা বাসা নেন নামার বাজার আমিরাবাদের সাধন কুঠিরে। এখানে ঘর ভাড়া নেওয়ার সময় জানান যে তারা কাপড়ের ব্যবসা করেন এবং তারা কক্সবাজারের রামু থেকে আসছেন বলে জানান। কিন্তু যে রিক্সায় তারা ঐ বাড়িতে এসে পৌঁছান তার সাথে আলাপকালে সুরেশ জানতে পারেন যে তারা প্রকৃত পক্ষে প্রেমতলা থেকে রিক্সাটি ভাড়া নিয়েছেন। তাহলে রামু থেকে আসার কথা কেন বলল, এমন প্রশ্ন মাথায় উদয় হলে তার সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এরপর কাজের অযুহাতে ঐ ঘরে প্রবেশ করলে বেশ কিছু সার্কিট দেখতে পায়। পরে সে সার্কিটগুলো নিয়ে টেকনিশিয়ানদের দেখালে তারা জানান, এগুলো দিয়ে বোমা তৈরী করাও সম্ভব। এতে তিনি পরিস্কার হয়ে যান যে এ ভাড়াটিয়া দম্পতি কোন জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত। পরে তাদেরকে হাতে নাতে আটক করা হয়। এরপর তাদের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চলে ছায়া নীড়ে। সেখানে গুলি ও আত্মঘাতে ৫ জন নিহত হলেও জঙ্গিদের বিস্ফোরক উদ্ধার শেষ হয়নি এখনো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ