Inqilab Logo

বুধবার, ১২ জুন ২০২৪, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে ইয়াবা পাচারের রুট বদল

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১৫ মাসে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছে ৮০ লাখ পিস
রফিকুল ইসলাম সেলিম : থামছে না ইয়াবার জোয়ার। ক্ষণে ক্ষণে রুট বদল আর নিত্যনতুন কৌশলে চলছে ইয়াবা পাচার। এ মাদক ব্যবসাকে ঘিরে পাচারকারীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ভাঙা যাচ্ছে না। ফলে দেশব্যাপী ইয়াবার আগ্রাসন চলছে। নেশার নীল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ। ইয়াবা ব্যবসাকে ঘিরে গড়ে উঠা অপরাধী চক্র হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে খুনোখুনিতে মেতে উঠছে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
এদিকে গতকাল (রোববার) ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৮ লাখ পিস ইয়াবা। এসময় মিয়ানমারের নাগরিকসহ ৮জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। উদ্ধারকৃত ইয়াবার দাম প্রায় ২৪ কোটি টাকা। এ নিয়ে গত ১৫ মাসে শুধু র‌্যাবের হাতে ধরা পড়লো ৮০ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট।
র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইয়াবা পাচারকারীরা ফের তাদের রুট বদল করেছে। পাচারকারীরা মাছের আড়ালে মিয়ানমার থেকে সরাসরি ইয়াবার চালান নিয়ে আসে বাংলাদেশে। সম্প্রতি সাগরে র‌্যাবের অভিযান জোরদার করা হয়। এ প্রেক্ষিতে টেকনাফ থেকে গভীর সমুদ্র পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কয়েকটি চালান আটক করা হয়।
এটি টের পেয়ে ইয়াবা পাচারকারীরা তাদের রুট বদল করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা ইয়াবার চালান চট্টগ্রামের আনোয়ারার গহিরা, পারকি সৈকত, পতেঙ্গা সৈকতের পতেঙ্গা ও খেজুরতলা, হালিশহর সী-বিচ, ভাটিয়ারি এবং কুমিরার উপকূলীয় অঞ্চলে খালাস করছে। সাগর-সৈকতের এসব জনবিরল অংশে সন্ধ্যায় বা রাতে এসব চালান খালাস করে তারা।
র‌্যাব জানায়, ইয়াবার বড় একটি চালান পতেঙ্গায় খালাস হচ্ছে গোপন সূত্রে এমন খবর পেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে তারা। এ ধারাবাহিকতায় কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে শনিবার মধ্যরাতে একটি চৌকষ আভিযানিক দল চরপাড়া বেড়ী বাঁধ সংলগ্ন সুইস গেইট এলাকায় অভিযান শুরু করে। অভিযান টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে র‌্যাব ৮ জনকে আটক করে। পরবর্তীতে তাদের দেখানো মতে ঘটনাস্থল তল্লাশী করে ৬ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ৮ জনের মধ্যে ৬ জন মিয়ানমারের নাগরিক।
গ্রেফতারকৃতরা হলোঃ কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা নূর কবির (৪০), মোঃ জামাল হোসেন (৪৫), মোঃ বশির আহমদ (৩৫), মোঃ জবি উল্লাহ (২৫), মোঃ বশি উল্লাহ (২৫), মোঃ আকতার হোসেন (২৩), চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব বাকলিয়ার মৃত আবু বক্করের পুত্র মোঃ আলী জোহর (৩৮), আনোয়ারার গহিরা গ্রামের আবদুল মান্নানের পুত্র মোঃ শাহজাহান (৪৫)।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, তারা মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালানটি মাছ ধরার ট্রলারে নিয়ে আসে। এর মূল মালিক আনোয়ারার দুই ভাই মোঃ হাসান মাঝি (৪০) ও মোঃ সাবের আহমেদ (২৮)। তারা আনোয়ারার দক্ষিণ পূর্ব পাড়ার মৃত আব্দুল হালিমের পুত্র। এ চালানের সাথে তাদের ভগ্নিপতি একই উপজেলার দোভাষী বাজার নতুন পাড়ার জামাল আহমেদের পুত্র মোঃ হাসান মিয়া ওরফে আজু।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, এ চক্রের সাথে আনোয়ারা গহিরার জাহাঙ্গীর, জালাল, ফয়েজ, কালা মনু, লেদু এবং মনুসহ আরও অনেকে রয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তারা। র‌্যাব জানায়, ইতিপূর্বে আনোয়ারাতে আরও কয়েকটি বড় চালান ধরা পড়েছে।
ইয়াবা চালান উদ্ধারের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযানের বর্ণনা দেন র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের কমান্ডিং অফিসার। তিনি বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকদের ইয়াবা পাচারের বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পতেঙ্গার চরপাড়ায় ইয়াবা চালানের সাথে যে ৬ মিয়ানমারের নাগরিক ধরা পড়েছে তারা উখিয়ার কুতুপালং এলাকার একটি শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা। তিনি বলেন, এদের কম টাকায় ভাড়া পাওয়া যায় এবং এদের সাথে মিয়ানমারের মাদক পাচারকারীদের যোগাযোগ সহজ হওয়ায় তাদের এ কাজে লাগানো হচ্ছে। এ প্রবণতা ঠেকাতে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বাড়ানো দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় ছোট বড় অর্ধ শতাধিক ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা ঠেলে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে। সাগর, পাহাড় ও সড়কপথে এসব চালান ঢুকে পড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার মুখে ক্ষণে ক্ষণে পাচারকারীরা তাদের রুট পরিবর্তন করছে। বর্তমানে ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালান আসছে সাগরপথে সরাসরি মিয়ানমার থেকে। পাচারকারীরা মাছ ধরার ট্রলারে লুকিয়ে এসব চালান এনে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এমনকি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব ইয়াবা খালাস করছে। বরগুনায় নিয়ে যাওয়ার পথেও বেশ কয়েকটি চালান আটক করে র‌্যাব ও কোস্টগার্ড।
সাগরপথে ইয়াবা পাচার বেড়ে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং এলিট বাহিনী র‌্যাব সাগরে টহল জোরদার করে। সাগরে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করে ওই তিনটি বাহিনী। গত বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ১৫ মাসে র‌্যাবের অভিযানে ৭৯ লাখ ৮৬ হাজার ২৯৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হয়।
ইয়াবা পাচারের সাথে শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত। এ সিন্ডিকেটে রয়েছে শাসক দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং অপরাধীরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যও এ চক্রের সাথে জড়িত। আর এ কারণে ইয়াবা সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে সাঁড়াশি অভিযান, ক্রসফায়ার আর গ্রেফতার চালিয়েও লাগাম টেনে ধরা যায়নি পাচারকারী সিন্ডিকেটের। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় খোদ পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা জানান, ইয়াবা ব্যবসার সাথে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, পৌরসভার কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিরা জড়িত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ