Inqilab Logo

শনিবার, ০১ জুন ২০২৪, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন -বিএনপি

| প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ পাওয়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় তা ব্যাহত হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব অভিযোগ করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন উপলক্ষে কমিটির নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতার মাজারে শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল।
ল²ীপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শেষ জনসভায় নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে ভাষণ রাখার বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে জনসভা করছেন। সেখানে তিনি নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন। এটা নিঃসন্দেহে নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন। এতে আমরা খুব একটা আশ্চর্য হই না। কারণ, আওয়ামী লীগের চরিত্রই এমন। এর ফলে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারে থেকে তারা সরকারি সব সুবিধা নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, বিরোধী দলকে কোণঠাসা করে, বিরোধী দলকে আসার সুযোগ না দিয়েই তারা একতরফা নির্বাচন করতে চায়। ২০১৪ সালে তারা এটাই করেছিল। কিন্তু ওই ধরনের আর কোনও নির্বাচনকে জনগণ মেনে নেবে না।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রস্তুতি প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব বলেন, বিএনপি সবসময় নির্বাচনমুখী দল, গণতান্ত্রিক দল। রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাই। বিএনপি সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। নির্বাচনি প্রচারণা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি নেই। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে তখন আমরা নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে সিদ্ধান্ত  নেব।
জঙ্গিবাদ নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য একটি মহল কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বলেছি, জঙ্গিবাদ নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের মধ্যে খুব অল্প কয়েকজনকেই বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের বিচারাধীন অবস্থায় হত্যা করা হচ্ছে বলে দেখা যায়। এজন্য কিছুটা রহস্য থেকেও যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দাবির মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এমনকি সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (আইন প্রয়োগকারী সংস্থা) বক্তব্যের মধ্যেও সামঞ্জস্য নেই। আমরা জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে জাতীয় ঐক্য তৈরির আহŸান জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার সে আহŸানে সাড়া দেয়নি। তারা আজকে এই জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়।
মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি কমিটির সদস্যরা ছাড়াও জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের সাথে জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি হলে জনগণ মানবে না -মির্জা ফখরুল
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা ও আরিচা সংবাদদাতা : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারতের সাথে জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি হলে দেশের জনগণ তা মানবে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার হলে চুক্তির আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেই চুক্তি করতো। দখলদারী সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে। দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে এ চক্রান্ত প্রতিহত করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পাচুরিয়ায় বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের নিজ বাড়ীতে ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবর জিয়ারত ও দোয়ার অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তিনি বাংলাদেশ ও দলের স্বার্থের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। বিএনপির দুঃসময়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, নিষ্ঠা, দূরদর্শিতা ও দায়িত্বের সাথে তা পালন করেছিলেন। আমরা তার অভাব এখনও অনুভব করি। তিনি চলে যাওয়ায় আমাদের দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমরা তাকে আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। ভারতের সাথে যে চুক্তি করছে তা রহস্যে ঘেরা। পানি সমস্যা সমাধানের কোন বিষয় আমাদের জানা নেই। দেশের স্বার্থবিরোধী কোন চুক্তিই জনগণ মেনে নেবে না। বিএনপি এবং জনগণ সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করবে।    
দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য বিএনপি’র সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের নির্বাচনী এলাকা ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শত শত  সাধারণ মানুষ, বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রিয় মরহুম নেতার পাচুরিয়ার বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। এসময় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি’র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য রুখসানা খানম মিতু, যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন, স্বেচ্ছা সেবক দলের সভাপতি নেয়াজ আলী সুক্কো, যুগ্ম সম্পাদক নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মিলটন, কেন্দ্রীয় কমিটি’র সদস্য ও জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ডাবলু, সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম খান শান্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব হোসেন, জেলা বিএনপি’র কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট জামিলুর রশিদ খান, অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন খান, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা ও মরহুমের পরিবারের সদস্যসহ বিএনপির বিভিন্ন অংগ সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আগতরা মরহুম দেলোয়ার হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জোহরের নামাজের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের সদস্যরা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে ও কবর জিয়ারত করেন। পরে নেতৃবৃন্দ দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন।
 উল্লেখ্য, মরহুম বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ১৯৩৩ সালের ১ ফেব্রæয়ারি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পাচুরিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ বেলা আড়াইটার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি মারা যান। ১৯ মার্চ তার নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
তিনি মানিকগঞ্জ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪৯ সালে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজ থেকে আই.এ, ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে (অনার্স), ১৯৫৩ সালে মাস্টার্স ও ১৯৫৫ সালে এলএলবি পাস করেন। বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়ে তিনি দ্বিতীয় পঞ্চম ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি তিনবার জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ