পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মূল প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি; সারা দেশের জেলা বারে ৭০ শতাংশ বিএনপি ও ৩০ শতাংশ আওয়ামী লীগ
মালেক মল্লিক : আর মাত্র তিনদিন পরই সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভোটের জন্য। নির্বাচনকে সামনে রেখে জমে উঠেছে আদালত প্রাঙ্গণ। সবার মধ্যেই বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। অন্যান্য বারের মতো এবারো দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা) ও বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরে বারের নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতিসহ ৮টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা বিজয়ী হয়। সম্পাদকসহ ৬টিতে নির্বাচিত হয় বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। এবারও আওয়ামী প্রার্থীরা মরিয়া তাদের অবস্থান ধরে রাখতে, হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে আপ্রাণ চেষ্টায় বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। দুই দলের প্রধান শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া নিজ দলীয় আইনজীবীদের নিয়ে সভা ও বৈঠক করছেন। তাতে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের মাধ্যমে নিজেদের অনুকূলে ফলাফল আনার জন্য উদাত্ত আহŸান জানিয়েছেন। তবে কার প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২৩ মার্চ পর্যন্ত।
সারা দেশের আইনজীবী সমিতির প্রধান কেন্দ্র হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে সুপ্রিমকোর্র্ট বারকে। এখানকার জয়-পরাজয়ের হিসাব তৃণমূলকে প্রভাবিত করে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, সারা দেশের জেলা বারের মধ্যে জাতীয়তাবাদীরা ৭০ শতাংশ এবং ৩০ শতাংশ সরকার সমর্থিত আইনজীবীরা বিজয়ী হয়েছেন।
আসন্ন সুপ্রিমকোর্ট বার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আসন্ন সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন-২০১৭-১৮ তে ১৪টি পদের বিপরীতে ৩১ জন প্রার্থী হয়েছেন। আগামী ২২ ও ২৩ মার্চ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের মোট ভোটার ৫ হাজার ৮০ জন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্যানেল ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে সভাপতি পদে ১ জন এবং সম্পাদক পদে ২ জন অংশগ্রহণ করছেন বলে জানিয়েছেন বারের তত্ত¡াবধায়ক নিমেষ চন্দ্র দাস। এ ওয়াই মশিহুজ্জামানকে আহŸায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে সভাপতি ও সম্পাদকের নেতৃত্বে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আইনজীবীরা। প্রার্থীদের ব্যক্তিগত পরিচিতি, বারের অতীতের উন্নয়ন কর্মকাÐে অবদান ও নির্বাচনে জয়ী হলে উন্নয়নের প্রতিশ্রæতির লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোটারদের মন জয় করতে নানা লেখা ও প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। যেন প্রচারণায় মুখর আদালত অঙ্গন। যদিও নির্বাচনী প্রচারণা করার ক্ষেত্রে কঠোর হয়েছেন নির্বাচন কমিশনা।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত (সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ) প্যানেলে সভাপতি পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন আবদুল মতিন খসরু। অন্যান্য পদের মধ্যে সহ-সভাপতি অজিবউল্লাহ ও হোসনে আরা, সম্পাদক রবিউল আলম বুদু, কোষাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম হিরু, সহ-সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ও সেলিম আজাদ প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। আর কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন কুমার দেবুল দে, এ বি এম নূরে আলম উজ্জ্বল, হাসিনা মমতাজ, রুহুল আমিন তুহিন, হাবিবুর রহমান হাবিব, মাহমুদুন্নবী উজ্জ্বল ও শেখ মো. মাজু মিয়া।
বিএনপি সমর্থিত (জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য) প্যানেলে সভাপতি পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন মো. জয়নুল আবেদীন। অন্যান্য পদের মধ্যে সহ-সভাপতি পদে উম্মে কুলসুম বেগম (রেখা) ও ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া, সম্পাদক-এ. এম. মাহবুুব উদ্দিন খোকন, কোষাধ্যক্ষ পদে এ বি এম রফিকুল ইসলাম তালুকদার (রাজা) এবং সহ-সম্পাদক পদে কাজী জয়নুল আবদীন ও শামীমা সুলতানা (দীপ্তি) প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। সদস্য পদে লড়ছেন শেখ তাহসিন আলী, মো. এমাদুল হক, আয়েশা আক্তার, মো. আহসানউল্লাহ, মো. মুসাব্বির হাসান ভূঁইয়া (রোমান), মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান ও মৌসুমি আখতার। ওই দুটি প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ, আর সম্পাদক পদে অশোক কুমার ঘোষ এবং মো. আবু এহিয়া দুলাল প্রার্থী হয়েছেন।
আবদুল মতিন খসরু। আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক। তিনি ২০০৬ সালে আইনমন্ত্রী ছিলেন। নিজ এলাকা (কুমিল্লা) থেকে চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য নিবার্চিত হয়েছেন। সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হন। একই সঙ্গে তিনি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তিও বলে জানা যায়। নির্বাচনের বিষয়ে আবদুল মতিন খসরু ইনকিলাবকে বলেন, আইনজীবীদের পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছি। আশা করি এবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে আমরা জয়ী হবো। নির্বাচনে জয়ী হলে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবীদের সকল সমস্যা সমাধান করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে আছেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এছাড়াও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিমকোর্ট শাখার সভাপতি। তিনি ১৯৯১ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারের সহ-সম্পাদক এবং ২০১২-১৩ সালে সভাপতি হন। তার জন্মস্থান বরিশাল। জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে আইনজীবীরা আমাদের পূর্ণ প্যানেলকে বিজয়ী করবেন বলে প্রত্যাশা করছি। তিনি বলেন, আমি বিজয়ী হলে সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনের নতুন এ্যানেক্স ভবন ২০ তলা করা হবে।
বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ সুপ্রিমকোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বুদু। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি এবং গত বারে সম্পাদক পদে নির্বাচনে সামান্য ভোটে পরাজিত হন। অপরদিকে সুপ্রিমকোর্ট বারের বর্তমান সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সদস্য, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। ছাত্র অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যুগ্ম আহŸায়ক ছিলেন। সুপ্রিমকোর্ট বারের সর্বোচ্চসংখ্যক বার তথা ৪ বার সম্পাদক নির্বাচিত হন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে সুপ্রিমকোর্টের একাধিক আইনজীবী জানান, এবারের নির্বাচনে কোন প্যানেল বিজয়ী হবে তা বলা কঠিন। কেউ যেনো কারো চেয়ে কম নয়; হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তাদের মতে, বারের সভাপতি হওয়া উচিত যিনি আইনজীবীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কাজ করবেন।
সারা দেশে বিএনপি সমর্থিতরা এগিয়ে : এশিয়ার বৃহত্তম ঢাকা বারসহ সারাদেশের ৬৪টি জেলায় ছোট-বড় ৮০টি বার রয়েছে। ঢাকা আইনজীবী সমিতির ২০১৭-১৮ সালের নির্বাচনে ২৭ পদের মধ্যে ২১টি বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিতরা। এগুলের মধ্যে যে সব বারে নির্বাচন হয়েছে তাতে বিএনপিপন্থীরা শতকরা ৭০ ভাগ বিজয়ী হয়েছেন বলে জানা যায়। এসব বারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, রংপুর, সাতক্ষীরা ও কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।