ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মো. ওসমান গনি : যুগের সাথে তালমিলিয়ে আমাদের নারী সমাজ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী সমাজকে বাদ দিয়ে দেশকে কখনও একটি উন্নত দেশে পরিণত করা সম্ভব হবে না। তাই দেশের উন্নয়নের জন্য নারীর উন্নয়ন অপরিহার্য। সমাজের কোন ক্ষেত্রেই নারীকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। শুধু মুখে অধিকারের কথা বললে হবে না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়, তাই নারীদের অধিকার আদায়েও সচেষ্ট হতে হবে। বর্তমান সরকার শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে চায়, যাতে প্রত্যেক নারী অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয় এবং উন্নত জীবনযাপন করতে পারে। নিজের সংসার ও সমাজকে যেন গড়ে তুলতে পারে। তার জন্য প্রয়োজন শিক্ষা। শিক্ষাই হলো সেই স্বনির্ভরতার সোপান। শিক্ষা ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্যই শিক্ষার প্রতি বর্তমান সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে যারা অত্যন্ত সীমিত সুযোগ নিয়ে নারী শিক্ষায়, নারী জাগরণে, নারীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন বর্তমান সরকার তাদেরকে পুরস্কৃত করছে। একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকেই তাদের খুঁজে বের করে পুরস্কার দিচ্ছে।
নারীর ক্ষমতায়ন কেবল শহর পর্যায় থেকে নয়, তৃণমূল থেকেই যেন হয়, সে পদক্ষেপ বর্তমান সরকার নিচ্ছে। এজন্য নারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে সরকার। নারীদের কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণ করার এবং বিভিন্ন ধরনের কাজ যেন তারা করতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে এবং বিভিন্নভাবে তাদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। যেমন- মৎস্য চাষ, কৃষি, হাঁস ও মুরগি পালন, হাউজ কিপিং অ্যান্ড কেয়ার গিভিং, বিউটিফিকেশন, মাশরুম চাষ, রন্ধন প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন, বেসিক কম্পিউটার, আধুনিক গার্মেন্টস, মধু চাষ, লন্ড্রি এমব্রয়ডারি, ড্রাইভিং, ছোট ছোট যন্ত্রপাতি মেরামতকরণ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ আজকে নারী উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পাচ্ছে। মেয়েরা যেন সর্বক্ষেত্রে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারে সেজন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। আমাদের পুরুষ সদস্যদের মনে রাখতে হবে, মায়ের কোলে বড় হতে হয়, বোনের হাত ধরে হাঁটা শিখতে হয়, স্ত্রী রান্না-বান্না করে সেবা করে আর বৃদ্ধ বয়সে মেয়েই সেবা করে। তাই নারীকে অবহেলা করা চলবে না। সমাজের অর্ধেক সদস্য নারী; তারা শিক্ষাবঞ্চিত থাকলে সমাজ কখনও গড়ে উঠতে পারবে না।
বর্তমান সরকার ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর ইউনিয়ন পর্যায়ে সংরক্ষিত আসনে মহিলা কাউন্সিলর এবং পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি করে। দুইজন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান থাকতে হবে। উন্নয়নের জন্য যেসব কমিটি হবে সেসব কমিটিরও অন্তত ৫টি কমিটিতে নারীরা চেয়ারম্যান থাকবেন, যাতে তারা উন্নয়নের কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারেন। তাছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা ও বিরোধীদলীয় নেত্রীও নারী। জাতীয় সংসদের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদই নারীরা দখল করে আছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হবেন মেয়েরা এটা কেউ কোনদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। যা বর্তমান সরকারের উদ্যোগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ভিসি-প্রো-ভিসি নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি আছেন। তারা কিন্তু খুব ভালও করছেন। এমনকি বুয়েটেও ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল (নারী ভিসি) কিন্তু দুর্ভাগ্য তিনি হঠাৎ ক্যান্সারে মারা যান।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী প্রো-ভিসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি করা হয়েছে। কারণ নারীদেরকে দায়িত্ব দিলেই তারা ভালভাবে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালাতে পারে। বিচার বিভাগে প্রথম হাইকোর্টের মহিলা জজ আওয়ামী লীগ সরকারই নিয়োগ দেয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা যেমন বর্ডার গার্ডে মেয়েদের নিয়োগ দেয়া শুরু হয়েছে। সেনা, নৌ, পুলিশ ও বিমানবাহিনীতে পূর্বে কিন্তু মেয়েদের কোন স্থান ছিল না। এখন প্রতিটি বাহিনীতে মেয়েরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। তারা দুর্গম গিরিশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন। মহিলা দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, দাবা ও ফুটবল খেলছে; দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, তথ্যপ্রযুক্তি, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম, ক্রীড়া জগতসহ সব চ্যালেঞ্জিং কাজে নারীদের পেশাদারিত্ব প্রশংসনীয়।
নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রমের সাফল্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একের পর এক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। গেøাবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে বিশ্বের ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৬৮তম স্থানে রয়েছে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সপ্তম স্থান অর্জন করেছে। শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ছেলেদের চেয়ে এখন মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি উল্লেখযোগ্য। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। মহিলা শিক্ষিকার সংখ্যাও বেশি। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পগুলোতে বাধ্যতামূলক অগ্রাধিকার রয়েছে। এছাড়া এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে সহজে ঋণ দেয়া হচ্ছে, এতে তারা ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারছেন।
নারী উন্নয়নে সরকার জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন করেছে। মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ স্ববেতনে ৪ মাস থেকে ৬ মাসে বর্ধিত করা হয়েছে। সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে মায়ের নাম লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৫০ করা হয়েছে। দেশের এমন কোন উন্নয়নের ক্ষেত্র নাই যেখানে নারীদের হাতের স্পর্শ লাগে না। তাই আমাদের নারী সমাজকে তাদের কর্মের মাধ্যমে আরও দ্রæত গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। দেশের উন্নয়নে কাজ করতে গেলে পেছনে কে কি বলল তার দিকে ফিরে তাকানোর সময় তাদের আর নাই। আমাদের পুরুষ সমাজকে তাদের প্রতি সহানুভ‚তিশীল হতে হবে। তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। তারা যাতে দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে সেই সাহস তাদের দিতে হবে। পুরুষ সমাজের মন-মানসিকতার পরিবর্তন করে নারীদের সাথে নিয়ে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। শুধু আমাদের দেশে নয় সারাবিশ্বে আজ নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করছে। আমাদের দেশে যেহেতু মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী তাই তাদের পেছনে ফেলে রেখে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। কাজের ক্ষেত্রে তাদের সাথে নিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। একটি দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।