Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সীতাকুন্ডে ছায়ানীড়ে এখনো বিপুল বোমা ও বিস্ফোরক আছে!

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : সীতাকুন্ডের জঙ্গি আস্তানা ছায়ানীড়ে এখনো বিপুল পরিমাণ বোমা ও বিস্ফোরক মজুত আছে। গতকাল শনিবার বোমা নিস্ক্রিয়করণ ও সিআইডির ক্রাইম সিন টিম ভবনটির একটি কক্ষে গিয়ে এসব বিস্ফোরকের সন্ধান পান। এর মধ্যে ৭টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিনষ্ট করে ফেলেছে তারা। অন্য বোমাগুলি আজ (রোববার) বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করা হবে। এছাড়া একই ফ্ল্যাটের অন্য দুটি কক্ষে এখনো অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। সেখানেও বিপুল বিস্ফোরক থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট। ফলে সেখানে আরো কয়েকদিন অভিযান অব্যহত থাকবে।
থানা সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সীতাকুন্ড পৌরসদরের প্রেমতলা চৌধুরীপাড়া এলাকায় অবস্থিত আলোচিত জঙ্গি আস্তানা ছায়ানীড়ে সোয়াতের অভিযানকালে গুলি ও আত্মঘাতে ৪ জঙ্গি ও এক শিশু নিহত হলেও ঐ ভবনে অবস্থিত জঙ্গিদের সবকটি ঘর এখনো তল্লাশী করা শেষ হয়নি। তাদের প্রতিটি কক্ষে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক থাকার সম্ভাবনায় দুর্ঘটনা এড়াতে অতি সতর্কতার সাথে ধীরে ধীরে অনুসন্ধান চলছে। গতকালও (শনিবার) সেখানে অনুসন্ধান চালাতে আসে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ দল। এদিন সকাল থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে সেখানে এসে পৌঁছায় সিআইডির বিশেষ প্রশিক্ষিত ক্রাইম সিন টিম। এরপর তারা ও বোমা নিস্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা ছায়ানীড়ে প্রবেশ ও অনুসন্ধান শুরু করে। তারা জঙ্গিদের ভাড়া করা ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে প্রবেশ করলে সেখানে গিয়ে বিপুল পরিমাণ বোমা, বিস্ফোরক সরঞ্জাম ও বোমা তৈরির প্রচুর কাঁচামাল (রাসায়নিক পদার্থ) দেখতে পান। যা তাদেরকে বিস্মিত করে তুলেছে। ঐ কক্ষে ১৫টি গ্রেনেড, ১২টি হাতবোমা, ৬ ড্রাম ভর্তি রাসায়নিক পদার্থ পান তারা। যার মধ্যে ৫টি ড্রামের প্রতিটিতে ২০০ লিটার করে হাইড্রোজেন ফারঅক্সাইড এবং অন্য একটি ড্রামে ৪০ লিটার অ্যাসিড পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিস্ফোরক দলের সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অবস্থা দেখে এটি একটি    বিশাল বোমা তৈরির কারখানা বলে মনে হচ্ছে। এখানে বোমাগুলি তৈরি করে আশপাশে কোথাও সরবরাহ করা হতো অথবা এখানে রেখে কোথাও বড় ধরণের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিলো তাদের। এদিকে অনুসন্ধানকালে গ্রেনেডগুলির সন্ধান পাওয়ার পর বোমা নিস্ক্রিয়করণ দল সেগুলো ধংস করার পরিকল্পনা নিলেও বিভিন্ন কারণে এতগুলো বোমা নিস্ক্রিয়করণ সম্ভব হয়নি। তবে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধারকৃত গ্রেনেডের মধ্যে মোট ৭টি গ্রেনেড ছায়ানীড়ের মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধংস করা হয়েছে বলে প্রতিবেদককে জানান সীতাকুন্ড থানার ওসি মো. ইফতেখার হাসান। তিনি বলেন, ৭টি বোমা ধংস করে আমরা পুনরায় ছায়ানীড় সিলগালা করে পুলিশ পাহারায় রেখে চলে এসেছি। অবশিষ্ট ৮টি বোমা আজ রোববার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিনষ্ট করা হবে। এছাড়া জঙ্গি আস্তানার যা পরিস্থিতি তাতে আরো কয়েকদিন সেখানে অভিযান পরিচালিত করতে হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
অবশ্য একই কথা বলেছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনাও। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ছায়ানীড়ে অনুসন্ধানকালে জঙ্গিদের ফ্ল্যাটের ৩টি কক্ষের মধ্যে আমরা মাত্র একটিতে অনুসন্ধান চালিয়েছে। এতেই বিপুল পরিমাণ বোমা ও বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। যার মধ্যে রয়েছে ১৫টি গ্রেনেড, ১২টি হাত বোমা ও বোমা তৈরির প্রচুর কাঁচামাল। তিনি বলেন, সেখানে পাওয়া সব বোমাগুলোই তাজা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাজা আছে কিনা দেখে নিশ্চিত হলে সেগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়েই ধংস করতে হবে। এছাড়া এখনো দুটি কক্ষে অনুসন্ধান করা যায়নি। সেগুলোতেও প্রচুর বিস্ফোরক থাকার সম্ভাবনা আছে। এদিকে ছায়ানীড়ে এখনো এত বিস্ফোরকের খবরে এলাকাবাসী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কি করে কখন এত বোমা ও বিস্ফোরকে কাঁচামাল আনা হলো তা ভেবেই পাচ্ছেন না তারা। পৌরসভার চৌধুরীপাড়া ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর মো. শফিউল আলম মুরাদ বলেন, এসব অনুসন্ধান যত দেখছি ততই আমরা বিস্মিত হচ্ছি। তারা কিভাবে কোথা থেকে এত বোমা এখানে এনে রাখল, আর তাদের উদ্দেশই বা কি ছিলো তা ভেবেই আশ্চর্য্য হয়ে যাচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এখানে শিব চতুর্দশী মেলা সম্পন্ন হয়েছে। এই মেলায় লাখ লাখ পূণ্যার্থীর আগমন হয়। এসব আত্মঘাতী হানা সেখানে হলে অগণিত মানুষের প্রাণহানি হয়ে যেত। তাছাড়া এসব অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ছায়ানীড়ে থাকা অন্য ভাড়াটিয়াদের জিম্মি করা হলেও একটি মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা না হওয়ায় এলাকাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। এরপরও ছায়ানীড়ে যেভাবে প্রতিদিন নতুন করে বোমা পাওয়ার খবর ছড়াচ্ছে তাতে এলাকাবাসীর উদ্বেগ বাড়ছে। এখন কবে ভালোভাবে এসব অনুসন্ধান সমাপ্ত হয় সেদিকেই তাকিয়ে আছেন তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ