Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সীতাকুন্ডে বিষ্ফোরণ ও অস্ত্র উদ্ধারে ৪ মামলা

এখনো আতঙ্কে এলাকাবাসী

| প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সীতাকুন্ড উপজেলা সংবাদদাতা : সীতাকুন্ডের আমিরাবাদ ও প্রেমতলায় জঙ্গি আস্তানায় বিষ্ফোরণ, ২ জঙ্গি গ্রেফতার ও বিভিন্ন বিষ্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক ৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সীতাকুন্ড থানার ওসি মো. ইফতেখার হাসান বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন। এতে গ্রেফতারকৃত ও নিহত জঙ্গিদের আসামি করা হয়েছে। এদিকে এলাকায় দুটি জঙ্গি আস্তানার হদিস ও সেখানে বন্দুক যুদ্ধ-আত্মঘাতী বিষ্ফোরণসহ বিভিন্ন ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষত ঘটনাস্থলের আশপাশের বহু মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
থানা সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুন্ড পৌরসদরের নামার বাজার আমিরাবাদ এলাকার সাধন কুঠির ও প্রেমতলা চৌধুরীপাড়ার ছায়া নীড়ের জঙ্গি আস্তানা থেকে দুই জঙ্গি গ্রেফতার ও অস্ত্র-বিষ্ফোরক উদ্ধার এবং আত্মঘাতী বিষ্ফোরণের ঘটনায় পৃথক ৪টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে সীতাকুন্ড থানার ওসি মো. ইফতেখার হাসান বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন। এতে গ্রেফতারকৃত ২ জঙ্গি ও নিহত ৪ জঙ্গিকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী সীতাকুন্ড থানার ওসি মো. ইফতেখার হাসান প্রতিবেদককে বলেন, সীতাকুন্ডের দুটি জঙ্গি আস্তানায় সংঘটিত বিষ্ফোরণ, প্রাণহানি, অস্ত্র ও বিষ্ফোরক উদ্ধারে মোট ৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা হয়েছে অস্ত্র আইনে, ১টি হত্যা মামলা ও ২টি হয়েছে সন্ত্রাস দমন আইনে। এতে মোট ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলার বাদী হয়েছেন ওসি মো. ইফতেখার হাসান এবং অপর দুটির বাদী ওসি (তদন্ত) মো. মোজাম্মেল হক। আসামিরা হলো নামার বাজার জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেফতারকৃত মহিলা জঙ্গি আকলিমা ও তার স্বামী জসীম উদ্দিন এবং প্রেমতলা ছায়া নীড়ে নিহত ৪ জঙ্গি। তবে হত্যা মামলায় অজ্ঞাত সংখ্যক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এতে আকলিমা ও তার স্বামী জসীমকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদেরকে কোর্ট হাজতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
অন্যদিকে দুটি জঙ্গি আস্তানায় নানান ঘটন অঘটনের কারণে এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনাস্থল অর্থাৎ সাধন কুঠির ও ছায়া নীড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আজ (শনিবার) ছায়া নীড়ে সিআইডির ক্রাইম সিন টিম আবারো পরিদর্শন করবে। নতুন কোন আলামত পাওয়া যায় কিনা তা দেখার পাশাপাশি সেখানে আর কোন বিষ্ফোরক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে বিষ্ফোরক নিস্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা। এ বিষয়ে সীতাকুন্ড থানার ওসি মো. ইফতেখার হাসান বলেন, আরো কয়েকদিন এই অভিযান চলবে।
এদিকে জনবহুল পৌরসদরের মাত্র দেড় কিলোমিটারের মধ্যে দুটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান ও সেখানে বন্ধুক-যুদ্ধ, আত্মঘাতী বিষ্ফোরণ, প্রচুর গ্রেনেড বিষ্ফোরণসহ পরপর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি এলাকার দারুণ বিরুপ প্রভাব ফেলেছে। এখনো আতঙ্কে ঘুমাতে পারছেন না ঘটনাস্থলের আশপাশের সাধারণ মানুষ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে প্রেমতলার ছায়া নীড়ের আশপাশে ঘুরে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনো আতঙ্কিত। ছায়া নীড়ের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা নেপাল ভট্টাচার্য্য (পন্ডিত) ও তার স্ত্রী মালতী ভট্টাচার্য্য বলেন, বুধবার বিকালে ছায়া নীড় ঘিরে ফেলার পর থেকে এখনো আমরা আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারছি না। বুধবার রাতে তো গ্রেনেডের বিকট শব্দে আমরা ঘুমাতেই পারিনি। বোমা বা গুলি ঘরে এসে পড়ে কিনা এই ভয়ে আশপাশের অনেকে মিলে এক ঘরে ঢুকে ছিলাম। পরে আরো নিরাপত্তার জন্য সবাই মিলে আরেকটি পাকা ঘরে অবস্থান নিই। আতঙ্কের কথা জানান, এলাকার আরেক ভাড়াটিয়া মিরসরাইয়ের বাসিন্দা সন্তোষ নাথ। সীতাকুন্ড বাজারের এই পান ব্যবসায়ী জানান, বুধবার বাড়িতে তিনি আটকা পড়ে যান। এরপর বৃহস্পতিবার পুরো দিনও আর বের হওয়া হয়নি। চারিদিকে যুদ্ধের পরিস্থিতি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। এখন অভিযান শেষ। কিন্তু শুনতে পাচ্ছি সেখানে বিষ্ফোরক থাকতে পারে। তাই এখনো আতঙ্কিত আমরা। এভাবে এই এলাকার অনেকেই এখনো আতঙ্কে আছে বলে জানান।
প্রসঙ্গত গত বুধবার সীতাকুন্ড পৌরসদরের নামারবাজার সাধন কুঠিরের দুই ভাড়াটিয়া জসীম ও তার স্ত্রী আকমিলার জঙ্গি কার্যকলাপের প্রমাণ পেয়ে বাড়ির মালিক সুরেশ দাশ ও ছবি রানী দাশ, প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় তাদেরকে ধরে ফেলে পুলিশে দেয়। পরে ঐ জঙ্গিদের কাছে সুইসাইট বেষ্ট (বেল), পিস্তল, শক্তিশালী গ্রেনেড পাওয়া যায়। এরপর সেখানকার সূত্র ধরে পুলিশ দেড় কিলোমিটার দূরবর্তী প্রেমতলা চৌধুরীপাড়া এলাকায় আরো একটি জঙ্গি আস্তানার হদিস পায়। বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ছায়া নীড় নামক বাড়িটি ঘিরে রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষিত সোয়াত সদস্যরা সেখানে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় অভিযান শুরু করে। প্রায় ৪৫ মিনিটের অভিযানে ২ জঙ্গি নিহত হলে অপর দুইজন আত্মঘাতী বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে মারা যায়। এসব ঘটনায় জঙ্গিদের ৬ মাস বয়সী এক শিশুপুত্রও মারা যায়। এ ঘটনায় এলাকায় দারুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ