পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান : আগামী ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন। ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে তার বৈঠক, ৯ এপ্রিল তিনি আজমীর শরীফ যাবেন এবং ১০ এপ্রিল তিনি দেশে ফিরবেন। গত ১৪ মার্চ সোমবার ঢাকা ও দিল্লীর উভয় দেশ থেকে একযোগে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সরকারী ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অসাধারণ গুরুত্ব বহন করছে। তার সফরকালে সমঝোতা স্মারকসহ ৪১টি চুক্তি সই হবে। এখন এটি মোটামুটি ওপেন সিক্রেট যে, ভারত সফরকালে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে কোন চুক্তি হচ্ছে না। তবে ভারতীয় পত্র-পত্রিকা, বার্তা সংস্থা, বিবিসি ও বাংলাদেশী পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকালে যেসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে তার মধ্যে একটি হবে দীর্ঘ মেয়াদী প্রতিরক্ষা চুক্তি। এই চুক্তি নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে যে, এই প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ একটি অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। কারণ ভারত চাচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ চাচ্ছে একটি সমঝোতা স্মারক। বিভিন্ন সূত্রে যেসব খবর আসছে, সেসব খবর থেকে দেখা যায় যে, ভারতের প্রত্যাশা বাংলাদেশের সাথে একটি দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তিস্বাক্ষর। সেই চুক্তির মধ্যে থাকবে ভারত থেকে সমরাস্ত্র কেনা, ভারতীয় বাহিনীর নিকট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং অন্যান্য মিলিটারি টু মিলিটারি সহযোগিতা। এখন পর্যন্ত চুক্তির খসড়া চ‚ড়ান্ত হয়নি। তবে এই বিষয়টির নাকি অগ্রগতি হচ্ছে।
ভারত নাকি চায় ২৫ বছর মেয়াদের একটি চুক্তি স¦াক্ষরিত হোক। উভয় দেশ তাদের নিরাপত্তার প্রতি যেসব বিষয়কে হুমকি বলে মনে করে, সেগুলো সমন্বিত ও সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা হবে বলে তারা চুক্তিতে উল্লেখ করতে চায়। ভারত বাংলাদেশকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করার জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাবের অধীনে কোস্ট গার্ডদের জন্য দ্রæতগতি সম্পন্ন পেট্রোল ক্রাফট এবং রাডারসহ বিমান প্রতিরক্ষার অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করার প্রস্তাব রয়েছে।
বিদেশী মিডিয়ায় প্রবল গুঞ্জণ রয়েছে যে, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ না হয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করতে চায়। এই সমঝোতা স্মারকটি আনুষ্ঠানিক হবে না এবং সেখানে কোন সময়সীমা থাকবে না।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বর্তমানে সমরাস্ত্র সংগ্রহের ব্যাপারে বাংলাদেশ দারুণভাবে গণচীনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বিনির্মাণে ভারতও আগ্রহী। তাই বাংলাদেশ চায় এ ব্যাপারে একটি ভারসাম্য রক্ষা করতে যেখানে চীনের পাশাপাশি ভারত এবং রাশিয়ার সাথেও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গড়ে তোলা হবে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ রাশিয়ার নিকট থেকে কিছু যুদ্ধবিমান কিনতে চাচ্ছে। সেই ক্রয়ের লক্ষ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তিনদিনের সফরে আগামী ১১ এপ্রিল মস্কো যাবেন। মস্কো অবস্থানকালে তিনি ৫টি অত্যাধুনিক এম আই-১৭ অ্যাটাক হেলিকপ্টার ক্রয়ের সম্ভাবনা পর্যালোচনা করবেন। এসব হেলিকপ্টার কেনার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেগুলো জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে কাজে লাগানো হবে। এমআই-১৭ হেলিকপ্টার রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক এক সামরিক হেলিকপ্টার। এটি এমআই-৮ হেলিকপ্টারের এক্সপোর্ট ভার্সন। অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বৈরী পাহাড়ি পরিবেশে এই হেলিকপ্টার নির্বিঘেœ ওঠা-নামা করতে সক্ষম। রাশিয়ার কাজান ও উদেতে দুটি কারখানায় এই সামরিক হেলিকপ্টার নির্মাণ করা হয়।
আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে যে, ভারত বাংলাদেশের নিকট থেকে যে ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি চাচ্ছে সরকার সেই ধরনের একটি চুক্তি এই মুহূর্তে স্বাক্ষর করতে চাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, ২০১৮ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর অথবা ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন হতে এখন আর দুই বছরও নাই। বড় জোর ১ বছর ৯ মাস সময় পাওয়া যেতে পারে। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা মনে করেন যে, এই সময় ভারতের সাথে এই ধরনের চুক্তি করলে বিরোধী দলের হাতে ট্্রাম্প কার্ড তুলে দেয়া হবে। সেই ইন্ডিয়া কার্ডটি খেলে বিরোধী দল বাজিমাত করবে। সুতরাং যদি এমন একটি চুক্তি করতেই হয় তাহলে সেটি এখন নয়, অন্য কোনো এক সময় বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্যদিকে বিরোধী শিবির, বিশেষ করে বিএনপি, মনে করছে যে, ইলেকশনের আগে যদি ইন্ডিয়া কার্ড না খেলা হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ জনগণকে বিভ্রান্ত করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যাবে। সে জন্য তারা ইতিমধ্যেই লম্বা বিরতির পর ভারতীয় আধিপত্য সম্পর্কে কড়া বক্তব্য রাখতে শুরু করেছে। এই মুহূর্তে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির একাধিক নেতা ভারতীয় আধিপত্য সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন, সেগুলো আগামী নির্বাচনী প্রচারণার স্টেজ রিহার্সেল বলে রাজনৈতিক পন্ডিতরা মনে করছেন।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি গণচীনের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেই চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ চীনের নিকট থেকে ট্যাংক, ফ্রিগেট, জঙ্গি বিমান এবং সবশেষে দুটি সাবমেরিনসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করেছে।
এখন শাসক দলের একটি মহল মনে করেন যে, সমরাস্ত্র সংগ্রহের জন্য একটি মাত্র সূত্রের উপর নির্ভরশীলতা আমাদের হ্রাস করা উচিত। চীনের ওপর বাংলাদেশের সমরাস্ত্রের নির্ভরশীলতা কমানোর জন্যই ভারত এবার বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। তবে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে ৫০ কোটি ডলার অপ্রতুল, বিশেষ করে গণচীন যেখানে ২৫ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ২ লাখ কোটি টাকার সাহায্যের প্রস্তাব করেছে। ঢাকার ইংরেজি ডেইলি স্টার গত বুধবার ১৪ মার্চ প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি পোষ্টে মন্তব্য করেছে যে, চীনের ওপর সমরাস্ত্রের জন্য বাংলাদেশের একক নির্ভরতাকে কাউন্টার ব্যালান্স করার জন্যই ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। গণচীন থেকে বাংলাদেশ দুটি সাবমেরিন ক্রয় করার পর ভারত খুব অস¦স্তি বোধ করছে। ভারতীয় পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে যেখানে ইতিমধ্যেই ভারত এবং মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমাবিরোধ নিষ্পত্তি করেছে, সেখানে সমুদ্রসীমা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের সাবমেরিনের প্রয়োজন কি সেটি তারা বুঝতে অক্ষম। গত অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট ঢাকা আসার পর চীন বাংলা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যখন কৌশলগত সহযোগিতায় উন্নীত হয় তখনই ভারতের ভ্রু কুঞ্চিত হয় এবং তার পরেই ভারত চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ব্যালান্স করার জন্য তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী (বর্তমানে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী) মনোহর পারিকর কে ঢাকায় পাঠায়। মনোহর পারিকর প্রতিরক্ষা চুক্তির একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আসেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিষয়টিকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর গত ২৩ ফেব্রুয়ারী ঢাকা আসেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ১ ঘণ্টা বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর সম্পর্কে একটি ইংরেজি পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়েছে যে, এ সফরে তিস্তার পানি বণ্টন সম্পর্কে কোন চুক্তি হচ্ছে না। কিন্তু ভারত কর্তৃক চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরকালে কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে কিনা, সে সম্পর্কে ভারত ও বাংলাদেশের কোন সরকারই স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। তবে বাংলাদেশে বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিএনপির রুহুল কবীর রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে সামরিক চুক্তি হলে সেটি আত্মঘাতী এবং জাতীয় স্বাধীনতাবিরোধী হবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা যদি ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয় এবং ভারতের ইচ্ছা অনুযায়ী যদি প্রতিরক্ষা নীতি গ্রহণ করতে হয়, তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বলে কিছু থাকবে না বলে তিনি মনে করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা আগেই বলেছি, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক চুক্তি হলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে কী না তা নিয়ে দেশের মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিরক্ষা চুক্তি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এর সাথে দেশের নিরাপত্তা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব জড়িত। এই চুক্তির বিষয়ে আজ দেশের মানুষ চরমভাবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছে। রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে এ দেশের জনগণ কোনোদিন মেনে নেবে না, বরং তা প্রতিরোধে সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে আসবে বলে সরকারের প্রতি তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে ভারতের প্রধান চাহিদা প্রতিরক্ষা চুক্তি। এছাড়াও আরো দুই ডজন চুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। তাই জনগণকে অবহিত না করে কোনো গোপন চুক্তি কেউ মেনে নেবে না, বাস্তবায়নও হতে দেবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।