পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : কারাগারের রুদ্ধ জীবনে অশেষ দুর্ভোগ আর কষ্টের মধ্যে থেকেও বাংলাদেশের বীর জনতার জয়ের স্বপ্ন দেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই স্বপ্ন আর সংকল্পের কথা তিনি লিখে রাখতেন ডায়েরির পাতায়। যে পাতাগুলো সন্নিবিষ্ট হয়েছে ‘কারাগারের রোজনামচা’ শীর্ষক বইটিতে। গতকাল ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে প্রকাশিত হয়েছে এই নতুন বই। প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি।
কারাগারে বসে পাখিদের কান্ড দেখতেন বঙ্গবন্ধু। এর মধ্যে কাকও ছিল। তিনি লিখেছেন- ‘এখন চারটা বাসায় ডিম দিয়েছে। একটা বাসায় বসে থাকে আর একটা পাহারা দেয়। দাঁড়কাক ওদের শত্রু। দুই পক্ষের যুদ্ধও দেখেছি। তুমুল কান্ড! ছোট কাকদের সাথে শেষ পর্যন্ত পারে না। দাঁড়কাক যুদ্ধ ভঙ্গ করে পালাইয়া যায়। বাঙালি একতাবদ্ধ হয়ে যদি দাঁড়কাকের মতো শোষকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াত তবে নিশ্চয়ই তারাও জয়লাভ করত।’
বঙ্গবন্ধু যেমন তেজস্বী সুবক্তা ছিলেন, তাঁর লেখনিও শব্দ আর বাক্যের জোরালো গাঁথুনিতে সমৃদ্ধ। ভাষা ও বর্ণনায় রয়েছে কলকল করে বয়ে চলা নদীর ছন্দ। পাঠককে তা নিমেষে নিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের এমন এক পটভূমিতে, যেখানে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ৭ কোটি মানুষকে মুক্ত করার সংগ্রামে আত্মপ্রত্যয়ী এক মহান নেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়।
১৯৬৭ সালের রোজনামচায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, কারাগারে তাঁকে যেখানটায় রাখা হতো, অদূরেই রাখা হতো পাগলদের। তাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে রাতে ভালো ঘুম হতো না। ভোরে যখন নিজের গড়া বাগানে ঘুরতে যেতেন, মনটা তখন ভালো হয়ে যেত। কারাগারের নিরেট-নীরস জীবনের মধ্যেও বঙ্গবন্ধু ফুল দেখতেন, পাখি দেখতেন, আর স্বপ্ন বুনতেন নতুন দেশ গড়ার, যার নাম হবে বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর এই রোজনামচা বই আকারে প্রকাশে যে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, ভূমিকায় সে কথা সবিস্তারে বলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বইটির নাম ‘কারাগারের রোজনামচা’ রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা। এর আগে বঙ্গবন্ধুর ডায়েরির পাতা নিয়ে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। এতে বঙ্গবন্ধুর কিশোরকাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলী উঠে এসেছে।
কারাগারের রোজনামচা বইয়ের ভূমিকায় বলা হয়েছে, অসমাপ্ত আত্মজীবনী বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের পথপ্রদর্শক। ভাষা আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা অর্জনের সোপানগুলো যে বন্ধুর পথ অতিক্রম করে এগোতে হয়েছে তার কিছুটা এই কারাগারের রোজনামচা বইয়ে পাওয়া যাবে।
জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত অক্লান্ত সংগ্রামে বহুবার কারাভোগ করেছেন। তবে তাঁর লেখা এই রোজনামচার ব্যাপ্তি নির্দিষ্ট একটা সময়ে। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন শুরু হলে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বন্দী থাকেন তিনি। এই সময় কারাগারে প্রতিদিনের ডায়েরি লেখা শুরু করেন। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত লেখা ডায়েরির পাতাগুলো এই বইয়ে সংকলিত হয়েছে।
বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শ্রমসাধ্য বিষয় ছিল বঙ্গবন্ধু যেসব খাতায় রোজনামচা লিখেছেন, সেগুলো একাধিকবার উদ্ধার করা। ভূমিকায় এ কথাও লেখা হয়েছে। একাত্তরের মার্চে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার পর পরিবারের সদস্যদের ধানমন্ডির একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর সেই খাতাগুলো ছিল ৩২ নম্বর বাড়িতে, যেখানে লুটপাট আর তান্ডব চালানো হয়। পরে একসময় স্কুলগামী শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেলের বই-খাতা নিয়ে আসার সুযোগ মেলে। তখন কৌশলে খাতাগুলো উদ্ধার করে নিয়ে এসে মায়ের হাতে তুলে দেন শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির বাড়িতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর খাতাগুলো আবার অরক্ষিত হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা তখন ছিলেন ইংল্যান্ডে। দেশে ফেরার পর ১৯৮১ সালের জুনে বাড়িটা ফিরে পাওয়ার পর বাবার স্মৃতিবিজড়িত খাতা আবার তাঁর হাতে ফিরে আসে।
বঙ্গবন্ধু তাঁর এই রোজনামচায় একক কোনো ব্যক্তি বা দলের কথা লেখেননি। তিনি যা লিখেছেন, এতে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের বিষয়টি মূর্ত। গোটা জাতির স্বাধীনতার তীব্র আকুতি জ্বলজ্বল। বঙ্গবন্ধুর আরও কিছু ডায়েরি থেকে বই প্রকাশের কাজ চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।