Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলুন প্রধানমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বর্তমান সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান বাংলাদেশে হবে না। এসবের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। কেউ যেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে না জড়ায়, এ জন্য জনমত গড়ে তোলার আহŸান জানান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞানী, গবেষক ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, জাতীয় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি (এনসিটি) ফেলোশিপ এবং বিশেষ অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিশ্বব্যাপী নতুন উপসর্গ শুরু হয়েছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদকাসক্তি। এর বিরুদ্ধে সবাইকে জনমত সৃষ্টি করার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী, শুধু দেশে নয়, যারা বিদেশে লেখাপড়া করছে, তারাও মেধার দৃষ্টান্ত রাখছে। কাজেই এরা যেন কেউ বিপথে না যায়। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের সঙ্গে যেন না জড়ায়, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেয়ার জন্য আমি শিক্ষক, অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ যদি আমরা গড়তে চাই, তাহলে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে শিক্ষার পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, গবেষণা বাড়ানো এবং বিজ্ঞানের চর্চা বৃদ্ধি করা। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা বায়ো-টেকনোলজিক্যাল সায়েন্স, মেডিকেল সায়েন্স, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপলায়েড সায়েন্স এবং খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে গুরুত্ব প্রদান করেছি।
পরিকল্পিতভাবে সীমিত সম্পদ ব্যবহার করার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক উপায়ে এটার ব্যবহার যদি নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আমাদের কারও মুখাপেক্ষী হয়ে চলতে হবে না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্বসভায় এগিয়ে যাব। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব সিরাজুল হক খান প্রমুখ। এ বছর ১ হাজার ৭০২ জন শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ ও গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাংসদ, সরকারের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি, দেশবরেণ্য গবেষক ও বিজ্ঞানী এবং ফেলোশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত দেশ, মৎস উৎপাদনে (মিঠা পানির মাছ) উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছি। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং গোশতসহ অন্যান্য উৎপাদনেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এসব উন্নয়নগুলো এমনিতেই হয়নি, আমি বলবো সবই বিজ্ঞানের অবদান, গবেষণার অবদান। আমরা চাই সকলে এই গবেষণার কাজ আরো মনযোগের সাথে করবেন। যারা সত্যিই গবেষণা করে কোন ফলাফল জাতিকে দিতে পারবেন তাদের জন্য আমাদের চিন্তা-চেতনাতেই আছে আরো বেশি সহযোগিতা করে যাওয়া। আমরা তা করে যাব।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সীমিত সম্পদ এটা ঠিক। কিন্তু আমি মনে করি, পরিকল্পিতভাবে সীমিত সম্পদ যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে এটার ব্যবহার যদি নিশ্চিত করতে পারি তাহলে আমাদের কারো মুখাপেক্ষী হয়ে চলতে হবে না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্বসভায় এগিয়ে যাব। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, একটি লক্ষ্য স্থির না থাকলে দেশ উন্নত হতে পারে না। ২০০১ সালে যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো, ওই সময়ের মধ্যে আমরা দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ২০১৪ সালে যে নির্বাচনী ইস্তেহার দিয়েছিলাম সেখানে আমরা ঘোষণা করেছিলাম- ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পরমাণু যুগে প্রবেশ করেছি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পটি বহুকাল ধরে অবহেলিত ছিল, কিছুতেই কাজে লাগানো যাচ্ছিল না, এখন সেখানে আমরা পা দিচ্ছি। এজন্য আমাদের প্রচুর বিজ্ঞানী দরকার। পরমাণু শক্তি কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য পরমাণু জ্ঞানসম্পন্ন বিজ্ঞানীদের আমাদের দরকার হবে। এজন্য প্রশিক্ষণও দরকার, এই কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন এই বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে ভবিষতে এগিয়ে আসে। তারাই এগুলো পরিচালনা করতে পারবে। সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিতে চাচ্ছি।
তিনি বলেন, ন্যানো টেকনোলজি এখন এসেছে, সেটাও আমাদের চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে বহুকাজে এর ব্যবহার হয়। কাজেই সেদিকেও আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি এবং সেটা কতটা ব্যবহার করা যায় ও কাজে লাগানো যায় তা অবশই আমরা দেখবো। আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতার সমুদ্রসীমানা আইন এবং সীমানা চুক্তি করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতা দেশ স্বাধীনের পর মাত্র ৯ মাসে একটা সংবিধান উপহার দিয়ে নাগরিকদের জন্য সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার ফাঁকে ভবিষ্যতে প্রতিবেশির সঙ্গে যেসব বিষয়ে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে তিনি সেসব চুক্তিও সম্পাদন করে যান।
মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রবিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করায় বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশিতে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং বøুু-ইকোনমি’র দ্বারউন্মুক্ত হয়েছে। সমুদ্র সম্পদ গবেষণার জন্য আমাদের একটি সী এক্যুরিয়াম প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কারণ বার বার সাগরে নেমে গবেষণা করা যাবে না। আর জাহাজ কেনারও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছি।
বিজ্ঞানমনষ্ক জাতি গঠন, বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ অন সাইন্স অ্যান্ড আইসিটি’ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। উন্নত বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাগার ও ইনস্টিটিউটে পরিচালিত গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে এমএস এবং পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের মাধ্যমে আমাদের জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ ও বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক তৈরিই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত বিদেশে ৫০-জন এমএস ও ৬০-জন পিএইচডি এবং দেশে ১০০-জন পিএইচডি ও ১১-জন পিএইচডি-উত্তর গবেষণায় ফেলোশিপ প্রদানের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিদেশে এমএস কোর্সে ৩৭ জন ও পিএইচডি কোর্সে ৩০-জন এবং দেশে পিএইচডি-তে ৩৮-জন এবং পিএইচডি-উত্তর কোর্সে ৮-জন শিক্ষার্থী/গবেষক গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে যাতে ফেলোশিপ কর্মসূচি অব্যাহত রাখা যায়, সেজন্য গঠন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ ট্রাস্ট।
‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ ছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট-বিষয়ে এমএস, এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর পর্বের ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকদের মধ্যে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ প্রদান করা হচ্ছে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৯০১ জন ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকের মধ্যে ৩৭ কোটি ৫১ লাখ ৮৯ হাজার টাকার ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে ১ হাজার ৭০২ জন ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষককে ৯ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার টাকা ফেলোশিপ প্রদান করা হচ্ছে।
বিজ্ঞান গবেষণায় সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফেলোশিপের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা প্রদানের লক্ষ্যে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের গবেষণা অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। জ্ঞানভিত্তিক ও বিজ্ঞাননির্ভর সমাজ গঠনে এ কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে আমার বিশ্বাস।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাখাতে সরকারের বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ১ হাজার ৭৫৩টি প্রকল্পের অনুকূলে ৬৮ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান অর্থবছরে ৩৯৫টি প্রকল্পের বিপরীতে ১১ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হচ্ছে।
দেশে বিজ্ঞান গবেষণায় অতীতের দুরাবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দেখলাম গবেষণার জন্য একটি টাকাও খরচ করা হতো না। আমরাই সর্বপ্রথম ১২ কোটি টাকা অনুদান ধার্য করেছি বিজ্ঞান গবেষণার জন্য। স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী অত্যন্ত কম ছিল। ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার আইন পাস করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয়ী জাতি, এটা সব সময় আমাদের মনে রাখতে হবে। কাজেই আমরা কোন সময় পিছিয়ে যেতে পারি না। আমরা কারো অনুগ্রহ, অনুকম্পা নিয়ে নয়, মাথা উঁচু করে বিশ্বসভায় চলবো।



 

Show all comments
  • আসাদ ১৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:৩০ পিএম says : 0
    জঙ্গিবাদ দমনে ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ